দধীচি উক্ত মধুবিদ্যা।বৃহদারণ্যক উপনিষদ্‌ দ্বিতীয় অধ্যায় পঞ্চম ব্রাহ্মণ। (Brihadaranyaka Upanishad, Second Chapter,Fifth Brahmin in Bengali language.Madhu Vidya as told by sage Dadhichi in Bengali language.

debkumar_lahiri 311 views 67 slides Jan 23, 2025
Slide 1
Slide 1 of 67
Slide 1
1
Slide 2
2
Slide 3
3
Slide 4
4
Slide 5
5
Slide 6
6
Slide 7
7
Slide 8
8
Slide 9
9
Slide 10
10
Slide 11
11
Slide 12
12
Slide 13
13
Slide 14
14
Slide 15
15
Slide 16
16
Slide 17
17
Slide 18
18
Slide 19
19
Slide 20
20
Slide 21
21
Slide 22
22
Slide 23
23
Slide 24
24
Slide 25
25
Slide 26
26
Slide 27
27
Slide 28
28
Slide 29
29
Slide 30
30
Slide 31
31
Slide 32
32
Slide 33
33
Slide 34
34
Slide 35
35
Slide 36
36
Slide 37
37
Slide 38
38
Slide 39
39
Slide 40
40
Slide 41
41
Slide 42
42
Slide 43
43
Slide 44
44
Slide 45
45
Slide 46
46
Slide 47
47
Slide 48
48
Slide 49
49
Slide 50
50
Slide 51
51
Slide 52
52
Slide 53
53
Slide 54
54
Slide 55
55
Slide 56
56
Slide 57
57
Slide 58
58
Slide 59
59
Slide 60
60
Slide 61
61
Slide 62
62
Slide 63
63
Slide 64
64
Slide 65
65
Slide 66
66
Slide 67
67

About This Presentation

এই আলেখ্যটিতে, মহর্ষি দধীচি অশ্বিনীকুমারদের যে মধুবিদ্যা উপদেশ দিয়েছিলেন, তার বর্ণনা করা হয়েছে। এই বর্ণনায়, বিশ্...


Slide Content

উপনিষদ (Upanishad in Bengali)
দধীচি উক্ত মধুবিদ্যা। বৃহদারণ্যক উপনিষদ্‌ দ্বিতীয় অধ্যায় পঞ্চম
ব্রাহ্মণ। (Brihadaranyaka Upanishad Second Chapter Fifth
Brahmin in Bengali language. Madhuvidyaa as told by the
sage Dadhiichi in Bengali language.)
January 17, 2025
দধীচি উক্ত মধুবিদ্যা। বৃহদারণ্যক উপনিষদ্‌ দ্বিতীয় অধ্যায় পঞ্চম ব্রাহ্মণ।
ভূমিকা।
এই আলেখ্যটিতে, মহর্ষি দধীচি অশ্বিনীকুমারদের যে মধুবিদ্যা উপদেশ দিয়েছিলেন, তার
বর্ণনা করা হয়েছে। এই বর্ণনায়, বিশ্ব স্রষ্টা আত্মার যে মধুময়তা, এবং যে ভাবে স্রষ্টা এবং সৃষ্টি
মধুময় সম্বন্ধে আবদ্ধ, তা বিশেষ ভাবে উক্ত হয়েছে। আত্মাই মধু, প্রাণই দধি, এবং এই
মধুময়তার ভোক্তা ইন্দ্ররূপী আত্মা। এই উপদেশটি বৃহদারণ্যক উপনিষদের দ্বিতীয় অধ্যায়ের
পঞ্চম ব্রাহ্মণের অন্তর্গত।
উপনিষদের মূল অংশ, শব্দার্থ, নিরুক্তি এবং যে আত্মবিজ্ঞান এই উপদেশে ব্যক্ত হয়েছে, তা
যথাসাধ্য উল্লেখ করেছি। উপনিষদের অর্থ উপনিষদের মধ্যেই বলা হয়েছে, এবং সেই জন্য
অন্যান্য উপনিষদের মন্ত্র এবং বেদের মন্ত্র প্রসঙ্গতঃ, অর্থ-সহ, উল্লেখ করেছি।
পূজ্যপাদ গুরুদেব মহর্ষি বিজয়কৃষ্ণ চট্টোপাধ্যায় (১৮৭৫-১৯৪৫) এবং তাঁর প্রধান শিষ্য মহর্ষি
ত্রিদিবনাথ বন্দ্যোপাধ্যায়ের (১৯২৩-১৯৯৪) উপদেশ অবলম্বন করে এইটি লিখেছি।
([email protected])
 ব্রহ্মখণ্ড (সারাংশ)। 
মধু শব্দের একটি অর্থ যা 'ম' বা  মৃত্যুর দ্বারা ধূমাবৃত; অর্থাৎ যা প্রিয় অথচ হারিয়ে যায় বা
শেষ হয়ে যায়, তার নাম 'মধু'।
আবার মধু অর্থে ম+ধূত; 'ম' অর্থে মৃত্যু, এবং 'ধূত' অর্থে ধৌত। মৃত্যু যখন বিধৌত হয়,
ধুয়ে যায়, তখন যাঁকে দেখা যায়, তিনি সেই অবিনশ্বর আত্মা, যাঁকে আত্মবোধ বা নিজবোধ
বা 'নিজ' বলা হয়। এই আত্মাই মধু। যিনি আত্মা, আমাদের আত্মবোধ, তাঁকে আশ্রয় করে
সকল বোধ, সকল অনুভূতি আমাদের মধ্যে প্রকাশ পাচ্ছে। আমরা আমাদের বোধ বা
1/23/25, 11:13 PM দধীচি উক্ত মধুবিদ্যা। বৃহদারণ্যক উপনিষদ্‌ দ্বিতীয় অধ্যায় পঞ্চম ব্রাহ্মণ। (Brihadaranyaka Upanishad Second Chapter Fifth Brahmin in Bengali languag…
https://upanishadinbengali.blogspot.com/2025/01/brihadaranyaka-upanishad-second-chapter.html 1/67

অনুভূতির জগতে বেঁচে আছি। যখনই শব্দ,স্পর্শ ইত্যাদি কোন অনুভূতি প্রকাশ পায়, তখন
তার সাথে 'অহং' বা 'আমি' এই বোধটিও প্রকাশ পায়। এই 'আমি' (অহং), প্রতি বোধে বা
অনুভূতিতে সংলিপ্ত হয়ে থাকে, এবং প্রতিবোধের সাথে পরিবর্ত্তিত হয়; আর ঐ 'অহং'
বোধের মূলে নিজবোধ বা আত্মবোধ, স্থির, পরিবর্ত্তন-হীন হয়ে সর্ব্বদা থাকেন। নিজ বা
আত্মবোধ না থাকলে, কোন বোধ থাকে না। যিনি আমার মধ্যে 'নিজ', তিনি সবার মধ্যে
'নিজ'; ইনি বিশ্বাত্মা, শিব। 
যিনি জ্ঞান বা বোধস্বরূপ, যাঁর সাধারণ নাম চেতনা,  তিনি একাধারে স্থির, অপরিণামী, বা
'জ্ঞ' বা নিজবোধ স্বরূপ, এবং 'অন' বা প্রাণ স্বরূপ। 'অন' অর্থে যিনি 'অন্য' বা দ্বিতীয় হন।
নিজেকে দ্বিতীয় বলে জেনে বা বোধ করে ইনি দ্বিতীয় বা বহু হন। আবার অন্য বা দ্বিতীয়
হয়েও ইনি যেমন তেমনই থাকেন; অর্থাৎ সর্ব্ব জ্ঞান বা বোধক্রিয়ার অন্তরে ইনি অপরিণামী
'জ্ঞ' এবং সকল কিছুর জ্ঞাতা। এই অবিনশ্বর আত্মা বা 'জ্ঞ' হলেন মৃত্যু বিধৌত মধু; একথা
আগে বলা হয়েছে। আর, অন বা প্রাণই 'দধি', যাঁর দ্বারা সবাই বিধৃত, নিয়ন্ত্রিত। দধি শব্দটি
দধ্‌ ধাতু থেকে হয়েছে। দধ্‌ অর্থে ধারণ  করা; ই অর্থে গতি। যিনি সকলকে ধারণ করে
চলেছেন বা ক্রমণ করছেন, তিনি দধি এবং তাঁকে দধিক্রা বলে বেদ বর্ণনা করেছেন। জ্ঞ স্বরূপ
আত্মার ক্রিয়াত্মক রূপই অন বা প্রাণ। এই উপনিষদে বলা হয়েছে যে দধীচি ঋষি এই
মধুবিদ্যা অশ্বিনীকুমারদের অশ্বশির ধারণ করে দিয়েছিলেন। অশ্ব অর্থে 'প্রাণ' বা 'মহাপ্রাণ',
যিনি আমাদের অশ্বের ন্যায় মৃত্যুর পরপারে বহন করে নিয়ে চলেছেন। এই অশ্বের গতিই,
শ্বাস-প্রশ্বাসের আকারে, জীবনের স্পন্দন হয়ে আমাদের মধ্যে ক্রিয়াশীল। এই অশ্ব বা প্রাণই
কাল বা  শ্ব, যাঁর দ্বারা সৃষ্টি, স্থিতি, লয় সম্পন্ন হচ্ছে, এবং যাঁর নিয়ন্ত্রণে আমরা জীবন-
মৃত্যুর আবর্ত্তন পার হয়ে, অভ্যুদয়ের পথে, মৃত্যুর পরপারে চলেছি। উপনিষদ্‌, এই মহাপ্রাণকে
মুখ্যপ্রাণ বলে বর্ণনা করেছেন। আত্মার ঈশিত্ব বা ক্রিয়াময় স্বরূপের নাম প্রাণ।
এক এবং অদ্বিতীয়, পরম আত্মস্বরূপ, যাঁকে পূর্ব্বে 'জ্ঞ' বলে উল্লেখ করা হয়েছে, তিনি প্রাণ
হয়ে নিজেকে বহু করেছেন। আর নিজের সেই বহু বহু স্বরূপকে, নিজেরই প্রকাশ বলে
জানছেন। এই হল মধুময়তা: নিজেকে দ্বিতীয় করে তাকে আত্মজ বলে বা আত্মরূপ বলে
দর্শন করা; এর নাম 'মধু' বা 'মৎ বৈ উ', অর্থাৎ 'অবশ্যই আমার থেকে'।  
যারা এই পরমাত্মস্বরূপ কে দেখেছেন, তাঁদের কাছে ইনিও মধুস্বরূপ, কেননা, এঁকে দেখা মানে
নিজেকেই দেখা, প্রাণকে দেখা।
তাই এই উপনিষদে বলা হয়েছে যে, এই আত্মা সর্ব্বভূতের মধুস্বরূপ এবং সর্ব্বভূত
এই আত্মার মধুস্বরূপ।
এই আত্মসম্বন্ধের জন্য, অর্থাৎ, যেহেতু সবাই এই আত্মারই রূপ, এবং সবার অন্তরে এই
আত্মাই বিদ্যমান,তাই এই উপনিষদে সকলে যে সকলের মধুস্বরূপ তা বলা হয়েছে। 
নমস্তে বহুরূপায় বিষ্ণবে পরমাত্মনে: বহুরূপে প্রকাশিত পরমাত্মা বিষ্ণুকে প্রণাম। পরমাত্মা বা
যিনি জ্ঞ, তিনি নিজেকে বহু করতে গিয়ে যা হন, তার নাম প্রাণ। এই প্রাণই আমাদেরকে
নিজেতে ধারণ করে সংক্রমণ করছেন। সেই সংক্রমণকে আমরা কাল বলে অনুভব করি, এবং
1/23/25, 11:13 PM দধীচি উক্ত মধুবিদ্যা। বৃহদারণ্যক উপনিষদ্‌ দ্বিতীয় অধ্যায় পঞ্চম ব্রাহ্মণ। (Brihadaranyaka Upanishad Second Chapter Fifth Brahmin in Bengali languag…
https://upanishadinbengali.blogspot.com/2025/01/brihadaranyaka-upanishad-second-chapter.html 2/67

এই সংক্রমণের দ্বারা আমরা জন্ম-মরণের মধ্য দিয়ে মুক্তির পথে চলেছি। এই ক্রমণশীল 
প্রাণের দৈবিক নাম বিষ্ণু। এই প্রাণ আমাদের ধারণ করে (দধতি) ক্রমণ (ই) করছেন, তাই
ইনি দধিক্রা, এ কথা আগে বলা হয়েছে। এই বিষ্ণুর 'পদ' (পা) এবং চক্ষুর কথা ঋক্‌ বেদে
উক্ত হয়েছে। পদ বা পা মানেই গতি বা সংক্রমণ; আর এই গতি থেকে সব প্রকাশ পায়, যার
নাম রূপ। সব রূপ যেখানে প্রতিষ্ঠিত, তার নাম চোখ বা চক্ষু। চক্ষুই প্রতিষ্ঠা বা পা; পদদ্বয়ের
দ্বারাই আমরা এই ধরিত্রীতে প্রতিষ্ঠিত। চক্ষুই সত্য, কেননা, আমরা যা দেখি তা বিশ্বাস করি।
আমাদের সত্যবোধ চক্ষুতে প্রতিষ্ঠিত। (বৃহদারণ্যক উপনিষদ মন্ত্র ২।৩।৪,৩।৯।১২ মন্ত্র
দ্রষ্টব্য।)। এই রূপময় বিশ্ব সত্য; সত্যের সত্য প্রকাশ। (এই জন্য চক্ষু হল জ্ঞানেন্দ্রিয় এবং পা
হল তার কর্ম্মেন্দ্রিয়।)
ঋক্‌ মন্ত্রটি হল :তদ্বিষ্ণোঃ পরমং পদং সদা পশ্যন্তি সূরয়ঃ দিবীব চক্ষুরাততম্‌। (ঋক্‌বেদ ১।
২২।২০)।
মন্ত্রের অর্থ : সেই বিষ্ণুর পরমপদ সূরগণ (দেবগণ) সর্ব্বদা দর্শন করেন, (যে পদ) দ্যুলোকের
ন্যায় সর্ব্বত্র বিস্তৃত চক্ষু। (ঋক্‌বেদ ১।২২।২০)।
প্রাণ মানেই দর্শনময়, যিনি দেখছেন। আমাদের যা চক্ষু, আমাদের বহিরাকাশে তাই সূর্য বা
আদিত্য, যাঁর থেকে ঐ বিষ্ণুর তেজ আমাদের জন্য বিকীর্ণ হচ্ছে, আমাদের পৃথিবী রূপময়
হয়েছে। এই উপনিষদে রূপের কথা বলা হয়েছে; সকল রূপকে সৃষ্টি করে প্রাণময় আত্মা সেই
রূপ সকলকে দর্শন করছেন এবং ভোগ করছেন, এবং সেই দ্রষ্টাকে ইন্দ্র বলে উল্লেখ করা
হয়েছে। ইন্দ্র অর্থে 'ইদং দ্রষ্টা' বা যা কিছু 'ইদং' (ইহা) পদবাচ্য, তার দ্রষ্টা। উল্লেখযোগ্য যে,
ঋক্‌বেদে বিষ্ণুকে ইন্দ্রের সাথে যুক্ত এবং ইন্দ্রের সখা বলা হয়েছে: "ইন্দ্রস্য যুজ্য সখা"।
 (ঋক্‌বেদ ১।২২।১৯)। সখা অর্থে যারা সমান আখ্যার অধিকারী। আবার সখা অর্থে যারা
সমান 'খ' বা হৃদয়াকাশে বাস করে।
ইন্দ্র, এবং রূপ ও প্রতিরূপের কথা এই উপনিষদে উক্ত হয়েছে। সর্ব্বদ্রষ্টা আত্মা যিনি ইন্দ্র (ইদং
দ্রষ্টা), যাঁর দৃষ্টি থেকে রূপময় বিশ্ব জাত হয়েছে, যিনি সর্ব্বরূপ হয়েছেন, তিনি এই রূপ
সকলকে দেখছেন এবং ভোগ করছেন। আবার প্রতি রূপের, প্রতি জীবের অন্তরস্থ আত্মা হয়ে,
সেই সত্ত্বার মধ্যে থেকেও তিনি নিজে যে বিশ্বরূপ সেজেছেন, সেই রূপময় বিশ্বকে দর্শন
করছেন। এই যে জীব হয়ে দর্শন করছেন, তা প্রতিরূপ দর্শন। বাইরের বিশ্ব তাঁর দৃষ্টি বা চক্ষু
থেকে রূপময় হয়ে প্রকাশ পেয়েছে, আর তদনুযায়ী, আমরা সেই রূপ বা প্রকাশগুলি অনুভব
করছি। আমাদের এই অনুভূতিকে 'প্রতিরূপ' বলা হয়েছে। বাইরের একটি গাছ, আত্মারই
একটি রূপ; আর সেই রূপানুসারে আমাতে যে গাছের অনুভূতি ফুটছে, সেইটি প্রতিরূপ।
ঈশোপনিষদে রূপ কে সম্ভূতি, এবং প্রতিরূপকে অনুভূতি বলা হয়েছে। রূপ মানে শুধু মাত্র
দর্শনীয় কিছু নয়, চেতনার যে কোন প্রকাশই রূপ। 
বৃহদারণ্যক উপনিষদ্‌ দ্বিতীয় অধ্যায় পঞ্চম ব্রাহ্মণ।মন্ত্র এবং অর্থ।
১ম মন্ত্র।
1/23/25, 11:13 PM দধীচি উক্ত মধুবিদ্যা। বৃহদারণ্যক উপনিষদ্‌ দ্বিতীয় অধ্যায় পঞ্চম ব্রাহ্মণ। (Brihadaranyaka Upanishad Second Chapter Fifth Brahmin in Bengali languag…
https://upanishadinbengali.blogspot.com/2025/01/brihadaranyaka-upanishad-second-chapter.html 3/67

ইয়ং পৃথিবী সর্ব্বেষাং ভূতানাং মধ্বস্যৈ পৃথিব্যৈ সর্ব্বাণি ভূতানি মধু যশ্চায়মস্যাং পৃথিব্যাং
তেজোময়ো'মৃতময়ঃ পুরুষঃ যশ্চায়মধ্যাত্মং শারীরস্তেজোময়ো'মৃতময়ঃ পুরুষঃ অয়মেব স
যো'য়মাত্মা ইদমৃতম্‌ ইদং ব্রহ্ম ইদং সর্ব্বম্‌।।১।।
১।১।অন্বয়।
ইয়ং (এই) পৃথিবী (পৃথিবী) সর্ব্বেষাং (সকল) ভূতানাং (ভূত সকলের) মধু (মধু) অস্যৈ
(অস্যাঃ--এই) পৃথিব্যৈ (পৃথিব্যাঃ--পৃথিবীর) সর্ব্বাণি (সকল) ভূতানি (ভূত) মধু (মধু) যঃ চ
অয়ম্‌ (যে এই) অস্যাং (এই) পৃথিব্যাং (পৃথিবীতে) তেজোময়ঃ (তেজোময়) অমৃতময়ঃ
(অমৃতময়) পুরুষঃ (পুরুষ), যঃ চ অয়ম্‌ (যে এই) অধ্যাত্মং (অধ্যাত্মে, অন্তরে) শারীরঃ
(শরীরে প্রতিষ্ঠিত) তেজোময়ঃ (তেজোময়) অমৃতময়ঃ (অমৃতময়) পুরুষঃ (পুরুষ),অয়ম্‌ এব
(এই ই) স (সে) যঃ (যে) অয়ম্‌ (এই) আত্মা (আত্মা); ইদম্‌ (ইহা) অমৃতম্‌ (অমৃত), ইদং
(ইহা) ব্রহ্ম (ব্রহ্ম), ইদং (ইহা) সর্ব্বম্‌ (সব)। 
১।২।অর্থ।
এই পৃথিবী ভূত সকলের মধু। সর্ব্ব ভূত এই পৃথিবীর মধু। যে এই পৃথিবীতে তেজোময়
অমৃতময় পুরুষ, যে এই অধ্যাত্মে (অন্তরে) শরীরে প্রতিষ্ঠিত  তেজোময় অমৃতময় পুরুষ, এই
ই সে, যে এই আত্মা; ইহা অমৃত, ইহা ব্রহ্ম, ইহা সব।
১।৩।সংক্ষিপ্ত ব্যাখ্যা এবং নিরুক্তি। 
পৃথক্‌ বা স্বতন্ত্র অস্তিত্ব নিয়ে থাকার যে জায়গা তার নাম পৃথিবী। বাইরে যা পৃথিবী, প্রতি
জীবে বা সত্তাতে তাই তার শরীর। উপনিষদে পৃথিবী আর শরীর সমার্থক। এই পৃথিবীর দ্বারাই
আমরা দ্যুলোকের থেকে পৃথক্‌ বা বিচ্ছিন্ন হয়ে, মর্ত্তের জীব বা মরণশীল হয়েছি। এই পৃথিবীর
মধ্যে যে তেজ, অগ্নি বা প্রাণ রয়েছেন, তাঁর নাম অপান।  সেই অপানের দ্বারাই আমরা
মাতৃগর্ভ থেকে পৃথক হয়ে পৃথিবীতে ভূমিষ্ট হই; আবার এই অপানের দ্বারাই আমরা প্রাণময়
হয়ে শরীরে এবং পৃথিবীতে প্রতিষ্ঠিত। (প্রশ্নোপনিষৎ মন্ত্র ৩।৮ দ্রষ্টব্য।)।
এই যে মহাপ্রাণ বা চেতনা, যিনি আমাদের ধরিত্রী বা পৃথিবী হয়ে ধারণ করেছেন, তা তিনি
হৃদয়ের দ্বারাই করেছেন। এই যে মাধ্যাকর্ষণ, তা এই হৃদয়েরই আকর্ষণ। ইনি মধুময় হয়ে
আমাদের ধারণ করেছেন।   
আমরা যেমন এঁর মধুস্বরূপ, সেই রকম ইনি আমাদের মধু স্বরূপ। ইনি আমাদের প্রাণময় করে
পোষণ করছেন, শরীরী করেছেন, সদা আমাদের অস্তিত্ব বোধকে জাগ্রত করে রেখেছেন। এই
প্রাণই অন বা অন্ন, যার দ্বারা আমরা পুষ্ট হচ্ছি, যে অন্নই আমাদের এই পার্থিব বায়ু, পার্থিব
জল, পার্থিব অগ্নি, পার্থিব আকাশ, পার্থিব বনানী ইত্যাদি।  
ভূত শব্দের দ্বারা আমরা যারা পৃথিবীর অধিকারে বসবাস করছি, অর্থাৎ যা কিছু মর্ত্ত বা
পার্থিব, তাদেরকে বোঝায়। ভূত মানে অতীত; যা হয়ে গেছে। এই যে আমরা মূর্ত্ত হয়েছি, যার
জন্য আমরা শরীরী, এই মূর্ত্তি বা শরীরের বাইরে আমরা যেতে পারি না। এর নাম 'হয়ে
1/23/25, 11:13 PM দধীচি উক্ত মধুবিদ্যা। বৃহদারণ্যক উপনিষদ্‌ দ্বিতীয় অধ্যায় পঞ্চম ব্রাহ্মণ। (Brihadaranyaka Upanishad Second Chapter Fifth Brahmin in Bengali languag…
https://upanishadinbengali.blogspot.com/2025/01/brihadaranyaka-upanishad-second-chapter.html 4/67

যাওয়া'। অপানের দ্বারা আমরা শরীরী হয়ে পৃথিবীতে প্রতিষ্ঠিত। এই জন্য ছান্দোগ্য উপনিষদে
বলা হয়েছে : এষাং ভূতানাং পৃথিবী রসঃ----এই ভূত সমূহের রস হল পৃথিবী।(ছান্দোগ্য
উপনিষদ্‌ ১।১।২ মন্ত্র দ্রষ্টব্য।) 
শরীর শব্দটি শর শব্দ থেকে হয়েছে। দুধের উপরিভাগে যেমন শর হয়, সেই রকমই সৃষ্টিতে
প্রবহমান প্রাণের গতি যেখানে স্তিমিত হয়, সেখানে এই শরবৎ অংশ সৃষ্টি হয়, আর সেই শরই
কঠিন হয়ে পৃথিবী হয়েছে। এ কথা বৃহদারণ্যক উপনিষদের প্রথম খণ্ডে বলা হয়েছে।
 বৃহদারণ্যক উপনিষদের এই অংশটির সংক্ষিপ্ত ব্যাখ্যা নীচে ২।৩ অংশে উল্লেখ করা হয়েছে।
যেমন নদীর উপরিভাগ স্থির বলে প্রতীত হলেও, নদী অন্তরে স্রোতস্বিনী, সেই রকম এই শরীর
স্থির বলে দৃষ্ট হলেও,এর অন্তরে প্রাণের প্রবাহ, রসের প্রবাহ চলেছে। আয়ু বা প্রাণ বইছেন,
আর আমরা এই আয়ু প্রবাহের দ্বারা বাহিত হচ্ছি। এর নাম রথ : 'র' বা 'রী' বা গতির 'থ'
বা স্থির রূপ।  কঠোপনিষদে (মন্ত্র ১।৩।৩) বলা হয়েছে, 'আত্মানম্‌ রথীনম্‌ বিদ্ধি শরীরম্‌
রথমেব তু' : আত্মাকে রথী এবং শরীরকে রথ বলে বিদিত হও।
(নীচে ৩।৩ অংশের শেষ অনুচ্ছেদে শরীর এবং বসুদেবগণের যে বর্ণনা করা হয়েছে,তা
দ্রষ্টব্য।)  
১।৩।১। তেজোময়ঃ (তেজোময়) অমৃতময়ঃ (অমৃতময়) পুরুষঃ (পুরুষ)
তেজোময়।
আত্মা স্বয়ংপ্রকাশ। ইনি নিজেই নিজেকে নিজের দ্বারা প্রকাশ করেন, আর সেই প্রকাশে ইনি
নিজে এবং সমস্ত বিশ্ব প্রকাশিত। তাই ইনি স্বয়ং শক্তি, আর এই শক্তির বৈদিক নাম 'বাক্‌'।
ইনি যখন প্রকাশের দিকে যান, বা ক্রিয়াশীল হন, তখন এঁকে প্রাণ বলা হয়। এই প্রাণই
'কাল' আকারে উপলব্ধ হচ্ছেন। যেটি প্রকাশ পাবে বা সৃষ্ট হবে, সেইটি এঁতে বীজের আকারে
ধরা থাকে; এই সামর্থ্যের নাম 'বীর্য'। বীজের আকারে থাকা মানে যেটি প্রকাশ পাবে, তার
জন্ম থেকে অন্ত অব্দি যা কিছু বা কালের ক্রমগুলি, একটি ক্ষণে বা অক্রমে বিধৃত। 
এই স্বয়ংপ্রকাশ চেতনা বা আত্মা, যখন নিজেকে নিজে জানেন, তখন  প্রথমে যা হয় তা
তেজ। তাই ইনি তেজোময়। প্রত্যেকে তার মূলে এঁকে 'তেজোময়' বলেই দর্শন করে। তেজ মানে
'তৎ এজতি' : সে কম্পিত হচ্ছে; এখনো নিজের বাইরে যায় নি, নিজেকে দ্বিতীয় করে
বিচ্ছিন্ন করেনি, তাই 'কম্পন'। এই জন্য বেদ এঁকে কাম্পিল্যবাসিনী বলে বর্ণনা করেছেন। ইনি
বাক্‌ বা বাগাম্ভৃণী (বাক্‌-অম্ভৃণী)। অম্‌ বা তেজকে ভরণ করছেন, গর্ভে ধারণ করেছেন,
তাই বাগাম্ভৃণী। এই ভাবে সমস্ত বিশ্বকে ইনি গর্ভে ধারণ করেছেন। তেজোময় হলেন মানেই
প্রাণময় হলেন। আত্মার ক্রিয়াময় স্বরূপই প্রাণ। যা তেজে ছিল বীজাকারে, অক্রমে, তাই হল
প্রাণময়; প্রাণময় মানে সেখানে সৃষ্টি, স্থিতি, লয়ের আকারে, কালক্রম প্রকাশ পেল।এই
কালক্রম, বা সৃষ্টি, স্থিতি, লয়ের পুনঃ পুনঃ আবর্ত্তের দ্বারা আমাদের অভ্যুদয় হচ্ছে মুক্তির
পথে। এর নাম আত্মার ঈশিত্ব এবং এই তিনটি ক্রমের উৎস আত্মাই, যিনি ত্রিবিক্রম বিষ্ণু,
সংক্রমণকারী মহাপ্রাণ। 
1/23/25, 11:13 PM দধীচি উক্ত মধুবিদ্যা। বৃহদারণ্যক উপনিষদ্‌ দ্বিতীয় অধ্যায় পঞ্চম ব্রাহ্মণ। (Brihadaranyaka Upanishad Second Chapter Fifth Brahmin in Bengali languag…
https://upanishadinbengali.blogspot.com/2025/01/brihadaranyaka-upanishad-second-chapter.html 5/67

অমৃতময়।
এই চেতনা মর্ত্ত বা মূর্ত্ত হয়েও ইনি অমর্ত্ত, অমূর্ত্ত। যা মূর্ত্ত, যা শরীরী, তা সীমিত। সে সেই
শরীর বা তার সেই আয়তনের বাইরে নিজেকে উপলব্ধি করতে পারে না। এই সীমাবদ্ধতা, শুধু
আয়তনগত নয়; আমাদের দর্শন, শ্রবণ, আস্বাদন ইত্যাদি সব কিছু সীমিত, আংশিক।
আমাদের কাল জ্ঞানও আংশিক; মাত্র বর্ত্তমানতায় বেঁচে আছি। যা অতীত তার স্মৃতি ক্রমশঃ
ম্লান হয়ে যায়, আর সেই অতীতকে বর্ত্তমানতায় আমরা ফিরিয়েও আনতে পারিনা। যা
ভবিষ্যৎ তার বিষয়েও ঈষৎ বা অল্প ধারণা থাকে। সুস্পষ্ট ভাবে পর মুহূর্ত্তে যে কি ঘটবে তা
জানতে পারি না। কোথা থেকে আমরা পৃথিবীতে এসেছি, তা জানি না এবং কোথায় চলেছি,
তাও জানিনা। আমরা আবশ্যকতার দ্বারা পরিচালিত, স্বতস্ফূর্ত্ত আনন্দের দ্বারা নয়। ক্ষয় বা
মরণশীলতাই আমাদের বৈশিষ্ট্য। আর এই সবের বিপরীত অবস্থা যেখানে, সেখানকার নাম
অমৃতলোক।
ছান্দোগ্য এবং বৃহদারণ্যক উপনিষদে বলা হয়েছে, মহাপ্রাণ বা মুখ্যপ্রাণ, দর্শন, শ্রবণ, মনন
ইত্যাদি শক্তিকে মৃত্যুর পরপারে নিয়ে গিয়েছিলেন। আমাদের মধ্যে এরা মৃত্যুর দ্বারা আক্রান্ত,
তাই ক্ষয়িষ্ণু। (বৃহদারণ্যক উপনিষদ্‌ প্রথম অধ্যায়, তৃতীয় ব্রাহ্মণ এবং ছান্দোগ্য উপনিষদ্‌
প্রথম অধ্যায়, দ্বিতীয় খণ্ড দ্রষ্টব্য।) দ্যুলোকে বা দেব ভূমিতে 'অন্ত' বা 'সীমা' বোধ প্রাধান্য
করেনা। অন্ত নয়, তাই অনন্ত। অন্ত নেই, তাই অনন্ত, অমৃত। এই জন্য দেবতারা
অমৃতলোকের অন্তর্গত। এই জন্য আমরা যখন এই অমৃতকে উপলব্ধি করতে থাকি, তখন যা
ছিল অশ্রুত তা শ্রুত হয়, যা ছিল অদৃষ্ট তা দৃষ্ট হয়, ইত্যাদি।যেহেতু অন্ত নেই, সেই হেতু
অভাব নেই। আমরা অভাব বা আবশ্যকতার দ্বারা তাড়িত। নিজেতে সব পেয়ে যে 'আপ্তি',
তার আনন্দে নিজের থেকেই শব্দ, স্পর্শ, রূপ, রস, গন্ধকে প্রকাশ করে স্বাধীন ভাবে বিচরণ
করাই অমৃতলোকবাসীদের ধর্ম্ম।
স্বয়ংপ্রকাশ আত্মা, যিনি জ্ঞ স্বরূপ, যাঁতে দ্বিতীয় বলে কিছু নেই, তিনি যখন নিজেকে প্রকাশ
করেন, তখন, আত্ম-অনাত্ম, অন্তর-বহিঃ, অমৃত-মর্ত্ত, এই রকম দুই বিপরীত মেরু প্রকাশ
পায়। তাঁর যে অমৃতময়তা, তাতে সকল কিছু অবাধ, অনন্ত, অবিনাশী। সর্ব কাল, সর্ব দিক্‌,
সর্ব্ব দেশ সেখানে অক্রমে রয়েছে; সেখানে অনন্ত দর্শন, অনন্ত শ্রবণ, অনন্ত
স্পর্শ, অনন্ত আস্বাদন, অনন্ত আঘ্রাণ। সেখানে সব কিছু আত্মময়। সেখানে ইনি নিজেকে
দ্বিতীয় করে নিজের থেকে প্রকাশ করেন এবং করেও যেমন তেমনি থাকেন। তাই ইনি অনন্ত।
এঁর অনন্তে, অনন্তে প্রকাশ কে পৌনপৌনিক আনন্ত্য বলে। তার একটি উদাহরণ এই ভাবে
দেওয়া যায় : একটি গাছ, আর তাতে আছে ফল; সেই ফলে আছে বীজ; প্রতি বীজে আছে
একটি গাছ, আর সেই গাছের প্রতি ফলে আছে বীজ, আর প্রতি বীজে আছে একটি
গাছ......এই ভাবে তেজ প্রকাশ পাচ্ছে অনন্তে।
১।৩।২। পুরুষ।
রূপ শব্দের অক্ষরগুলি কে বিপরীত ক্রমে লিখলে হবে 'পুর'। তবে, রূপ শব্দে ঊ (দীর্ঘ উকার)
আছে, কেননা চিৎস্বরূপ আত্মা, রূপের দ্বারাই দীর্ঘ বা বর্দ্ধিত হন। 'ষ' অর্থে খণ্ডন। যিনি
1/23/25, 11:13 PM দধীচি উক্ত মধুবিদ্যা। বৃহদারণ্যক উপনিষদ্‌ দ্বিতীয় অধ্যায় পঞ্চম ব্রাহ্মণ। (Brihadaranyaka Upanishad Second Chapter Fifth Brahmin in Bengali languag…
https://upanishadinbengali.blogspot.com/2025/01/brihadaranyaka-upanishad-second-chapter.html 6/67

নিজেকে খণ্ডন করে, বহু রূপময় হয়েছেন, এবং সেই রূপের অন্তরে স্থিত, সেই প্রতি রূপই তাঁর
পুর; এই জন্য ইনি পুরুষ নামে অভিহিত।
পুরু শব্দের অর্থ 'বহু'। ইনি নিজেকে খণ্ডিত করে বা দ্বিতীয় করে বহু হন, তাই ইনি 'পুরুষ'।
পুরুষ= পুরু (বহু) +ষ (খণ্ডন)।
১।৩।৩।পুরুষ,পাপ এবং ওষধি। 
বৃহদারণ্যক উপনিষদ্‌ মন্ত্র ১।৪।১ এ উক্ত হয়েছে যে, এই অমৃত আত্মা অনুবীক্ষ (অনু>অণু;
বীক্ষ= দেখা, জানা) করেছিলেন, অর্থাৎ নিজেকে অণুতে  অণুতে জেনেছিলেন, বা নিজেকে
চূর্ণ চূর্ণ করে, বহু বহু অনুভূতিময় জীব বা অণু-আত্মা হয়েছিলেন। এঁকে পুরুষবিধ বলে
হয়েছে, মানে, বহু বহু রূপে নিজেকে বিদ্ধ করেছেন। বহু হওয়া মানেই দ্বিতীয় হওয়া, আর
দ্বিতীয়তা মানেই নিজেকে বা আত্মবোধকে প্রচ্ছন্ন করে, সেই বিশিষ্ট বোধটিকে বা রূপটিকে
ফুটিয়ে তোলা। এই জন্য উপনিষদে দ্বিতীয়তার বোধ বা 'নানা দর্শনই' মৃত্যুর কারণ, বা
মৃত্যুতে যে সব হারানোর অনুভূতি হয়, তার কারণ। (মৃত্যোঃ স মৃত্যুমাপ্নোতি য ইহ নানেব
পশ্যতি----মৃত্যুর থেকে সে মৃত্যুকেই পায় [মৃত্যুতে সে মৃত্যুর বা সব হারানোর, অর্থাৎ
নিজেকে হারানোর উপলবদ্ধি করে, যে এখানে নানা দর্শন করে। (কঠোপনিষদ্‌ মন্ত্র ২।১।১০
দ্রষ্টব্য।)] উপনিষদে পাপ কে মৃত্যুর রূপই বলা হয়েছে। যে সব প্রবৃত্তি, যে সব কর্ম্ম, আমাদের
অন্তর্মুখী হতে দেয় না, খালি বহির্মুখী বা দ্বিতীয়তায় সংলগ্ন করে রাখে, তার নাম 'পাপ'।
(পাপ = প+অপ; প>পা---পালন করা, পোষণ করা; অপ---অধোদিকে বা নিচের দিকে
নিয়ে যাওয়া।)
এই যে দ্বিতীয় হয়েছেন, তার পূর্ব্বে এবং মূলে ইনি নিজবোধ বা অদ্বিতীয় আত্মা, যেখানে
দ্বিতীয়তার কোন লেশ নেই। এই জন্য বলা হয়েছে যে যা কিছু 'ইদম্‌' বা সমস্ত বিশ্ব, তা এই
আত্মাতে একীভূত ছিল। এঁর নাম পুরুষবিধ। তিনি অনুবীক্ষ করেছিলেন, এবং নিজের থেকে
অন্য কিছু দেখেন নি। তিনি সৃষ্টি হবার পূর্ব্বেই, পাপকে দগ্ধ করেছিলেন; কেননা, যা কিছু
দ্বিতীয়, তা পূর্ব্বে আত্মাতেই বা একেতেই একীভূত ছিল।
সঃ যৎ (সে যে) পূর্ব্বঃ (পুর্ব্ববর্ত্তী হয়ে) অস্মাৎ সর্ব্বস্মাৎ (এই সকল থেকে) সর্ব্বান্‌ পাপ্‌মানঃ
(সকল পাপকে) ঔষৎ (দগ্ধ করেছিলেন) তস্মাৎ (সেই হেতু) পুরুষঃ (পুরুষ) ভবতি (হন): সে
যে পূর্ব্ববর্ত্তী হয়ে এই সকল থেকে সকল পাপকে দগ্ধ করেছিলেন, সেই হেতু পুরুষ।
(বৃহদারণ্যক উপনিষদ্‌ মন্ত্র ১।৪।১ থেকে উদ্ধৃত।)
এই আত্মার থেকেই প্রাণ জাত হন। আর এই প্রাণই উষ্মা, যার দ্বারা আমরা জীবিত।
পৃথিবীতে এই উষ্মাই ওষধি, বনস্পতি সকল। এই জন্য ছান্দোগ্য উপনিষদে বলা হয়েছে,
ওষধীনাং পুরুষো রসঃ  : ওষধির রস পুরুষ। (ছান্দোগ্য উপনিষদ ১।১।২ মন্ত্র থেকে উদ্ধৃত।)
১।৩।৪। অয়মেব স যো'য়মাত্মা; ইদমৃতম্‌, ইদং ব্রহ্ম, ইদং সর্ব্বম্‌
1/23/25, 11:13 PM দধীচি উক্ত মধুবিদ্যা। বৃহদারণ্যক উপনিষদ্‌ দ্বিতীয় অধ্যায় পঞ্চম ব্রাহ্মণ। (Brihadaranyaka Upanishad Second Chapter Fifth Brahmin in Bengali languag…
https://upanishadinbengali.blogspot.com/2025/01/brihadaranyaka-upanishad-second-chapter.html 7/67

 অয়ম্‌ এব (এই ই) স (সে) যঃ (যে) অয়ম্‌ (এই) আত্মা (আত্মা); ইদম্‌ (ইহা) অমৃতম্‌
(অমৃত), ইদং (ইহা) ব্রহ্ম (ব্রহ্ম), ইদং (ইহা) সর্ব্বম্‌ (সব)----- যে এই পৃথিবীতে বা পৃথিবীর
অন্তরে তেজোময়, অমৃতময় পুরুষ এবং যে এই শরীরে বা শরীরের অন্তরে তেজোময়, অমৃতময়
পুরুষ, এই যে সে, যে এই আত্মা (যাকে আমরা সবাই নিজে বলে জানি); আর সে অমৃত
(অন্তহীন এবং অবিনশ্বর), সে ব্রহ্ম (সে বৃংহন করছে, আপনি আপনাকে বর্দ্ধিত করছে
অনন্তে), সেই-ই সব, যা কিছু ইদং পদবাচ্য (ইদং সর্ব্বম্‌)।
সুতরাং, এই যে আত্মা, যিনি তেজোময়, অমৃতময়, যিনি ব্রহ্ম, তিনিই পৃথিবী, তিনিই শরীরী
জীব সকল বা ভূত সমূহ। তাই এই পৃথিবী সর্ব্ব ভূতের মধু, সর্ব্ব ভূত এই পৃথিবীর মধু। ইনি
পৃথিবী, বা স্থূল হয়েছেন বলে, আমরাও শরীরী বা নির্দিষ্ট আয়তন-সম্পন্ন জীব হয়ে বসবাস
করছি। 
স্বয়ংপ্রকাশ আত্মার জ্ঞান বা বোধক্রিয়ার থেকে সব কিছু জাত হয়েছে। এই বোধক্রিয়া বা
বেদনের নাম স্বসম্বেদন, কেননা ইনি নিজেকে নিজে নিজের দ্বারাই জানেন। তাঁর এই জ্ঞান
শক্তি বা জানার শক্তির নাম বাক্‌, আর এই মূর্ত্ত বিশ্ব তাঁর বাক্য সকল, বা কথা, বা জানার
মূর্ত্তি। তাই আমরা আমাদের জ্ঞান বা অনুভূতির বিশ্বে বেঁচে আছি, সর্ব্বদাই জানছি বা
অনুভূতিময় হচ্ছি, যতক্ষণ না নিদ্রিত হচ্ছি ততক্ষণ কথা বলছি। এঁর ধর্ম্মই হল মূর্ত্ত হওয়া,
স্থূল হওয়া, পরিমাপ যোগ্য হওয়া। এই জন্য, বৃহদারণ্যক উপনিষদে (১।৫।১১ মন্ত্র) বলা
হয়েছে, 'তস্যৈব বাচঃ পৃথিবী শরীরং জ্যোতিরূপময়মগ্নিস্তদ্যাবত্যে
বাক্তাবতী পৃথিবী তাবানয়মগ্নিঃ (বৃহদারণ্যক উপনিষদ ১।৫।১১ মন্ত্র): তস্য এব বাচঃ (সেই
বাকের) পৃথিবী (পৃথিবী) শরীরং (শরীর) জ্যোতিঃ রূপম্‌ (জ্যোতির্ম্ময় রূপ) অয়ম্‌ (এই)
অগ্নিঃ (অগ্নি/প্রাণাগ্নি) তদ্‌ (তাই) যাবতী এব (যতদূর অব্দি) বাক্ (বাক্‌) তাবতী (ততদূর)
পৃথিবী (পৃথিবী) তাবান্‌ (সেই পরিমাণ/তত দূর) অয়ম্‌ (এই) অগ্নিঃ (অগ্নি)---- সেই
বাকের পৃথিবী শরীর, জ্যোতির্ম্ময় রূপ এই অগ্নি (প্রাণাগ্নি বা প্রাণ); তাই যতদূর অব্দি
বাক্ ততদূর পৃথিবী, তত দূর এই অগ্নি।
এই ভাবে বাক্‌ সর্ব্বত্র প্রাণের জন্য পুর,শরীর,বা পৃথিবী রচনা করেছেন; আর এইভাবেই এই
এক আত্মা, বাক্‌ ও প্রাণ (অগ্নি) রূপে নিজেকে দ্বিধা বিভক্ত করে, আধার এবং আধেয় হয়ে
বিরাজ করছেন। 
২য় মন্ত্র।
ইমা আপঃ সর্ব্বেষাং ভূতানাং মধু আসামপাং সর্ব্বাণি ভূতানি
মধু যশ্চায়মাস্বপ্‌সু তেজোময়ো'মৃতময়ঃ পুরুষঃ যশ্চায়মধ্যাত্মং রৈতসস্তেজোময়ো'মৃতময়ঃ
পুরুষঃ অয়মেব স যো'য়মাত্মা ইদমৃতম্‌ ইদং ব্রহ্ম ইদং সর্ব্বম্‌।।২।।
২।১।অন্বয়-অর্থ।
ইমা (এই) আপঃ (অপ্‌ সকল/জল সকল) সর্ব্বেষাং (সকল) ভূতানাং (ভূত সকলের) মধু
(মধু) আসাম্‌ (এই) অপাম্‌ (অপ্‌ সকলের) সর্ব্বাণি (সকল) ভূতানি (ভূত) মধু (মধু) যঃ চ
1/23/25, 11:13 PM দধীচি উক্ত মধুবিদ্যা। বৃহদারণ্যক উপনিষদ্‌ দ্বিতীয় অধ্যায় পঞ্চম ব্রাহ্মণ। (Brihadaranyaka Upanishad Second Chapter Fifth Brahmin in Bengali languag…
https://upanishadinbengali.blogspot.com/2025/01/brihadaranyaka-upanishad-second-chapter.html 8/67

অয়ম্‌ (যে এই) আসু (এই) অপ্সু (অপ্‌ সকলে) তেজোময়ঃ (তেজোময়) অমৃতময়ঃ
(অমৃতময়) পুরুষঃ (পুরুষ), যঃ চ অয়ম্‌ (এবং যে এই) রৈতসঃ (রেতস্থ) তেজোময়ঃ
(তেজোময়) অমৃতময়ঃ (অমৃতময়) পুরুষঃ (পুরুষ),অয়ম্‌ এব (এই ই) স (সে) যঃ (যে)
অয়ম্‌ (এই) আত্মা (আত্মা); ইদম্‌ (ইহা) অমৃতম্‌ (অমৃত), ইদং (ইহা) ব্রহ্ম (ব্রহ্ম), ইদং
(ইহা) সর্ব্বম্‌ (সব)। 
২।২।অর্থ।
এই অপ্‌ (জল) সকল ভূত সকলের মধু, এই অপ্‌ সকলের সকল ভূত মধু; যে এই অপ্‌
সকলে তেজোময় অমৃতময় পুরুষ, এবং যে এই রেতস্থ তেজোময় অমৃতময় পুরুষ, এই-ই সে,
যে এই আত্মা;  ইহা অমৃত ইহা (ব্রহ্ম), ইহা সব। 
২।৩। সংক্ষিপ্ত ব্যাখ্যা এবং নিরুক্তি।
অপ্‌।
অপ্‌ অর্থে যাকে আমরা 'পান' করি।'প' এবং 'পা' অর্থে পান করা। আত্মস্বরূপ যিনি প্রাণ,
তিনি যখন আমাদের 'পেয়' হন, বা ভোগ্য হন, তার নাম 'অপ্‌' বা জল। এই অপ্‌ থেকে
আপ্তি এবং আপ্যায়ন কথা দুটি হয়েছে। শব্দ, স্পর্শ,রূপ, রস, গন্ধ ইত্যাদি, যা কিছু আমরা
অনুভব করছি, তদনুসারে সুখ বা দুঃখ, হর্ষ বা বিষাদময় হচ্ছি।এর দ্বারা আমাদের পরিণতি
হচ্ছে বা, বা দিক্‌ নির্ণয় হচ্ছে এবং আমরা গঠিত হচ্ছি। এখন যা করছি, বা যে রকম
জ্ঞানগতির মধ্যে আছি, তার দ্বারা ঠিক হচ্ছে, পরে আমি কি রকম সংকল্পময় হব, কোন দিকে
গতি নেব, কি ভাবে চেতনায় স্ফুরিত হব। এর অর্থ, আমার শুক্র বা বীজ সৃষ্টি হচ্ছে, যার
থেকে আমার ভবিষ্যতের ব্যক্তিত্বগুলি প্রকাশ পাবে, এবং  আমার শুক্ত থেকে বা গর্ভ থেকে 
কি রকম সন্তানরা  জন্মাবে। তাই অপ্‌ বলতে মাত্র জলকে বোঝায় না; অপ্‌ অর্থে রেত, যাতে
শুক্র জন্মায়। এই জন্য এই মন্ত্রে বলা হয়েছে, এই যে অপে যিনি তেজোময়-অমৃতময় পুরুষ,
আর প্রতি ভূতে বা জীবেতে যিনি রৈতস বা রেততে অবস্থিত তেজোময়-অমৃতময় পুরুষ, এই
দুই পুরুষ এক-ই।   
উপনিষদে রেত এবং অপের একত্বের কথা একাধিক অংশে বলা হয়েছে। বৃহদারণ্যক
উপনিষদের থেকে একটি অংশ নীচে উদ্ধৃত করা হল : (বৃহদারণ্যক উপনিষদ,মন্ত্র ৩।৯।২২।)
(প্রশ্ন) কিম্‌ (কোন) দেবতঃ (দেবতা) অস্যাং (ঐ) প্রতীচ্যাং (প্রতীচী/পশ্চিম) দিশি অসি ইতি
(দিকে অবস্থিত) --- ঐ প্রতীচী (পশ্চিম) দিকে কোন দেবতা অবস্থিত ?
(উত্তর) বরুণ দেবতঃ ইতি ----- বরুণ দেবতা।  
(প্রশ্ন) স বরুণঃ কস্মিন্‌ প্রতিষ্ঠিত ইতি----সেই বরুণ কোথায় প্রতিষ্ঠিত?
(উত্তর) অপ্সু অসি ইতি ---- অপ্‌ সমূহে।
(প্রশ্ন) কস্মিন্‌ নু আপঃ প্রতিষ্ঠিতা ইতি --- অপ্‌ সমূহ কোথায় প্রতিষ্ঠিত?
1/23/25, 11:13 PM দধীচি উক্ত মধুবিদ্যা। বৃহদারণ্যক উপনিষদ্‌ দ্বিতীয় অধ্যায় পঞ্চম ব্রাহ্মণ। (Brihadaranyaka Upanishad Second Chapter Fifth Brahmin in Bengali languag…
https://upanishadinbengali.blogspot.com/2025/01/brihadaranyaka-upanishad-second-chapter.html 9/67

(উত্তর) রেতসি ইতি ---- রেততে।
(প্রশ্ন) কস্মিন্‌ নু রেত প্রতিষ্ঠিতম্‌ ইতি---- রেত কোথায় প্রতিষ্ঠিত?
(উত্তর) হৃদয় ইতি ---- হৃদয়ে। 
তস্মাদপি (সেইজন্য) প্রতিরূপং (প্রতিরূপ) জাতম্‌ (জাতককে) আহুঃ (বলে) হৃদয়াৎ অপি
(হৃদয় থেকেই) সৃপ্তো (সৃপ্ত বা প্রসর্পিত/বহির্গত) হৃদয়াৎ ইব (যেন হৃদয় থেকেই)
নির্ম্মিত (নির্ম্মিত) ইতি ----সেইজন্য (পিতার) প্রতিরূপ (সদৃশ) জাতককে বলে, হৃদয়
থেকেই প্রসর্পিত (বহির্গত), যেন হৃদয় থেকেই নির্ম্মিত।
হৃদয়ে হি এব (অবশ্যই হৃদয়ে) রেতঃ (রেত) প্রতিষ্ঠিতং (প্রতিষ্ঠিত) ভবতি (থাকে) ইতি-----
 অবশ্যই হৃদয়ে রেত প্রতিষ্ঠিত।
হৃদয়ের দ্বারাই ধরিত্রী আমাদের ধারণ করেছেন, যার ভৌতিক নাম মাধ্যাকর্ষণ। আমরা
'আমার জীবন, 'আমার সন্তান', ইত্যাদি ভাব যে পোষণ করি এবং আমার বলে সবকিছুকে
আঁকরে ধরি, তার মূলে আছে  হার্দ্দ ভাব, বা হৃদয়ের আকর্ষণ। প্রাণ, যিনি আমাদের মূর্ত্ত
করে শরীর এবং পৃথিবীতে ধরে রেখেেছেন, তাঁর নাম অপান; আমরা আগে এ বিষয়ে উল্লেখ
করেছি। অপান = অপ (অপ্‌)+অন(প্রাণ)। এই অপ্‌ বা জল থেকেই আমরা মূর্ত্ত হয়ে
জন্মাই (জ) এবং আমাদের মূর্ত্তি এই জলেই বিসর্জ্জিত বা লয় (ল) হয়, এবং এই অপান বা
অপের দ্বারাই আমরা আকৃষ্ট, প্রতিষ্ঠিত। আমরা মাতৃগর্ভেও এই জলে শায়িত থাকি। এই জন্য
বলা হয়, 'ভবায় জলমূর্ত্তয়ে শিবায় নমঃ'; শিব স্বরূপ আত্মার যে 'জল' নামক স্বরূপ, তা
'ভব'। ভব অর্থে যা থেকে সব হয় বা মূর্ত্ত হয়; ভব শব্দ ভূ ধাতু থেকে হয়েছে, যার নাম
হওয়া। তাই আমাদের এই মূর্ত্ত পৃথিবীকে আমরা জলরাশির দ্বারা বেষ্টিত দেখি। বৃহদারণ্যক
উপনিষদে বলা হয়েছে : তৎ যৎ অপাম্‌ শরঃ আসীৎ তৎ সমহন্যত সা পৃথিবী অভবৎ -----
সেই (দিব্য) অপের যে শর (জলের উপরিভাগের যে শরের মত অংশ) তা সম্যক্‌ ভাবে কঠিন
হয়েছিল, তাই পৃথিবী হল। (বৃহদারণ্যক উপনিষদ্‌,মন্ত্র ১।২।২ থেকে উদ্ধৃত।) 
যে আত্মস্বরূপ আমাদের মধ্যে স্নিগ্ধতা,নির্ম্মলতা,আর্দ্রতা,আপ্তি এবং তৃপ্তির বোধ বা অনুভূতি
হয়ে আমাদের স্নিগ্ধ, নির্মল, তৃপ্ত ইত্যাদি করেন, যিনি আমাদের সকল তৃষ্ণা-হরক, যিনি রস
স্বরূপ, যাঁর রসময়তায় আমরা খাদ্যকে জীর্ণ করে নিজের সাথে এক করি, তিনি এই অপ্‌;
এঁরই দ্বারা, শব্দ,স্পর্শ,রূপ,স্বাদ,গন্ধ যখন ইন্দ্রিয় বাহিত হয়ে আসে, তা রসময় হয়ে আমাদের
সাথে এক হয়ে আমাদের ভোগ্য হয়; এর নাম মিথুন। ইনি সাক্ষাৎ প্রাণ। ইনি আমাদের মধ্যে
'রেত' এবং 'রৈতস পুরুষ'। এঁর থেকেই সৃষ্টি প্রতিরূপময় হচ্ছে, সন্ততিত হচ্ছে। বাইরের জল
এঁরই পার্থিব রূপ। 
৩য় মন্ত্র।
অয়মগ্নিঃ সর্ব্বেষাং ভূতানাং মধ্বস্যাগ্নেঃ সর্ব্বাণি ভূতানি মধু যশ্চায়মস্মিন্নগ্নৌ তেজোময়ো'মৃতময়ঃ
পুরুষঃ যশ্চায়মধ্যাত্মং বাঙ্মময়স্তেজোময়ো'মৃতময়ঃ পুরুষঃ অয়মেব স যো'য়মাত্মা ইদমৃতম্‌ ইদং
ব্রহ্ম ইদং সর্ব্বম্‌।।৩।।
1/23/25, 11:13 PM দধীচি উক্ত মধুবিদ্যা। বৃহদারণ্যক উপনিষদ্‌ দ্বিতীয় অধ্যায় পঞ্চম ব্রাহ্মণ। (Brihadaranyaka Upanishad Second Chapter Fifth Brahmin in Bengali languag…
https://upanishadinbengali.blogspot.com/2025/01/brihadaranyaka-upanishad-second-chapter.html 10/67

৩।১।অন্বয়-অর্থ।
অয়ম্‌ (এই) অগ্নিঃ (অগ্নি) সর্ব্বেষাং (সকল) ভূতানাং (ভূত সকলের) মধু (মধু) অস্য (এই)
অগ্নেঃ (অগ্নির) সর্ব্বাণি (সকল) ভূতানি (ভূত) মধু (মধু) যঃ চ অয়ম্‌ (যে এই) অস্মিন্‌
(এই) অগ্নৌ (অগ্নিতে) তেজোময়ঃ (তেজোময়) অমৃতময়ঃ (অমৃতময়) পুরুষঃ (পুরুষ), যঃ চ
অয়ম্‌ (এবং যে এই) অধ্যাত্মং (অধ্যাত্মে, অন্তরে) বাঙ্মময়ঃ (বাঙ্মময়) তেজোময়ঃ
(তেজোময়) অমৃতময়ঃ (অমৃতময়) পুরুষঃ (পুরুষ),অয়ম্‌ এব (এই ই) স (সে) যঃ (যে)
অয়ম্‌ (এই) আত্মা (আত্মা); ইদম্‌ (ইহা) অমৃতম্‌ (অমৃত), ইদং (ইহা) ব্রহ্ম (ব্রহ্ম), ইদং
(ইহা) সর্ব্বম্‌ (সব)। 
৩।২।অর্থ।
এই অগ্নি সকল ভূতের মধু, সকল ভূত এই অগ্নির মধু। যে এই অগ্নিতে তেজোময় অমৃতময়
পুরুষ, এবং যে এই অধ্যাত্মে (অন্তরে) বাঙ্মময় তেজোময় অমৃতময় পুরুষ, এই-ই সে যে এই
আত্মা; ইহা অমৃত, ইহা ব্রহ্ম, ইহা সব।
৩।৩।সংক্ষিপ্ত ব্যাখ্যা এবং নিরুক্তি।
অগ্নি মানে প্রাণাগ্নি। অগ্‌ (অগ্র/অগ্রবর্ত্তী)+নি (নী---নয়তি, নিয়ে যান)= অগ্নি। যিনি
সবাইকে অগ্রবর্ত্তী হয়ে নিয়ে চলেন, তিনি অগ্নি, তিনি প্রাণ। সকল কর্ম্মের আদিতে যিনি,
সমস্ত চাঞ্চল্যের প্রথমে যিনি, তিনি প্রাণ, অগ্নি, প্রাণাগ্নি। এই অগ্নি বাঙ্‌ময়।
আত্মা স্বয়ংশক্তি। ইনি নিজেই নিজেকে নিজের দ্বারা দ্বিতীয় বা বহু করেন, আবার বহুকে
একত্বে নিয়ে যান। এইটি এঁর শক্তিত্ব। এই শক্তির নাম বাক্‌। আত্মা যখন নিজের থেকে অন্য
বা দ্বিতীয় হন, তখন ইনি প্রাণ। তাই বাক্‌, প্রাণের শক্তি; এবং বাক্‌ ও প্রাণের মিথুনে সবাই
জাত হয়েছে। প্রাণ অর্থে প্রাণাগ্নি। তাই অগ্নি বাঙ্‌ময়। এই বাক্‌ প্রাণকে বহু করছেন, আর এই
বাক্‌ শক্তির দ্বারা যা কিছু জাত হয়, তার নাম বাক্য। চেতনার খণ্ড, খণ্ড রূপগুলি বাক্য। তাই
এই বাক্‌ ও প্রাণ থেকে জাত প্রত্যেকে চেতনার একটি কথা বা বাক্য। চেতনার প্রকাশ গুলি
যেখানে সুনির্দিষ্ট ভাবে বাক্যের আকারে প্রকাশিত হয়, তার নাম মন; মনের প্রকাশগুলি নির্দিষ্ট
মানসম্পন্ন, পরিমাপ-যোগ্য, সুস্পষ্ট ভাবে ব্যক্ত। আমরা যতক্ষণ জেগে থাকি, ততক্ষণ কথা
বলি, বা ততক্ষণ আমরা বাঙ্‌ময়; কথার স্ফুরণ শেষ হলে ঘুমিয়ে পড়ি। আমরা যখন ঘুমাই,
তখনও এই চির-জাগ্রত অগ্নি আমাদেরকে পালন করেন : প্রাণাগ্নয়ঃ এব এতস্মিন্‌ পুরে
জাগ্রতি---প্রাণাগ্নিরা (পঞ্চপ্রাণ, প্রাণাগ্নির পঞ্চধা স্বরূপ) এই পুরে (শরীরে) জেগে থাকেন।
(প্রশ্নোপনিষদ্‌ মন্ত্র ৪।৩ থেকে উদ্ধৃত।)
আমরা পূর্ব্বে ১।৩।৪ অংশে বাক্‌ এবং অগ্নির বিষয়ে যা উল্লেখ করেছি, সেই
বিষয়ে, বৃহদারণ্যক উপনিষদে (১।৫।১১ মন্ত্র) বলা হয়েছে, 'তস্যৈব বাচঃ পৃথিবী শরীরং
জ্যোতিরূপময়মগ্নিস্তদ্যাবত্যে বাক্তাবতী পৃথিবী তাবানয়মগ্নিঃ (বৃহদারণ্যক উপনিষদ ১।৫।১১
মন্ত্র)-------তস্য এব বাচঃ (সেই বাকের) পৃথিবী (পৃথিবী) শরীরং (শরীর) জ্যোতিঃ রূপম্‌
(জ্যোতির্ম্ময় রূপ) অয়ম্‌ (এই) অগ্নিঃ (অগ্নি/প্রাণাগ্নি) তদ্‌ (তাই) যাবতী এব (যতদূর অব্দি)
বাক্ (বাক্‌) তাবতী (ততদূর) পৃথিবী (পৃথিবী) তাবান্‌ (সেই পরিমাণ/তত দূর) অয়ম্‌ (এই)
 
1/23/25, 11:13 PM দধীচি উক্ত মধুবিদ্যা। বৃহদারণ্যক উপনিষদ্‌ দ্বিতীয় অধ্যায় পঞ্চম ব্রাহ্মণ। (Brihadaranyaka Upanishad Second Chapter Fifth Brahmin in Bengali languag…
https://upanishadinbengali.blogspot.com/2025/01/brihadaranyaka-upanishad-second-chapter.html 11/67

অগ্নিঃ (অগ্নি)---- সেই বাকের পৃথিবী শরীর, জ্যোতির্ম্ময় রূপ এই অগ্নি (প্রাণাগ্নি বা
প্রাণ); তাই যতদূর অব্দি বাক্ ততদূর পৃথিবী, তত দূর এই অগ্নি।
এই ভাবে বাক্‌ সর্ব্বত্র প্রাণের জন্য পুর,শরীর,বা পৃথিবী রচনা করেছেন; আর এইভাবেই এই
এক আত্মা, বাক্‌ ও প্রাণ (অগ্নি) রূপে নিজেকে দ্বিধা বিভক্ত করে, আধার এবং আধেয় হয়ে
বিরাজ করছেন।
পার্থিব যে অগ্নি, যাকে আমরা আগুন বলি, তা সাক্ষাৎ এই প্রাণ বা প্রাণাগ্নি। 
এই যে রূপময়, দৃশ্যমান্‌ বিশ্ব, তা এই প্রাণ বা অগ্নিরই রূপ, বা চেতনার বর্ণময় বাক্য সকল।
বর্ণের দ্বারাই বাক্যরা গঠিত। এই যে রূপের বসনে আবৃত হয়েছেন প্রাণ, প্রাণের এই প্রকার যে
ব্যক্তিত্ব তা বসুগণ বা বসু দেবতা-গণ। এই বসুগণ সবাইকে বসনাবৃত করেন, বাস্তব বোধময়
করেন, শরীরী বা পার্থিব করেন। অগ্নি শব্দের একটি অর্থ হল, যিনি কাউকে নগ্ন করে রাখেন
না : ন নগ্ন; তাই অগ্নি বসুগণের নেতা। 
৪র্থ মন্ত্র।
অয়ং বায়ুঃ সর্ব্বেষাং ভূতানাং মধ্বস্য বায়োঃ সর্ব্বাণি ভূতানি মধু যশ্চায়মস্মিন্বায়ৌ
তেজোময়ো'মৃতময়ঃ পুরুষঃ যশ্চায়মধ্যাত্মং প্রাণস্তেজোময়ো'মৃতময়ঃ পুরুষঃ অয়মেব স
যো'য়মাত্মা ইদমৃতম্‌ ইদং ব্রহ্ম ইদং সর্ব্বম্‌।।৪।।
৪।১।অন্বয়-অর্থ।
অয়ম্‌ (এই) বায়ুঃ (বায়ু) সর্ব্বেষাং (সকল) ভূতানাং (ভূত সকলের) মধু (মধু) অস্য (এই)
বায়োঃ (বায়ুর) সর্ব্বাণি (সকল) ভূতানি (ভূত) মধু (মধু) যঃ চ অয়ম্‌ (যে এই) অস্মিন্‌ (এই)
বায়ৌ (বায়ুতে) তেজোময়ঃ (তেজোময়) অমৃতময়ঃ (অমৃতময়) পুরুষঃ (পুরুষ), যঃ চ অয়ম্‌
(এবং যে এই) অধ্যাত্মং (অধ্যাত্মে, অন্তরে) প্রাণঃ (প্রাণস্বরূপ) তেজোময়ঃ (তেজোময়)
অমৃতময়ঃ (অমৃতময়) পুরুষঃ (পুরুষ), অয়ম্‌ এব (এই ই) স (সে) যঃ (যে) অয়ম্‌ (এই)
আত্মা (আত্মা); ইদম্‌ (ইহা) অমৃতম্‌ (অমৃত), ইদং (ইহা) ব্রহ্ম (ব্রহ্ম), ইদং (ইহা) সর্ব্বম্‌
(সব)। 
৪।২। অর্থ।
এই বায়ু সকল ভূতের মধু , সকল ভূত এই বায়ুর মধু ; যে এই বায়ুতে তেজোময় অমৃতময়
পুরুষ, এবং যে এই অধ্যাত্মে (অন্তরে) প্রাণস্বরূপ তেজোময় অমৃতময় পুরুষ, এই-ই সে যে এই
আত্মা; ইহা অমৃত, ইহা ব্রহ্ম, ইহা সব।
৪।৩।সংক্ষিপ্ত ব্যাখ্যা এবং নিরুক্তি।
বায়ু হলেন চিন্ময় আত্মার সেই স্বরূপ বা সূত্র, যাঁর দ্বারা সৃষ্টিতে সবাই সবার সাথে যুক্ত। বায়ু
শব্দটি 'বা' ধাতু থেকে হয়েছে। 'বা' ধাতুর অর্থ  'বয়ন করা', এবং 'চলা, বা 'প্রবাহিত হওয়া'।
 বায়ুকে উপনিষদে সূত্রাত্মা বলা হয়েছে। বৃহদারণ্যক উপনিষদের ৩।৭।২ মন্ত্রে বলা হয়েছে যে
বায়ু হলেন সেই সূত্র যাঁর দ্বারা ইহলোক,পরলোক, এবং সর্ব্বভূত গ্রথিত হয়ে রয়েছে।
1/23/25, 11:13 PM দধীচি উক্ত মধুবিদ্যা। বৃহদারণ্যক উপনিষদ্‌ দ্বিতীয় অধ্যায় পঞ্চম ব্রাহ্মণ। (Brihadaranyaka Upanishad Second Chapter Fifth Brahmin in Bengali languag…
https://upanishadinbengali.blogspot.com/2025/01/brihadaranyaka-upanishad-second-chapter.html 12/67

বহিরাকাশে যা বায়ু রূপে প্রবাহিত, তা আমাদের নাসিকার মধ্যদিয়ে, আমাদের অন্তরাকাশে বা
অন্তরে প্রবাহিত। অন্তরে প্রবাহমান বায়ুর নাম 'আয়ু' বা 'প্রাণ বায়ু'। এই বায়ুর দ্বারাই
আমাদের শারীরিক এবং মানসিক সকল যোগসূত্র সিদ্ধ হয়েছে; এই যোগসূত্র ব্যাহত হলে,
মানসিক বা শারীরিক অসংলগ্নতা দেখা দেয়।
বৃহদারণ্যকের মন্ত্রটির একটি অংশ উদ্ধৃত করা হল : স হোবাচ (তিনি [মহর্ষি যাজ্ঞবল্ক্য]) এই
বললেন : বায়ুঃ বৈ (বায়ুই) গৌতম (হে গৌতম) তৎ (সেই) সূত্রম্‌ (সূত্র); বায়ুনা বৈ (বায়ুর
দ্বারাই) গৌতম (হে গৌতম) সূত্রেণ (সূত্রের দ্বারা) অয়ং চ লোকঃ (এই লোক এবং) পরশ্চ
লোকঃ (পরলোক) সর্ব্বাণি চ ভূতানি (এবং সকল ভূত) সংদৃব্ধানি ভবতি (সম্যক্‌ রূপে গ্রথিত
হয়েছে); তস্মাৎ বৈ গৌতম (সেই হেতু গৌতম) পুরুষম্‌ প্রেতম্‌ (পুরুষ যে  প্রেত/ মৃত পুরুষকে)
আহুঃ (বলে) বিঅসংস্রিষত (বিস্রস্ত/শিথিল হয়ে যায়) অস্য (এর) অঙ্গানি (অঙ্গ সকল)
 ইতি------ হে গৌতম! বায়ুই সেই সূত্র; বায়ু রূপ সূত্রের দ্বারাই, হে গৌতম, এই লোক
এবং পরলোক এবং সকল ভূত সম্যক্‌ রূপে গ্রথিত হয়েছে; সেই হেতু গৌতম
(লোকে) মৃত পুরুষের উদ্দেশ্যে বলে,'এর অঙ্গ সকল বিস্রস্ত/শিথিল হয়ে গেছে '। (বৃহদারণ্যক
উপনিষদ্‌, ৩।৭।২ মন্ত্র থেকে উদ্ধৃত।) 
মৃত্যুর অব্যবহিত পরে, মৃতের অঙ্গসকল শিথিল হয়ে যায় (primary flaccidity)।
৪।৩।১। বায়ু, প্রাণ ও গন্ধ।
পৃথিবী যেমন স্বীয় অক্ষে আবর্ত্তন করে আহ্নিক গতিময় হয়েছে, সেই রকমই, আমরাও বায়ুর
দ্বারা শ্বাস ও প্রশ্বাসের আবর্ত্তনে আবর্ত্তিত হয়ে এই শরীরে স্থিতি লাভ করেছি। গন্ধ = গম্
+ধ; আমরা যে স্বীয় অক্ষে, জীবন-গতিতে, প্রাণের (বায়ুর) আবর্ত্তনে স্থিতি লাভ করেছি,
তাই গন্ধ, যা গতির (গম্) ধারক (ধ)। আমাদের যে গন্ধের অনুভূতি, তা এই শ্বাস ও
প্রশ্বাসের আবর্ত্ত এবং শারীরিক স্থিতির সাথে সম্বন্ধযুক্ত। এই জন্য বৈদিক পরিভাষায় গন্ধকে
প্রাণ বলা হয়। এই জন্যই, যা ক্ষিতি (পৃথিবী) তত্ত্ব, তার তন্মাত্রা গন্ধ।
আমাদের শ্রবণ, স্পর্শ, দর্শন, আস্বাদন, গন্ধ, মৃত্যুর দ্বারা আক্রান্ত, সীমিত এবং ক্ষয়িষ্ণু।
আমরা যখন মহাপ্রাণকে দেখে অমৃত হই, তখন আমাদের জ্ঞানশক্তি বা ইন্দ্রিয়রাও এই স্থূলত্ব
বা মর্ত্তকে অতিক্রম করে অমৃত হয়। তাই উপনিষদে বলা হয়েছে যে, এই মুখ্যপ্রাণ (মহাপ্রাণ,
মৃত্যুহীন প্রাণ) যখন ঘ্রাণশক্তিকে মৃত্যুর পরপারে বহন করে নিয়ে গিয়েছিলেন, তখন তা বায়ু
(বায়ু দেবতা) হয়ে প্রবহমান হয়েছিল।
অথ হ প্রাণম্‌ (অনন্তর প্রাণকে/অনন্তর ঘ্রাণশক্তিকে) অত্যবহৎ (অতিক্রম করে বহন
করেছিলেন/মৃত্যুকে অতিক্রম করে বহন করেছিলেন); সঃ (সে; সেই ঘ্রাণশক্তি) যদা (যখন)
মৃত্যুম্‌ (মৃত্যুকে) অতিমুচ্যত (অতিমোচন করে/মৃত্যুকে অতিক্রম করে মুক্ত হয়) সঃ (সে) বায়ুঃ
(বায়ু) অভবৎ (হয়েছিল); সোয়ং (সেই এই) বায়ুঃ (বায়ু) পরেণ মৃত্যুম্‌ (মৃত্যুকে পার হয়ে
/ মৃত্যুর পরপারে) অতিক্রান্তঃ (অতিক্রান্ত হয়ে) পবতে (প্রবাহিত হতে লাগলেন) : অনন্তর
প্রাণকে (ঘ্রাণশক্তিকে), মৃত্যুকে অতিক্রম করে, (মুখ্যপ্রাণ/মহাপ্রাণ) বহন করেছিলেন; সেই
ঘ্রাণশক্তি যখন মৃত্যুকে অতিক্রম করে মুক্ত হয়, সে বায়ু হয়েছিল; সেই এই বায়ু মৃত্যুর
পরপারে অতিক্রান্ত হয়ে প্রবাহিত হতে লাগলেন। (বৃহদারণ্যক উপনিষদ্‌, মন্ত্র ১।৩।১৩
দ্রষ্টব্য।) এই বায়ু বা প্রাণের প্রবহনই স্পর্শ, যুক্ততার অনুভূতি।  
1/23/25, 11:13 PM দধীচি উক্ত মধুবিদ্যা। বৃহদারণ্যক উপনিষদ্‌ দ্বিতীয় অধ্যায় পঞ্চম ব্রাহ্মণ। (Brihadaranyaka Upanishad Second Chapter Fifth Brahmin in Bengali languag…
https://upanishadinbengali.blogspot.com/2025/01/brihadaranyaka-upanishad-second-chapter.html 13/67

( প্রসঙ্গতঃ উল্লেখ্য যে উপরে (৪।৩ অংশে) বৃহদারণ্যকের যে মন্ত্রটি উল্লেখ করা হয়েছে,
সেইটি মহর্ষি যাজ্ঞবল্ক্য একটি প্রশ্নের উত্তরে বলেছিলেন, এবং মূল প্রশ্নটি করেছিলেন একজন
গন্ধর্ব্ব। কোন গৃহস্থের স্ত্রী, ঐ গন্ধর্ব্বের দ্বারা আবিষ্ট হয়েছিলেন, এবং ঐ গন্ধর্ব্ব সেই গৃহস্থেকে
জিজ্ঞাসা করেছিলেন যে , 'তুমি কি সেই সূত্রকে জান যাঁর দ্বারা এই লোক, পরলোক এবং
সকল ভূত সম্যক্‌ রূপে গ্রথিত হয়েছে?'। যাঁরা এই গন্ধ তন্মাত্রার বিজ্ঞান জেনে, স্থূল বিশ্বের
উপর আধিপত্য করেন, তাঁরা গন্ধর্ব্ব।
এ ছাড়া, বৃহদারণ্যক উপনিষদের তৃতীয় অধ্যায় তৃতীয় ব্রাহ্মণে সুধন্বা আঙ্গিরস নামক এক
গন্ধর্ব্বের কথা উক্ত হয়েছে, যিনিও বায়ুর বিষয়ে উপদেশ দিয়েছেন।)
৪।৩।২। বায়ু, ইন্দ্রিয় এবং যজুর্ব্বেদ।
বায়ু, যিনি আমাদের অন্তরে আয়ু, তাঁর দ্বারাই আমাদের মন এবং শরীরে স্থিত অঙ্গ-
প্রত্যাঙ্গাদি সবাই সবার সাথে যুক্ত, এবং সংলগ্ন; একথা আগে বলা হয়েছে। আবার এই বায়ুর
দ্বারাই আমাদের অন্তর এবং বহির্বিশ্ব (বা অন্তরাকাশ এবং বহিরাকাশ) পরস্পরের সাথে যুক্ত।
যে পথ সকল দিয়ে বায়ু বা প্রাণ প্রবাহিত হয়ে এই যুক্ততাকে বজায় রাখেন তাদের নাম
'ইন্দ্রিয়'। এই জন্য উপনিষদে ইন্দ্রিয়দেরকেও প্রাণ বলা হয়েছে।
আত্মস্বরূপ চেতনার বা মহাপ্রাণের যে বোধক্রিয়া বা বেদনের দ্বারা একের সাথে অপরের যুক্ততা
সাধন হয়, এবং যে বেদনের দ্বারা সমগ্র সৃষ্টি স্রষ্টার সাথে যুক্ত, তার নাম 'যজুর্ব্বেদ' এবং তার
দেবতা (দৈব ব্যক্তিত্ব) হলেন বায়ু।  
৫ম মন্ত্র।
অয়মাদিত্যঃ সর্ব্বেষাং ভূতানাং মধ্বস্যাদিত্যস্য সর্ব্বাণি ভূতানি
মধু; যশ্চায়মস্মিন্নাদিত্যে তেজোময়ো'মৃতময়ঃ পুরুষঃ যশ্চায়মধ্যাত্মং চাক্ষুষস্তেজোময়ো'মৃতময়ঃ
পুরুষঃ অয়মেব স যো'য়মাত্মা ইদমৃতম্‌ ইদং ব্রহ্ম ইদং সর্ব্বম্‌।।৫।।
৫।১।অন্বয়-অর্থ।
অয়ম্‌ (এই) আদিত্যঃ(আদিত্য) সর্ব্বেষাং (সকল) ভূতানাং (ভূত সকলের) মধু (মধু) অস্য
(আদিত্যস্য) সর্ব্বাণি (সকল) ভূতানি (ভূত) মধু (মধু) যঃ চ অয়ম্‌ (যে এই) অস্মিন্‌ (এই)
আদিত্যে (আদিত্যে) তেজোময়ঃ (তেজোময়) অমৃতময়ঃ (অমৃতময়) পুরুষঃ (পুরুষ), যঃ চ
অয়ম্‌ (এবং যে এই) অধ্যাত্মং (অধ্যাত্মে, অন্তরে) চাক্ষুষ (চক্ষুতে স্থিত) তেজোময়ঃ
(তেজোময়) অমৃতময়ঃ (অমৃতময়) পুরুষঃ (পুরুষ), অয়ম্‌ এব (এই-ই) স (সে) যঃ (যে)
অয়ম্‌ (এই) আত্মা (আত্মা); ইদম্‌ (ইহা) অমৃতম্‌ (অমৃত), ইদং (ইহা) ব্রহ্ম (ব্রহ্ম), ইদং
(ইহা) সর্ব্বম্‌ (সব)। 
৫।২। অর্থ।
এই আদিত্য সকল ভূতের মধু , সকল ভূত এই আদিত্যর মধু; যে এই আদিত্যে তেজোময়
অমৃতময় পুরুষ, এবং যে এই অধ্যাত্মে (অন্তরে) চাক্ষুষ (চক্ষুতে স্থিত) তেজোময় অমৃতময়
পুরুষ, এই-ই সে যে এই আত্মা; ইহা অমৃত, ইহা ব্রহ্ম, ইহা সব।
1/23/25, 11:13 PM দধীচি উক্ত মধুবিদ্যা। বৃহদারণ্যক উপনিষদ্‌ দ্বিতীয় অধ্যায় পঞ্চম ব্রাহ্মণ। (Brihadaranyaka Upanishad Second Chapter Fifth Brahmin in Bengali languag…
https://upanishadinbengali.blogspot.com/2025/01/brihadaranyaka-upanishad-second-chapter.html 14/67

৫।৩।সংক্ষিপ্ত ব্যাখ্যা এবং নিরুক্তি।
অদিতি এবং আদিত্য শব্দ দুটি, অদ্ ধাতু থেকে হয়েছে। অদ্ ধাতুর অর্থ অদন করা বা
খাওয়া। কোন কিছু খাওয়া মানে, তাকে নিজের সাথে এক করে নেওয়া। আমরা যা খাই, তার
সূক্ষ্মাংশ আমাদের মন, প্রাণ এবং বাকের সাথে এক হয়ে যায়, আর স্থূলাংশের দ্বারা শরীর
পুষ্ট হয়।(ছান্দোগ্য উপনিষদ্‌ ৬ষ্ঠ অধ্যায়ের ৫ম খণ্ড দ্রষ্টব্য।) আবার অদিতি অর্থে দিতি বা
দ্বিতীয়তা বিহীন যিনি। বেদে বলা হয়েছে যে অদিতি দেবগণের মাতা। দেবতারা দ্বিতীয় দর্শনের
দ্বারা অভিভূত নন বলে, অমর বা অমৃতভোগী।দ্বিতীয়তার বোধ থেকে মৃত্যু-দর্শন হয়, একথা
আগে আমরা উল্লেখ করেছি। আদিত্যকে দেবগণের মধু বলা হয়েছে : ওঁ অসৌ বা আদিত্যঃ
দেবমধু----ঐ আদিত্য দেবগণের মধু (ছান্দোগ্য উপনিষদ্‌ তৃতীয় অধ্যায়, প্রথম খণ্ড দ্রষ্টব্য)।
এই যে পরম-আত্মস্বরূপ, আমাদের গ্রসন করছেন, নিজের সাথে এক করছেন, সেই গ্রসন
ক্রিয়ার কেন্দ্র হল 'আদিত্য', যিনি আমাদের  বহিরাকাশে সূর্য এবং আমাদের অধ্যত্মে চাক্ষুষ
পুরুষ। সূর্যের থেকে আলো, বা দৃষ্টি এবং কাল বর্ষিত হচ্ছে। এই কাল বর্ষিত হচ্ছে সম্বৎসর
(বৎসর), ষণ্মাস (উত্তরায়ণ এবং দক্ষিণায়ণ), ঋতু, মাস, অর্দ্ধমাস, সপ্তাহ, অহোরাত্র (দিন-
রাত) আকারে। এই কাল গতির মধ্য দিয়ে আমরা পরিবর্ত্তিত হচ্ছি, যার নাম অভ্যুদয়;
বাইরের দিক্‌ থেকে এটি কাল-হরণ বা আয়ুক্ষয়, বা  মৃত্যুর দিকে গতি হলেও, প্রকৃত পক্ষে এই
গতি মৃত্যুর মধ্য দিয়ে অমৃতে চলা। এই বিষয়ে বৃহদারণ্যক উপনিষদের ১।২।৫ মন্ত্রে এবং  ৩।
৯।৫ মন্ত্রে বলা হয়েছে। বৃহদারণ্যকের ১।২।৫ মন্ত্রের একটি অংশ  উদ্ধৃত করলাম : 
সঃ (তিনি) যৎ যৎ এব (যাকে যাকেই) অসৃজত (সৃষ্টি করলেন) তৎ তৎ (তাকে তাকে) অত্তুম
(ভক্ষণ করতে) অধ্রিয়ত (সংকল্প করলেন); সর্ব্বম্‌ বৈ অত্তি (সকল কিছুই ভক্ষণ করেন) ইতি
তৎ (তাই-ই) অদিতেঃ (অদিতির) অদিতিত্বম্‌ (অদিতিত্ব) : তিনি (স্রষ্টা*) যাকে যাকেই সৃষ্টি
করলেন, তাকে-তাকেই ভক্ষণ(অদন) করতে সংকল্প করলেন; সকল কিছুই (যে) ভক্ষণ
(অদন) করেন, তাই-ই (ইহাই) অদিতির অদিতিত্ব।
(*বৃহদারণ্যকে মৃত্যুকেই স্রষ্টা বলা হয়েছে, কেননা যিনি 'অদিতি' বা দ্বিতীয়তা-হীন, তিনি
যখন নিজেকে দ্বিতীয় করেন, তখন সেই দ্বিতীয়তায়, তাঁর আনন্ত্য এবং অবিনশ্বরতা প্রচ্ছন্ন
হয়ে যায় এবং দ্বিতীয় বোধটি প্রাধান্য লাভ করে। তাই, ইনি দ্বিতীয়তার স্রষ্টা বলে, এঁকে 'মৃত্যু'
বলা হয়েছে।)
বৃহদারণ্যক উপনিষদের ৩।৯।৫ মন্ত্রটি নীচে উদ্ধৃত করা হল।
(প্রশ্ন)। কতম (কারা) আদিত্যাঃ (আদিত্যরা) ইতি ?----কারা আদিত্যরা?
(উত্তর)। দ্বাদশ বৈ মাসাঃ সম্বৎসরস্য (সম্বৎসরের দ্বাদশ মাস সকল) এতে (এরাই) আদিত্যাঃ
(আদিত্যরা)----  সম্বৎসরের (একটি সম্পূর্ণ বৎসরের যে) দ্বাদশ মাস সকল, এরাই
আদিত্যরা। (একটি সম্পূর্ণ বৎসরের যে দ্বাদশ মাস সকল, এরাই আদিত্যরা।)
এতে হীদং সর্ব্বং (এই সবকে) আদদনাঃ (নিজেতে আদায় করে; নিজেতে গ্রহণ করে) যন্তি
(গমন করেন)-----এই সবকে নিজেতে আহৃত করে (নিজেতে গ্রহণ করে) গমন করেন।
1/23/25, 11:13 PM দধীচি উক্ত মধুবিদ্যা। বৃহদারণ্যক উপনিষদ্‌ দ্বিতীয় অধ্যায় পঞ্চম ব্রাহ্মণ। (Brihadaranyaka Upanishad Second Chapter Fifth Brahmin in Bengali languag…
https://upanishadinbengali.blogspot.com/2025/01/brihadaranyaka-upanishad-second-chapter.html 15/67

তে (তাঁরা) যৎ (যেহেতু) ইদম্‌ (এই) সর্ব্বম্‌ (সকলকে) আদদনাঃ (নিজেতে আদায় করে;
নিজেতে গ্রহণ করে) যন্তি (গমন করেন) তস্মাৎ (সেই কারণে) আদিত্যাঃ (আদিত্য) ইতি----
----তাঁরা যেহেতু এই  সকলকে নিজেতে আহৃত (গ্রহণ) করে গমন করেন, সেই কারণে (এঁদের
নাম) আদিত্য। 'আদদানা' শব্দটি 'আ-দা' ধাতু থকে হয়েছে, যার অর্থ আত্মত্বে বা নিজেতে
নিয়ে নেওয়া, নিজের সাথে এক করে নেওয়া। ('আদায়' শব্দটি এর থেকেই হয়েছে।)
৫।৩।১। আদিত্য ও মাস সকল।
মাস অর্থে সমাস, বা সব এক-করে, সমাসিত করে চলা। সমাস = স (সহ) মাস। অস্‌ ধাতুর
অর্থ থাকা (অস্তি)। নিজেতে এক করা, সম করার অর্থ 'সমাস'। নিজের সাথে একসা করে
নিয়ে চলেছেন, এর নাম মাস। এই জন্য দ্বাদশ মাস-ই দ্বাদশ আদিত্য। আবার মাস অর্থে
'মা+ অস্‌'; মা = না, নাস্তি; অস্‌= নিক্ষেপ করা; নিক্ষেপ করেন না, ফেলে দেন না।
কালক্রমের দ্বারা যত পরিবর্ত্তন হচ্ছে, সেই সব প্রকাশ বা  রূপগুলিকে, বা কালের দ্বারা খণ্ড
খণ্ড আমাদের সত্ত্বাগুলিকে, নিজের সাথে সমন্বিত করে, সমাসিত করে, নিজেতে হরণ করছেন
বা আহৃত করছেন।
৫।৩।২। আদিত্য এবং চাক্ষুষ পুরুষ।
যে পুরুষ আদিত্যে স্থিত, তিনিই আমাদের চক্ষুতে স্থিত এবং চাক্ষুষ পুরুষ, এ কথা উপনিষদে
একাধিকবার উল্লেখ করা হয়েছে। যেমন বাইরের আকাশে আদিত্যের থেকে আলো বা রূপ
এবং কাল (অহো-রাত্র/দিন-রাত ইত্যাদি) প্রকাশ পাচ্ছে, সেইরকম, আমাদের চক্ষুতে সর্ব-রূপ
জ্ঞান প্রতিষ্ঠিত, এবং আমার নিদ্রা ও জাগরণের যে কালাবর্ত্তন তা এই চক্ষু দ্বারা নিয়ন্ত্রিত।
আধুনিক বিজ্ঞানে চক্ষুর সাথে সংশ্লিষ্ট এই কালাবর্ত্তনকে Circadian rythm (সারকাডিয়ান
রিদম্‌----অহো-রাত্র ছন্দ) বলে। 
এই প্রসঙ্গে বৃহদারণ্যক উপনিষদের একটি মন্ত্র ( বৃহদারণ্যক উপনিষদ্‌ ৫।৫।২ মন্ত্র) উদ্ধৃত
করা হল : তৎ যৎ তৎ (সেই যে সেই) সত্যম্‌ (সত্য) অসৌ (ঐ) সঃ (সে) আদিত্যঃ
(আদিত্য) যঃ (যিনি) এষঃ (এই) এতস্মিন্‌ মণ্ডলে (এই মণ্ডলে স্থিত) পুরুষঃ (পুরুষ), যঃ চ
(এবং যে) অয়ম্‌ (এই) দক্ষিণে অক্ষন্‌ (দক্ষিণ অক্ষিতে স্থিত) পুরুষঃ (পুরুষ)। তৌ এতৌ
(সেই দুই) অন্যঃ অন্যস্মিন্‌ (অন্য অন্যতে/একে অপরেতে) প্রতিষ্ঠিতৌ (প্রতিষ্ঠিত); রশ্মিভিঃ
(রশ্মিসমূহের দ্বারা) এষঃ (এই; এই আদিত্য) অস্মিন্‌ (ইহাতে; চক্ষুতে) প্রতিষ্ঠিতঃ
(প্রতিষ্ঠিত); প্রাণৈঃ (প্রাণ সমূহের দ্বারা) অয়ম্‌ (এ; চাক্ষুষ পুরুষ) অমুস্মিন্‌ (অন্যতে;
আদিত্যে)। সঃ (তিনি) যৎ (যখন) উৎক্রমিষ্যন্‌ (উৎক্রমণ-গতি প্রাপ্ত) ভবতি (হন) শুদ্ধম্‌
এব (শুদ্ধ) এতৎ (এই) মণ্ডলম্‌ (মণ্ডলকে) পশ্যতি (দেখেন); ন (না) এনম্‌ (এঁতে) এতে
রশ্ময়ঃ (এই রশ্মি সমূহ) প্রত্যায়ন্তি (প্রত্যাগমন করে)------- "সেই যে সেই সত্য, ঐ  সে
আদিত্য, যিনি এই, এই (সূর্য) মণ্ডলে স্থিত পুরুষ এবং যে এই দক্ষিণ অক্ষিতে স্থিত পুরুষ।
সেই দুই (আদিত্য এবং দক্ষিণ অক্ষিতে স্থিত পুরুষ) অন্য অন্যতে (একে অপরেতে)
প্রতিষ্ঠিত; রশ্মিসমূহের দ্বারা এই আদিত্য ইহাতে (চক্ষুতে) প্রতিষ্ঠিত; প্রাণ সমূহের দ্বারা
(প্রাণের বেদন সমূহের দ্বারা) এই (চাক্ষুষ পুরুষ) ওতে (ঐ আদিত্যে) (প্রতিষ্ঠিত)। তিনি যখন
উৎক্রমণ-গতি প্রাপ্ত হন (দেহত্যাগে উদ্যত হন) (তখন) এই মণ্ডলকে বিশুদ্ধ রূপে দর্শন
করেন; এঁতে এই রশ্মি সমূহ প্রত্যাগমন করেনা।"
1/23/25, 11:13 PM দধীচি উক্ত মধুবিদ্যা। বৃহদারণ্যক উপনিষদ্‌ দ্বিতীয় অধ্যায় পঞ্চম ব্রাহ্মণ। (Brihadaranyaka Upanishad Second Chapter Fifth Brahmin in Bengali languag…
https://upanishadinbengali.blogspot.com/2025/01/brihadaranyaka-upanishad-second-chapter.html 16/67

যিনি সত্য, তিনি আদিত্য এবং আমাদের চক্ষুতে প্রতিষ্ঠিত পুরুষ। আমাদের সত্য বোধ চক্ষুতে
বা দর্শন বোধে প্রতিষ্ঠিত।এই জন্য, যা চাক্ষুষ, বা যা আমরা দেখি, তাতে আমাদের প্রত্যয় হয়
বা তা আমরা সহজেই বিশ্বাস করি। আমরা আগে উল্লেখ করেছি যে জ্ঞানেন্দ্রিয় চক্ষুর
কর্ম্মেন্দ্রিয় হল পা, যে পদদ্বয়ের দ্বারা আমরা পৃথিবীতে প্রতিষ্ঠিত থাকি বা দাঁড়াতে পারি; যা
সত্য তার উপর আমরা নির্ভর করি বা তাতে প্রতিষ্ঠিত হই।
'দক্ষিণ অক্ষ (অক্ষি)' বলা হয়েছে তার কারণ, দৃষ্টি শক্তি বা চক্ষু থেকে (অথবা আদিত্য
থেকে) যে কালাবর্ত্তন বা অক্ষগতি প্রকাশ পাচ্ছে, তার দ্বারা আমরা সংযমিত হচ্ছি বা
নিয়ন্ত্রিত হচ্ছি এবং এই ভাবে আমাদের মুক্তি বা অভ্যুদয় হচ্ছে। দক্ষিণ দিক্‌ সংযমনের দিক্‌,
এবং এ বিষয়ে নীচে ৬।৩।১ অংশে উল্লেখ করা হয়েছে।
৫।৩।৩। চক্ষু শব্দের অর্থ।
চ=চলা, গতি----কালগতি
ক্ষ=ক্ষরণ, রূপ প্রকাশ
উ= উভয়
কাল এবং রূপ এই উভয়ই যে কেন্দ্র থেকে প্রকাশ পাচ্ছে, তার নাম চক্ষু।
৬ষ্ঠ মন্ত্র।
ইমা দিশঃ সর্ব্বেষাং ভূতানাং মধু, আসামদিশাং সর্ব্বাণি ভূতানি
মধু; যশ্চায়মাস্বদিক্ষু তেজোময়ো'মৃতময়ঃ পুরুষঃ, যশ্চায়মধ্যাত্মং শ্রোত্রঃ
প্রাতিশ্রুৎকস্তেজোময়ো'মৃতময়ঃ পুরুষঃ, অয়মেব স যো'য়মাত্মা; ইদমৃতম্‌, ইদং ব্রহ্ম, ইদং
সর্ব্বম্‌।।৬।।
৬।১।অন্বয়-অর্থ।
ইমাঃ (এই) দিশঃ (দিক্‌ সকল) সর্ব্বেষাং (সকল) ভূতানাং (ভূত সকলের) মধু (মধু) আসাম্‌
(এই) দিশাম্‌ (দিক্‌ সকলের) সর্ব্বাণি (সকল) ভূতানি (ভূত) মধু (মধু) যঃ চ অয়ম্‌ (যে এই)
আসু (এই) দিক্ষু (দিক্‌ সকলে) তেজোময়ঃ (তেজোময়) অমৃতময়ঃ (অমৃতময়) পুরুষঃ
(পুরুষ), যঃ চ অয়ম্‌ (যে এই) অধ্যাত্মং (অধ্যাত্মে, অন্তরে) শ্রোত্রঃ (শ্রোত্রতে স্থিত)
প্রতিশ্রুৎকঃ (প্রতিশ্রুতিতে/প্রতিধ্বনিতে স্থিত) তেজোময়ঃ (তেজোময়) অমৃতময়ঃ (অমৃতময়)
পুরুষঃ (পুরুষ), অয়ম্‌ এব (এই-ই) স (সে) যঃ (যে) অয়ম্‌ (এই) আত্মা (আত্মা); ইদম্‌
(ইহা) অমৃতম্‌ (অমৃত), ইদং (ইহা) ব্রহ্ম (ব্রহ্ম), ইদং (ইহা) সর্ব্বম্‌ (সব)। 
৬।২।অর্থ।
এই দিক্‌ সকল ভূত সকলের মধু, এই দিক্‌ সকলের সকল ভূত মধু ; যে এই দিক্‌ সকলে
তেজোময় অমৃতময় পুরুষ, এবং যে এই অধ্যাত্মে (অন্তরে) শ্রোত্রতে (শ্রুতিতে) স্থিত এবং
প্রতিশ্রুতিতে (প্রতিধ্বনিতে) স্থিত তেজোময় অমৃতময় পুরুষ, এই-ই সে যে এই আত্মা ; ইহা
অমৃত, ইহা ব্রহ্ম, ইহা সব।
1/23/25, 11:13 PM দধীচি উক্ত মধুবিদ্যা। বৃহদারণ্যক উপনিষদ্‌ দ্বিতীয় অধ্যায় পঞ্চম ব্রাহ্মণ। (Brihadaranyaka Upanishad Second Chapter Fifth Brahmin in Bengali languag…
https://upanishadinbengali.blogspot.com/2025/01/brihadaranyaka-upanishad-second-chapter.html 17/67

৬।৩।সংক্ষিপ্ত ব্যাখ্যা এবং নিরুক্তি।
চিন্ময় আত্মার বা প্রাণের প্রবণতা-গুলিই দিক্‌ সকল। যে দিক্‌ দিয়ে প্রাণ মনকে পরিচালিত
করে, সেইটি সেই দিক্‌। তদনুসারে মন সঙ্কল্প করে, এবং তদনুসারে ইন্দ্রিয়-সকল সক্রিয় হয়।
  
আমরা পূর্ব্বে উল্লেখ করেছি যে চেতনার প্রকাশগুলি যেখানে সুনির্দিষ্ট ভাবে বাক্যের আকারে
প্রকাশিত হয়, তার নাম মন; মনের প্রকাশগুলি নির্দিষ্ট মানসম্পন্ন, পরিমাপ-যোগ্য, সুস্পষ্ট
ভাবে ব্যক্ত। এই মন যখন সংকল্প করে, তখন ইন্দ্রিয়রা পরিচালিত হয়। মন কি সংকল্প করবে
বা কি করবে না, তা নির্ধারিত হয় প্রাণ কোনদিকে কামময় হচ্ছে, অর্থাৎ দিকের দ্বারা।আবার
সংকল্প অনুসারে যে কর্ম্ম কৃত হয়, তার থেকে স্থির হয় কর্ম্ম-কর্ত্তার গতি কোন দিকে হবে, বা
কর্ম্মফল কি হবে।
৬।৩।১।প্রাণ ও দিক্‌ এবং দিক্‌-অভিমানী দেবতারা।
চাক্ষুষ বা অক্ষিগত পুরুষের কথা আমরা উপরে ৫।৩।২ অংশে বর্ণনা করেছি। বৃহদারাণ্যক
উপনিষদের চতুর্থ অধ্যায় দ্বিতীয় ব্রাহ্মণে ঋষি বলেছেন যে, যিনি চাক্ষুষ বা অক্ষিগত পুরুষ,
প্রাণই তাঁর দিক্‌ সকল। সেখানে বলা হয়েছে যে তাঁর (অক্ষিগত পুরুষের) পূর্ব্ব দিক্‌ হল প্রাঞ্চ
বা পূর্ব্ব-মুখী বা পূর্ব্ব-অভিমানী প্রাণ, দক্ষিণ দিক্‌ হল দক্ষিণ-মুখী বা দক্ষিণ-অভিমানী
প্রাণ, পশ্চিম দিক্‌ হল প্রত্যঞ্চ বা পশ্চিম-মুখী বা পশ্চিম-অভিমানী প্রাণ, এবং এই রকম-ই
উত্তর, ও অন্যান্য দিক্‌ সকল।
বৃহদারাণ্যক উপনিষদের ৪।২।৪ মন্ত্রটির প্রথম অংশ উদ্ধৃত করলাম: 
তস্য প্রাচী দিক্‌ প্রাঞ্চঃ প্রাণাঃ দক্ষিণা দ্গিক্ষিণে প্রাণাঃ প্রতীচী দিক্‌ প্রত্যঞ্চ প্রাণাঃ উদীচি দিগুঞ্চ
প্রাণাঃ ঊর্ধ্বা দিগূর্ধ্বাঃ প্রাণাঃ অবাচী দিগবাচঞ্চ প্রাণাঃ সর্ব্বে দিশাঃ সর্ব্বে প্রাণাঃ........তাঁর (সেই
আত্মার/চাক্ষুষ পুরুষের) প্রাচী (পূর্ব্ব) দিক্‌, পূর্ব্ব-মুখী বা পূর্ব্ব-অভিমানী প্রাণ সকল; দক্ষিণ
দিক্‌, দক্ষিণ-মুখী বা দক্ষিণ-অভিমানী প্রাণ সকল; পশ্চিম দিক্‌, প্রত্যঞ্চ বা পশ্চিম-মুখী
বা পশ্চিম-অভিমানী প্রাণ সকল; উত্তর দিক্‌, উত্তর বা উত্তর-মুখী বা উত্তর-অভিমানী প্রাণ
সকল; ঊর্ধ্ব দিক্‌, ঊর্ধ্ব বা ঊর্ধ্ব-মুখী বা ঊর্ধ্ব-অভিমানী প্রাণ সকল, অবাচী
(অধঃ) দিক্‌, অধঃ বা অধোমুখী বা অধঃ-অভিমানী প্রাণ সকল; সর্ব্বদিক্‌, সর্ব্ব বা সর্ব্বমুখী
বা সর্ব্ব-অভিমানী প্রাণ সকল......। (বৃহদারাণ্যক উপনিষদ্‌  মন্ত্র ৪।২।৪ দ্রষ্টব্য।)
প্রাণ যখন পূর্ব্ব বা প্রাচী নামক যে বেদন বা অনুভূতি তা প্রকাশ করেন, তাই হয় পূর্ব্ব দিক্‌, যে
দিকে উদয় হয়, দিবা বা দিন হয়। আমাদের মধ্যে যেকোন অনুভূতি বা জ্ঞান যখন প্রকাশ
পায়, তার মূলে আছে এই পূর্ব্ব দিক বা প্রাচী-প্রাণ। এই উদয়ের যে দেবতা বা চেতনার
ব্যবহারময় ব্যক্তিত্ব, তিনি আদিত্য বা মিত্র, তিনি পূর্ব্ব দিকের দেবতা, এবং তাঁর প্রতিষ্ঠা
চক্ষুতে; চক্ষু প্রতিষ্ঠিত রূপ সকলে, রূপ সকল প্রতিষ্ঠিত হৃদয়ে। (বৃহদারাণ্যক
উপনিষদ্‌  মন্ত্র ৩।৯।২০ দ্রষ্টব্য।)
1/23/25, 11:13 PM দধীচি উক্ত মধুবিদ্যা। বৃহদারণ্যক উপনিষদ্‌ দ্বিতীয় অধ্যায় পঞ্চম ব্রাহ্মণ। (Brihadaranyaka Upanishad Second Chapter Fifth Brahmin in Bengali languag…
https://upanishadinbengali.blogspot.com/2025/01/brihadaranyaka-upanishad-second-chapter.html 18/67

প্রাণ যখন দক্ষিণ নামক যে বেদন বা অনুভূতি তা প্রকাশ করেন, তাই হয় দক্ষিণ দিক্‌। যে
দিক্‌ দিয়ে আমরা কর্ম্ম করি, আমরা সক্রিয়তার দ্বারা নিজেদেরকে প্রসারিত করি, দাক্ষিণ্যময়
হই, তা দক্ষিণ দিক্‌। আবার যে দিক্‌ দিয়ে, বা যে প্রবণতা সম্পন্ন হয়ে, প্রাণ আমাদের সংযমন
বা যমন করছেন তা দক্ষিণ দিক্‌। এই যমনের দ্বারা আমরা সুসংযত হচ্ছি; সুখ স্বরূপ, মধুময়
যে আত্মা তাঁতে যত্নশীল হচ্ছি, তাঁর প্রতি আমাদের গতি সুনির্দিষ্ট হচ্ছে, অর্থাৎ আমরা মুক্তি
বা অভ্যুদয়ের পথে অগ্রসর হচ্ছি।
বৃহদারাণ্যক উপনিষদ্‌ মন্ত্র ৩।৯।২১ মন্ত্রে উক্ত হয়েছে, দক্ষিণ দিকের যে দেবতা, তিনি যম;
যম প্রতিষ্ঠিত যজ্ঞে, যজ্ঞ প্রতিষ্ঠিত দক্ষিণাতে, দক্ষিণা প্রতিষ্ঠিত শ্রদ্ধাতে, শ্রদ্ধা প্রতিষ্ঠিত হৃদয়ে।
প্রাণ যখন পশ্চিম বা প্রতীচী নামক যে বেদন বা অনুভূতি তা প্রকাশ করেন, তাই
হয় পশ্চিম দিক্‌, যে দিকে অস্ত হয়। যে দিকে রূপগুলি বিদ্রাবিত হয়ে থাকে, এবং যে দিক্‌
থেকে উঠে এসে রূপগুলি পূর্ব্ব দিকে প্রকাশ পায়, সেইটি পশ্চিম বা প্রতীচী দিক্‌। রূপ সকল ঐ
দিকে অস্ত যায়।
আমরা আগে ২।৩ অংশে যে অপ্‌ বা দিব্য জলের কথা বিবৃত করেছি, এই পশ্চিম দিক্‌ হল
সেই দিব্য জলের রাজ্য এবং তার দেবতা বরুণ। আবৃত করে রাখেন বলে এঁর নাম বরুণ। এই
আবরণ-ই অপ্‌ বা জল, যা প্রাণের বসন। অন্য সকল কিছু কে আবৃত করেন 'বরুণ', আর
যেটি প্রকাশ পাবার কথা তাকে প্রকাশ করেন মিত্র (আদিত্য)। এই দুই যুগল দেবতা বেদে
মিত্রা-বরুণ নামে প্রসিদ্ধ। বৃহদারাণ্যক উপনিষদের ৩।৯।২২।মন্ত্রে বলা হয়েছে যে পশ্চিম
দিকের দেবতা হলেন বরুণ, বরুণ প্রতিষ্ঠিত অপে, অপ্‌ প্রতিষ্ঠিত রেততে, এবং রেত প্রতিষ্ঠিত
হৃদয়ে। উপরে ২।৩ অংশে অপ্‌, বরুণ এবং রেত-র বিষয়ে বলা হয়েছে। 
প্রাণ যখন উত্তর বা উদীচী নামক যে বেদন বা অনুভূতি তা প্রকাশ করেন, তাই
হয় উত্তর দিক্‌। উত্তর অর্থে, যে দিক্ দিয়ে আমরা উৎ-ক্ষেত্রে বা ঊর্ধ্ব ক্ষেত্রে উঠে যাই। আমরা
মর্ত্তে যাই করি, যে ভাবেই থাকি, তার প্রত্যেকটির একটি দিব্যাংশ আছে। দ্যুলোকের যে
অন্তবান্‌ প্রকাশ তাই মর্ত্ত। মর্ত্ত হয়েও, সান্ত হয়েও, আমরা অনন্ত, আসীম, অমৃত।
আমরা মর্ত্তে যাই করছি, তার একটি অংশ সাথে সাথে স্বর্গে উঠে যাচ্ছে বা তার দৈব অংশ
দ্যুলোকে ধরা থাকছে।এর নাম, উত্তর দিকে যাওয়া বা উত্তরণ। বৃহদারাণ্যক উপনিষদের ৩।৯।
২৩ মন্ত্রে বলা হয়েছে যে, উত্তর দিকের দেবতা হলেন 'সোম', সোম প্রতিষ্ঠিত দীক্ষাতে, দীক্ষা
সত্যে প্রতিষ্ঠিত, এবং সত্য হৃদয়ে প্রতিষ্ঠিত।
সোম অর্থে 'সহ উমা' বা 'উময়া সহ'। যিনি উৎক্ষেত্রের মাত্রা দেন বা আমাদের দৈব ভোগের
ভোক্তা করেন, তিনি উমা। যে ভোগ, যে অনুভূতিরাশি অনন্ত, অবাধ, তাই সোম, যা দ্যুলোকে
ভোগ্য। তাই সোমালয় উত্তরে বা উৎক্ষেত্রে। আর এই দিব্যক্ষেত্রে যে কাল বা ঈক্ষণ বা চিন্ময়
আত্মার দৃষ্টি-শক্তির নিয়ন্ত্রণ চলেছে, তাই দিব্য-ঈক্ষণ বা দীক্ষা। আমরা আগে সত্য এবং
দৃষ্টির কথা উল্লেখ করেছি  ['ব্রহ্মখণ্ড/সারাংশ', এবং ৫।৩।২ অংশ (আদিত্য এবং চাক্ষুষ
পুরুষ) দ্রষ্টব্য, এবং বৃহদারণ্যক উপনিষদের দ্বিতীয় খণ্ডের তৃতীয় ব্রাহ্মণ দ্রষ্টব্য।]। যিনি
সত্যস্বরূপ তাঁর দর্শন থেকে রূপ সকল সৃষ্টি হয়েছে। তাই এই বিশ্ব সত্য। সত্য এবং চক্ষুর
বিষয়ে বৃহদারণ্যক উপনিষদের একটি মন্ত্র (২।৩।৪)  উদ্ধৃত করা হল : "অথ অধ্যাত্মম্‌
1/23/25, 11:13 PM দধীচি উক্ত মধুবিদ্যা। বৃহদারণ্যক উপনিষদ্‌ দ্বিতীয় অধ্যায় পঞ্চম ব্রাহ্মণ। (Brihadaranyaka Upanishad Second Chapter Fifth Brahmin in Bengali languag…
https://upanishadinbengali.blogspot.com/2025/01/brihadaranyaka-upanishad-second-chapter.html 19/67

(অনন্তর অধ্যাত্ম ক্ষেত্রে) : ইদম্‌ এব মূর্ত্তং (ইহাই মূর্ত্ত) যৎ (যা) অন্যৎ* প্রাণাৎ চ (প্রাণের
থেকে অন্য* এবং ) যঃ বা অয়ম্‌ (যে এই) অন্তঃ (অন্তরে) আত্মন্‌ (আত্মাতে) আকাশঃ
(আকাশ); এতৎ (ইহা) মর্ত্ত্যম্‌ (মর্ত্ত্য) এতৎ স্থিতম্ (ইহা স্থির) এতৎ সৎ (ইহা সৎ/অস্তিত্ব
সম্পন্ন); তস্য এতস্য মূর্ত্তস্য (সেই এই মূর্ত্তের) এতস্য মর্ত্তস্য (এই মর্ত্ত্যের) এতস্য (এই)
স্থিতস্য (স্থাণুর) এতস্য সতঃ (এই সতের; এই সত্ত্বাবানের) এষঃ রসঃ (এই রস) যৎ চক্ষুঃ
(যা চক্ষু) ; সতঃ হি (সত্তাশীলতাই/অস্তিত্বময়তাই) এষঃ (এঁর রস)---অনন্তর অধ্যাত্ম ক্ষেত্রে
: ইহাই মূর্ত্ত যা প্রাণ এবং যা এই অন্তর-আত্মাতে আকাশ, তার থেকে অন্য; ইহা মর্ত্ত্য ইহা
স্থির, ইহা সৎ; সেই এই মূর্ত্তের, এই মর্ত্ত্যের, এই স্থাণুর, এই সতের (এই সত্ত্বাবানের) এই
রস, যা চক্ষু; সত্তাশীলতাই (অস্তিত্বময়তাই) এঁর রস।" তাই দীক্ষা সত্যে প্রতিষ্ঠিত।
(*'অন্য' অর্থে প্রাণের বা অনের যমিত হওয়া (অন+য), স্থির,সত্ত্বাবান্‌, অস্তিত্ব সম্পন্ন
হওয়া।) 
যা ধ্রুব দিক্‌ তার দেবতা অগ্নি। অগ্নি মানে প্রাণ বা প্রাণাগ্নি, এবং তাঁর শক্তি বাক্‌।
 বৃহদারাণ্যক উপনিষদের ৩।৯।২৪ মন্ত্রে বলা হয়েছে যে ধ্রুব দিকের দেবতা হলেন অগ্নি,
অগ্নি প্রতিষ্ঠিত বাকে, বাক্‌ হৃদয়ে প্রতিষ্ঠিত।
সর্ব্ব দিক্‌ই প্রাণ, তাই যে যে দিকেই যাক, তার সাথে এই ধ্রুব দিক থাকে। অপরিণামী আত্মা,
যিনি নিজের থেকে নিজে কখনো বিচ্যুত হননা, যাঁর থেকে প্রাণ উৎপন্ন হন, প্রাণ বা অগ্নি
তাঁতেই প্রতিষ্ঠিত; তিনি যে দিকে তা ধ্রুব দিক্‌।
সব কিছুর প্রতিষ্ঠা মহাপ্রাণের হৃদয়ে, কেননা , হৃদয়ের দ্বারাই প্রাণ সবাইকে ধারণ করেন।
৬।৩।২। দিক্‌ এবং দেশ। দিগ্বাসীনি।
যখন কোন 'দশা' বা একটি বিশেষ অবস্থা রচিত হয়, তার নাম  
'দেশ'। প্রাণের নিয়ন্ত্রণকারী দিক্‌গুলির দ্বারা দেশ, বা একটি অবস্থা, বা একটি স্থিতি নির্মিত
হয়। দিক্‌গুলি যে সান্ত, পরিমিত একটি রূপ রচনা করে, তা দেশ।
দিক্‌ অনন্ত। এই জন্য বৃহদারাণ্যক উপনিষদের ৪।১।৫ মন্ত্রে বলা হয়েছে যে দিক্‌ সকল
অনন্ত।
৬।৩।৩। অবিছিন্ন দিক্‌।
বৃহদারাণ্যক উপনিষদের ২।১।১১ মন্ত্রে উক্ত হয়েছে যে দিক্‌সমূহে যে পুরুষ রয়েছেন, তিনি
দ্বিতীয় এবং অনপগ (ন অপগ----দূরে যায় না, বিচ্ছিন্ন হয় না); অর্থাৎ যিনি দিক্‌সমূহ,
তিনি যা দ্বিতীয়, তাকে তাঁর থেকে বিচ্ছিন্ন হতে দেননা। আমরা আগে বায়ু দেবতার কথা
বলেছি; এই আত্মা বায়ু বা সূত্রাত্মা রূপে আত্মতন্তুর জাল বুনেছেন সারা বিশ্বে, আর তাই ইনি
নিজেকে অনন্তে অনন্তে বহু করে, নিজেকে দ্বিতীয় করেও, প্রতি দ্বিতীয় হওয়া সত্তাকে নিজের
সাথেই যুক্ত রাখেন। (উপরে ৪।৩ অংশ দ্রষ্টব্য।) বৃহদারাণ্যক উপনিষদের ২।১।১১ মন্ত্রের
থেকে একটি অংশ নীচে উল্লেখ করলাম :
সঃ হ উবাচঃ গার্গ্যো (সেই গর্গ বংশীয়) [বালাকি] বললেন) যঃ এব (যিনি এই) অয়ম্‌ (এই)
দিক্ষু (দিক্‌ সমূহে স্থিত) পুরুষঃ (পুরুষ) এতম্‌ এব (এনাকেই) অহম্‌ (আমি) ব্রহ্ম উপাস
1/23/25, 11:13 PM দধীচি উক্ত মধুবিদ্যা। বৃহদারণ্যক উপনিষদ্‌ দ্বিতীয় অধ্যায় পঞ্চম ব্রাহ্মণ। (Brihadaranyaka Upanishad Second Chapter Fifth Brahmin in Bengali languag…
https://upanishadinbengali.blogspot.com/2025/01/brihadaranyaka-upanishad-second-chapter.html 20/67

(ব্রহ্ম বলে উপাসনা করি) ইতি; সঃ হ উবাচ অজাতশত্রু (সেই অজাতশত্রু বললেন) মা
(আমাকে) মা (না)  এতস্মিন্‌ (এই বিষয়ে) সংবদিষ্ঠা (উপদেশ দিও); দ্বিতীয়ঃ (দ্বিতীয়)
অনপগ (ন অপগ----দূরে যায় না, বিচ্ছিন্ন হয় না),  ইতি বা অহম্‌ এতম্‌ উপাস ইতি (আমি
এনাকে এইরূপে উপাসনা করি); সঃ যঃ (সে যে) এতম্‌ (এঁকে) এবম্‌ (এই রূপে) উপাস্তে
(উপাসনা করেন) দ্বিতীয়বান্‌ হ ভবতি (দ্বিতীয়বান্‌ হন) ন (না) অস্মাৎ (এঁর থেকে) গণঃ
(স্বজন/বান্ধব গণ) ছিদ্যতে (বিছিন্ন )   ----সেই গর্গ বংশীয় [বালাকি] বললেন, 'যিনি এই
দিক্‌ সমূহে স্থিত পুরুষ, এনাকেই আমি ব্রহ্ম বলে উপাসনা করি'। (তখন) সেই অজাতশত্রু
বললেন, 'আমাকে এই বিষয়ে উপদেশ দিও না; অনপগ (দূরে যায় না, বিচ্ছিন্ন হয় না)---
 আমি এনাকে এইরূপে উপাসনা করি। সে, যে এঁকে, এই রূপে উপাসনা করেন, (তিনি)
দ্বিতীয়বান্‌* হন, এঁর থেকে স্বজন/বান্ধব-গণ বিছিন্ন হয় না'।
(* দ্বিতীয়বান্‌* হওয়া মানে, নিজেকেই দ্বিধা বিভক্ত দেখা, নিজেকেই দ্বিতীয়রূপে ব্যাপ্ত দেখা।)
আমরা প্রত্যেকে আত্মার বা প্রাণের একটি বিশেষ দিক্‌। আর এই দিক্‌ সমূহের দ্বারাই, 
দিগ্বাসীনির দ্বারাই, আমরা আমাদের কালাবর্ত্তনের মধ্যে, এঁর সাথে অবিচ্ছিন্ন ভাবে যুক্ত
থাকি। কালের আবর্ত্তনে, যতই অজ্ঞানতার অন্ধকারের মধ্যে বা আত্মজ্ঞানহীন অবস্থার মধ্যে
আমরা পতিত হই, এই দিক্‌ সকলের মধ্য দিয়ে আত্মার ঈশিত্ব বা নিয়ন্ত্রণ অব্যাহত থাকে;
এই নিয়ন্ত্রণের দ্বারাই আমরা অজ্ঞানতার তমসা থেকে বিমুক্ত হই। 
৬।৩।৪। শ্রোত্র এবং দিক্‌।
আমরা পূর্ব্বে দেশ এবং দিকের কথা ৬।৩।২ অংশে আলোচনা করেছি। দিকের দ্বারা সব
নির্দিষ্ট হয়, একটি নির্দিষ্ট রূপ, একটি নির্দিষ্ট নাম বা সংজ্ঞা রচিত হয়। তাই যা কিছু সত্তাবান্‌
তার নাম এবং রূপ আছে। এই জন্য উপনিষদে উক্ত হয়েছে, 'প্রাণো বা অমৃতম্‌ নাম রূপে
সত্যং তাভ্যাম্‌ অয়ম্‌ প্রাণশ্ছন্ন' : প্রাণ-ই অমৃত, নাম এবং রূপ সত্য; তাদের দ্বারা (নাম এবং
রূপের দ্বারা) এই প্রাণ আচ্ছাদিত। (বৃহদারণ্যক উপনিষদ্‌, মন্ত্র ১।৬।৩ দ্রষ্টব্য।) 
এই নাম রূপের মূলে আছে মহাপ্রাণের কাম (কামনা) এবং প্রবণতা। তাই রূপের মূলে যে দিক্‌
সকল আছে তা অরূপ, তা সেই রূপেরও রূপ। আর নামের মূলে যে দিক্‌ সকল আছে তা
নামেরও নাম, সংজ্ঞারও সংজ্ঞা, শব্দেরও শব্দ; তা প্রাণের শবাদত্মক বেদন বা বেদ, যার নাম
'শ্রুতি'। 
আমাদের মধ্যে সমস্ত শব্দ বা শব্দাত্মক অনুভূতি যেখানে প্রতিষ্ঠিত, তার নাম শ্রোত্র।
বাইরের এই যে নাম-রূপময় ভৌতিক বিশ্ব, তা আমাদের মধ্যে শব্দাত্মক হয়ে বর্ত্তমান।
আমাদের প্রতিটি বোধের বা অনুভূতির একটি শব্দময় চেহারা আছে; আম, ফুল, গরু,
আকাশ, ইত্যাদি সবই শব্দের আকারে আছে আমাদের মধ্যে। এই যে শব্দগুলি, তা শোনাই
অনুভূতিময় হওয়া। এই অনুভূতি শ্রুতি বা বেদ হয়ে যায় তখনই, যখন উপলব্ধি হয় যে এই
সব অনুভূতি মহাপ্রাণ বা পরমচিৎ স্বরূপ যিনি, তাঁরই বাক্য, তাঁরই রূপ বা বেদন। এই শ্রুতিই
আমাদের মধ্যে প্রতিশ্রুত হচ্ছে। বাইরের গাছটি শ্রুতি বা রূপ, আর তার থেকে প্রতিজনে তার
সংস্কার অনুযায়ী গাছের যে অনুভূতি এবং রূপ ফুটছে, তাই প্রতিশ্রুতি এবং প্রতিরূপ। এই
জন্য 'শ্রোত্রঃ প্রতিশ্রুৎকঃ' এই শব্দদুটি এই মন্ত্রে উল্লেখ করা হয়েছে। শ্রোতা এবং প্রতিশ্রোতা,
এই এক অমৃতময় আত্মাই। 
1/23/25, 11:13 PM দধীচি উক্ত মধুবিদ্যা। বৃহদারণ্যক উপনিষদ্‌ দ্বিতীয় অধ্যায় পঞ্চম ব্রাহ্মণ। (Brihadaranyaka Upanishad Second Chapter Fifth Brahmin in Bengali languag…
https://upanishadinbengali.blogspot.com/2025/01/brihadaranyaka-upanishad-second-chapter.html 21/67

৭ম মন্ত্র।
অয়ং চন্দ্রঃ সর্ব্বেষাং ভূতানাং মধু অস্য চন্দ্রস্য সর্ব্বাণি ভূতানি মধু যশ্চায়স্মিংশ্চন্দ্রে
তেজোময়ো'মৃতময়ঃ পুরুষঃ যশ্চায়মধ্যাত্মং মানসস্তেজোময়ো'মৃতময়ঃ পুরুষঃ অয়মেব স
যো'য়মাত্মা ইদমৃতম্‌ ইদং ব্রহ্ম ইদং সর্ব্বম্‌।।৭।
৭।১।অন্বয়-অর্থ।
অয়ম্‌ (এই) চন্দ্রঃ (চন্দ্র) সর্ব্বেষাং (সকল) ভূতানাং (ভূত সকলের) মধু (মধু) অস্য চন্দ্রস্য
(এই চন্দ্রের) সর্ব্বাণি (সকল) ভূতানি (ভূত) মধু (মধু) যঃ চ অয়ম্‌ (যে এই) অস্মিন্‌
(এই) চন্দ্রে (চন্দ্রে) তেজোময়ঃ (তেজোময়) অমৃতময়ঃ (অমৃতময়) পুরুষঃ (পুরুষ), যঃ চ
অয়ম্‌ (এবং যে এই) অধ্যাত্মং (অধ্যাত্মে, অন্তরে) মানস (মনে স্থিত; মনোময়) তেজোময়ঃ
(তেজোময়) অমৃতময়ঃ (অমৃতময়) পুরুষঃ (পুরুষ), অয়ম্‌ এব (এই-ই) স (সে) যঃ (যে)
অয়ম্‌ (এই) আত্মা (আত্মা); ইদম্‌ (ইহা) অমৃতম্‌ (অমৃত), ইদং (ইহা) ব্রহ্ম (ব্রহ্ম), ইদং
(ইহা) সর্ব্বম্‌ (সব)। 
৭।২।অর্থ।
এই চন্দ্র ভূত সকলের মধু, সকল ভূত এই চন্দ্রের মধু। যে এই,  এই চন্দ্রে তেজোময় অমৃতময়
পুরুষ, এবং যে এই অধ্যাত্মে (অন্তরে) মানস (মনে স্থিত; মনোময়) তেজোময় অমৃতময়
পুরুষ, এই-ই সে যে এই আত্মা; ইহা অমৃত, ইহা ব্রহ্ম, ইহা সব।
৭।৩।সংক্ষিপ্ত ব্যাখ্যা এবং নিরুক্তি।
যা কিছু এই স্রষ্টা সৃষ্টি করেছেন, ইনি তাকেই আহার করে, নিজের সাথে একসা করছেন। এ
কথা আমরা অদিতি এবং আদিত্যের প্রসঙ্গে উপরে  ৫।৩ অংশে উল্লেখ করেছি। এই যে
একসা হবার কেন্দ্র, যেখানে গ্রসন চলেছে, তাই আদিত্য, এবং আমাদের বহিরাকাশে তিনি
সূর্য, যাঁর থেকে কাল এবং রূপ বর্ষিত হচ্ছে। সর্ব্ব প্রকাশকে, রূপকে আবার ইনি গ্রসন করে
পান করছেন, এইটি তাঁর 'চন্দ্র' স্বরপ। পান অর্থে, রূপ আর নামকে বিদ্রাবিত করে নিজের
সাথে একসা করা, নিজের অঙ্গের রস করে নেওয়া। সূর্যের থেকে যে রূপ সকল ঠিকরে পরছে,
চন্দ্রে তাই বিদ্রাবিত হয়ে স্নিগ্ধ কান্তি হয়েছে। আদিত্য যে রূপ প্রকাশ করছেন, তা তিনি
দেখছেন। এই চিন্ময়ের দেখা থেকেই রূপ সৃষ্টি হয়। আবার সেই রূপই ইনি পান করছেন, চমন
করছেন, সোম পান করছেন অর্থাৎ এই দেখা (দ্র) আর চমন যাঁর ধর্ম্ম, তিনি চন্দ্র (চম্‌+দ্র)।
এই জন্য বলে হয়েছে, 'রবি মধ্যে স্থিতঃ সোমঃ'। পান করেন বলে, চন্দ্র বা সোমের বর্ণ কে
পীত বলা হয়। এই যে চেতনার ভোগতৃত্ব, ইনি 'সোমপায়ী ইন্দ্র' যিনি দেখছেন এবং আর ভোগ
করছেন। ইন্দ্র মানে 'ইদং দ্রষ্টা'। যা কিছু, যাকে 'ইদং' বা 'ইহা' বা 'এই' বলে সম্বোধন করা
যায়, সেই সকল কিছু ইনি দেখছেন এবং ভোগ করছেন। আমরা ইন্দ্র, কিন্তু আমাদের দেখার
অনুভূতি মৃত্যুর দ্বারা সীমিত, বিছিন্ন।
৭।৩।১। মন এবং চন্দ্র।
1/23/25, 11:13 PM দধীচি উক্ত মধুবিদ্যা। বৃহদারণ্যক উপনিষদ্‌ দ্বিতীয় অধ্যায় পঞ্চম ব্রাহ্মণ। (Brihadaranyaka Upanishad Second Chapter Fifth Brahmin in Bengali languag…
https://upanishadinbengali.blogspot.com/2025/01/brihadaranyaka-upanishad-second-chapter.html 22/67

মন = ম্‌ (ম) +অন : অন বা প্রাণ যেখানে মর্ত্ত বা মূর্ত্ত হন, তা মন। যা কিছু মনে সৃষ্ট হয়,
তার মান নির্ণয় করা যায়, অর্থাৎ তা প্রমেয়। ভৌতিকতা মনেই উপলব্ধ হয়। মন সংকল্প করে,
আবার মন বিকল্পও করে, অর্থাৎ একটি সংকল্প থেকে অন্য সংকল্পে যায়। চন্দ্র যেমন সদা
পৃথিবীকে--পৃথিবীর জলরাশিকে উদ্বেলিত করছে, সে রকমই এই মন সংকল্প এবং বিকল্পের
দ্বারা আমাদের ভৌতিক স্থিতিকে সর্ব্বদা চঞ্চল করে রেখেছে, আমাদের শরীরের সকল রসকে
নিয়ন্ত্রণ করছে।
যেখানে আমরা কামময়, অনবরত শব্দ,স্পর্শ,রূপ,রস,গন্ধের জন্য উন্মুখ, সেইটি আমাদের
অধ্যাত্মে প্রাণের ক্ষেত্র; এর অন্য নাম হৃদয়, মর্ম্ম। প্রাণের কামনা অনুসারে মন সংকল্পময়
হচ্ছে। মনের সংকল্প অনুসারে ইন্দ্রিয়রা পরিচালিত হচ্ছে। এই স্থূল বা ভৌতিক বিশ্বকে আমরা
যেখানে অনুভব করছি, তা মন। আবার এই মনেই এই ভৌতিকতা হারিয়ে, এই ভৌতিক
বিশ্বের সকল সত্ত্বা শব্দের বা নামের আকারে থাকে। মনেই আমরা কালগত এবং দেশগত
ব্যবধান বোধ করি, আবার মনেই আমরা অতীত, ভবিষ্যৎ এবং বর্ত্তমানকে পাই, দূর এবং
নিকট উভয়কেই এই মনেই পাই; তখন আর কালগত এবং দেশগত পার্থক্য থাকে না। এই যে
ভৌতিকতা বর্জ্জিত মন, তা অন্তরীক্ষ, যেখানকার আলো চন্দ্রজ্যোতি, যেখানে সমস্ত কিছু শব্দ
হয়ে গেছে, যা কিছু দৃশ্য ছিল, তা হয়ে গেছে শ্রুতি। আমরা দিক্‌ এবং শ্রুতির কথা ৬।৩।৪
অংশে বলেছি। আমরা এই অংশে, রস, শ্রুতি এবং চন্দ্রমার কথা বলেছি। অপ্‌ (রস), দিক্‌-
সমূহ, নক্ষত্র এবং চন্দ্রমা, স্বয়ংপ্রকাশ আত্মা বা প্রাণাগ্নির চারটি তনু। এই প্রাণাগ্নির নাম
দক্ষিণাগ্নি বা অন্ব-আহার্য-পচন-অগ্নি। এঁর দ্বারাই অন্ন বা আহার্য, আমাদের সাথে এক হয়,
আমাদের  হজম হয়; শব্দ,স্পর্শ,রূপ,রস,গন্ধ এই প্রাণাগ্নির দ্বারাই আমাদের সাথে এক হয়ে
আমাদেরকে পরিণত করছে, গঠণ করছে, যমন করছে। এই জন্য এই অন্তরীক্ষে যিনি আছেন,
তিনি চন্দ্রমা, তিনি দৈব-মন। এই দৈব-মনের জ্যোতিকে বা অন্তর্জ্যোতিকে প্রাণেরও জ্যোতি
বলা হয়; এ সেই প্রাণ, যিনি চন্দ্রমার অন্তরস্থ। আমাদের মন এই দৈব মনের অন্তর্গত।
দক্ষিণাগ্নি বা অন্ব-আহার্য-পচন-অগ্নির বৃহদারণ্যক উপনিষদোক্ত মন্ত্রটি উদ্ধৃত করলাম : অথ
হ এনম্‌ (অনন্তর একে) অন্বাহার্যপচনঃ (অন্ব-আহার্য-পচন) অনুশশাসঃ (উপদেশ দিলেন)
আপঃ (আপ্‌ ) দিশঃ (দিক্‌সমূহ) নক্ষত্র (নক্ষত্র) চন্দ্রমা (চন্দ্রমা) ইতি (ইহাই) য এষঃ (যে
এই) চন্দ্রমসি (চন্দ্রমাতে) পুরুষঃ (পরুষ রূপে) দৃশ্যতে (দৃষ্ট হয়) সঃ অহম্‌ অস্মি (সে আমি
হই) সঃ এব (সেই-ই) অহম্‌ অস্মি (আমি হই) ইতি : অনন্তর একে অন্ব-আহার্য-পচন
(অগ্নি) উপদেশ দিলেন : আপ্‌, দিক্‌সমূহ, নক্ষত্র, চন্দ্রমা, ইহাই (আমার তনু); যে এই
চন্দ্রমাতে পুরুষ রূপে দৃষ্ট হয় সে আমি হই, সেই-ই আমি।(ছান্দোগ্য উপনিষদ্‌ মন্ত্র ৪।১২।১।)
৭।৩।২। মন এবং দৈব চক্ষু।
ছান্দোগ্য উপনিষদে মনকে দৈব চক্ষু বলা হয়েছে। মন্ত্রটি (ছান্দোগ্য উপনিষদ্‌ মন্ত্র ৮।১২।৫)
নীচে উদ্ধৃত করলাম : 
অথ (অনন্তর) যঃ (যে) বেদ (অনুভব করে) ইদং (ইহা/এইটি) মন্বানি (মনন করতে পারি)
ইতি সঃ (সে) আত্মা (আত্মা) মনঃ (মন) অস্য (এর) দৈবম্‌ (দৈব) চক্ষুঃ (চক্ষু) সঃ বা এষঃ
(সেই এই আত্মা) এতেন দৈবেন চক্ষুষা (এই দৈব চক্ষুর দ্বারা) মনসা (মন দ্বারা) এতান্‌
কামান্‌ (এই কাম্য সকলকে) পশ্যন্‌ (দর্শন করে) রমতে (রমন করেন; আনন্দ ভোগ করেন)
1/23/25, 11:13 PM দধীচি উক্ত মধুবিদ্যা। বৃহদারণ্যক উপনিষদ্‌ দ্বিতীয় অধ্যায় পঞ্চম ব্রাহ্মণ। (Brihadaranyaka Upanishad Second Chapter Fifth Brahmin in Bengali languag…
https://upanishadinbengali.blogspot.com/2025/01/brihadaranyaka-upanishad-second-chapter.html 23/67

যঃ (যা) এতে (এই) বহ্মলোকে (বহ্মলোকে) : অনন্তর যে ইহা অনুভব করে 'মনন করতে
পারি' সে আত্মা; মন এর দৈব চক্ষু; সেই এই আত্মা এই দৈব চক্ষুরূপ মন দ্বারা এই কাম্য
সকলকে দর্শন করে রমন করেন (আনন্দ ভোগ করেন) যা এই বহ্মলোকে (বর্ত্তমান)। 
৭।৩।৩। প্রাণ ও মনের জ্যোতি।
এই স্বয়ংপ্রকাশ আত্মা যেখানে রূপ প্রকাশ করছেন, সেখানে ইনি বহির্মুখী; উপনিষদে এঁকে
বহিঃ-প্রজ্ঞ বলে বর্ণনা করেছেন। (মাণ্ডুক্য উপনিষদ্‌, তৃতীয় মন্ত্র দ্রষ্টব্য।) এই বহিঃ প্রকাশ এর
জ্যোতি হল আদিত্য-জ্যোতি; দিব্য যে মন, তাঁর জ্যোতি হল আদিত্য জ্যোতি। চেতনা যাই
প্রকাশ করেন, সেই প্রকাশটিকে জানেন, অনুভব করেন; এই প্রকাশটিকে জানা হল অন্তর্মুখী,
এবং এখানে আত্মা অন্তঃ-প্রজ্ঞ (মাণ্ডুক্য উপনিষদ্‌, চতুর্থ মন্ত্র দ্রষ্টব্য।) যে জ্যোতিতে এই
প্রকাশটিকে জানা হয় তা চন্দ্র-জ্যোতি। উপনিষদে বলা হয়েছে, এই চন্দ্রমা (বা চন্দ্র-জ্যোতি)
প্রাণেরই জ্যোতি। যেহেতু অন্তর্মুখী, তাই এখানে 'প্রাণ' বলা হয়েছে। সুতরাং মনের যে বহিঃ-
প্রজ্ঞতা, যে জ্যোতিতে বহিঃ বা বহির্বিশ্ব রচিত হচ্ছে,তা আদিত্য জ্যোতি; আর মনের যে অন্তঃ-
প্রজ্ঞতা, যে জ্যোতিতে চেতনা অনুভূতিময় হয়েছেন, অর্থাৎ যা হয়েছেন, নিজেকে তাই বলে
অনুভব করছেন, সেইটি ভোগাত্মক চেতনার বা প্রাণের জ্যোতি, বা চন্দ্রের জ্যোতি। 
বৃহদারণ্যক উপনিষদের ১।৫।১২ মন্ত্রটির প্রথম অংশটি নীচে উদ্ধৃত করা হল: অথ
(অনন্তর) এতস্য (এই) মনসঃ (মনের) দ্যৌঃ (দ্যৌ-দ্যুলোক) শরীরম্‌ (শরীর) জ্যোতিরূপম্‌
(জ্যোতিরূপ) অসৌ (ঐ) আদিত্য (আদিত্য) তৎ (তাই; সেই জন্য) যাবৎ এব (যতটাই; যত
দূর) মনঃ (মন) তাবতী (ততটাই; ততদূর) দৌঃ (দ্যৌ-দ্যুলোক) তাবান্‌ (ততদূর) অসৌ (ঐ)
আদিত্যঃ (আদিত্য): "অনন্তর এই মনের দ্যৌ (দ্যুলোক) শরীর, জ্যোতিরূপ ঐ আদিত্য;
তাই যত দূর মন (যতটাই মন) ততটাই দ্যৌ (দ্যুলোক) ততদূর (ততটাই) ঐ
আদিত্য..." 
এর অর্থ, যেখানে যেখানে মন,যেখানে যেখানে মনন করছেন,সেখানে সেখানে দ্যুলোক, অর্থাৎ
নিজেকে নিজে দোহন করে দ্বিতীয় হয়ে, রূপময় হয়ে প্রকাশ পাচ্ছেন; সেই প্রকাশগুলির
জ্যোতির্ময় কেন্দ্র হলেন আদিত্য, যিনি আবার প্রতি প্রকাশকে নিজেতে গ্রহণ করে নিজেতে,
পরম-আত্মস্বরূপে প্রত্যাবর্ত্তন করছেন, যার নাম কাল-হরণ বা পূর্ব্বে উল্লেখিত 'অদদানা যন্তি'।
বৃহদারণ্যক উপনিষদের ১।৫।১৩  মন্ত্রটির প্রথম অংশটি নীচে উদ্ধৃত করা হল: অথ
(অনন্তর) এতস্য প্রাণস্য (এই প্রাণের) আপঃ (আপ্‌) শরীরম্ (শরীর) জ্যোতিরূপম্‌
(জ্যোতিরূপ) অসৌ (ঐ) চন্দ্রঃ (চন্দ্র) তৎ (তাই) যাবান্‌ এব (যতটাই) প্রাণঃ (প্রাণ)  তাবত্য
(ততটাই) আপঃ (আপ্‌) তাবান্‌ (ততটাই) অসৌ (ঐ) চন্দ্রঃ (চন্দ্র) তে এতে (এই তারা---
বাক্‌, প্রাণ, মন) সর্ব্বে এব (সকলেই) সমাঃ (সমান) সর্ব্বে (সকলেই) অনন্তাঃ (অনন্ত)
.......অনন্তর এই প্রাণের আপ্‌ (দৈব জল) শরীর, জ্যোতিরূপ ঐ চন্দ্র; তাই যতটাই
প্রাণ ততটাই  আপ্‌, ততটাই ঐ চন্দ্র; এই তারা (বাক্‌, প্রাণ, মন) সকলেই সমান (একই
আত্মার স্বরূপ), সকলেই অনন্ত......।(বৃহদারণ্যক উপনিষদের ১।৫।১৩।)
এই যে পার্থিব জল, তা ঐ দৈব জলেরই (অপেরই) পার্থিব রূপ, আর তাই প্রাণের শরীর,
প্রাণের বসন। এই যে পার্থিব অগ্নি, সে প্রাণাগ্নি এবং তা বাকেরই জ্যোতি, আর এই পৃথিবী বা
ভৌতিক বিশ্বই বাকের শরীর। এই যে আমাদের আকাশে চন্দ্রমা, তা ঐ দৈব মনেরই প্রভা, যে
1/23/25, 11:13 PM দধীচি উক্ত মধুবিদ্যা। বৃহদারণ্যক উপনিষদ্‌ দ্বিতীয় অধ্যায় পঞ্চম ব্রাহ্মণ। (Brihadaranyaka Upanishad Second Chapter Fifth Brahmin in Bengali languag…
https://upanishadinbengali.blogspot.com/2025/01/brihadaranyaka-upanishad-second-chapter.html 24/67

দৈব মন সকল সৃজনের, সকল মনীষার ভূমি, সকল অনুভূতির রস বা সোম, আর যার শরীর
ঐ দ্যুলোক। 
৮ম মন্ত্র।
ইয়ং বিদ্যুৎ সর্ব্বেষাং ভূতানাং মধ্বস্যৈ বিদ্যুতঃ সর্ব্বাণি ভূতানি মধু যশ্চায়মস্যাং বিদ্য্যুতি
তেজোময়ো'মৃতময়ঃ পুরুষঃ যশ্চায়মধ্যাত্মং তৈজসস্তেজোময়ো'মৃতময়ঃ পুরুষঃ অয়মেব স
যো'য়মাত্মা ইদমৃতম্‌ ইদং ব্রহ্ম ইদং সর্ব্বম্‌।।৮।।
৮।১। অন্বয়-অর্থ।
ইয়ং (এই) বিদ্যুৎ (বিদ্যুৎ ) সর্ব্বেষাং (সকল) ভূতানাং (ভূত সকলের) মধু (মধু) অস্যৈ
(অস্যাঃ--এই) বিদ্যুতঃ (বিদ্যুতের) সর্ব্বাণি (সকল) ভূতানি (ভূত) মধু (মধু) যঃ চ অয়ম্‌ (যে
এই) অস্যাং (এই) বিদ্যুতি (বিদ্যুতে) তেজোময়ঃ (তেজোময়) অমৃতময়ঃ (অমৃতময়) পুরুষঃ
(পুরুষ), যঃ চ অয়ম্‌ (এবং যে এই) অধ্যাত্মং (অধ্যাত্মে, অন্তরে) তৈজসঃ (তেজে প্রতিষ্ঠিত)
তেজোময়ঃ (তেজোময়) অমৃতময়ঃ (অমৃতময়) পুরুষঃ (পুরুষ),অয়ম্‌ এব (এই ই) স (সে)
যঃ (যে) অয়ম্‌ (এই) আত্মা (আত্মা); ইদম্‌ (ইহা) অমৃতম্‌ (অমৃত), ইদং (ইহা) ব্রহ্ম
(ব্রহ্ম), ইদং (ইহা) সর্ব্বম্‌ (সব)। 
৮।২। অর্থ।
এই বিদ্যুৎ সকল ভূত সকলের মধু, এই বিদ্যুতের সকল ভূত মধু; যে এই, এই বিদ্যুতে
তেজোময় অমৃতময় পুরুষ, এবং যে এই অধ্যাত্মে (অন্তরে) তৈজস (তেজে প্রতিষ্ঠিত)
তেজোময় অমৃতময় পুরুষ, এই ই সে, যে এই আত্মা; ইহা অমৃত, ইহা ব্রহ্ম, ইহা সব।
৮।৩।সংক্ষিপ্ত ব্যাখ্যা এবং নিরুক্তি।
বিদ্যুৎ শব্দের অর্থ বিদ্যমানতার উৎকৃষ্ট অবস্থা। উপনিষদে বলে হয়েছে, '...বিদানাৎ (বিদীর্ণ
করে; খণ্ড করে) [তাই] বিদ্যুৎ (বিদ্যুৎ)......বিদ্যতি (খণ্ড করে) এনম্‌ (একে) পাপ্‌মনঃ
(পাপ থেকে)......'।(বৃহদারণ্যক উপনিষদ্‌ মন্ত্র ৫।৭।১ দ্রষ্টব্য।) 
পাপসকলকে যিনি বিদীর্ণ করেন, যিনি পাপসকল থেকে আমাদের বিচ্ছিন্ন করেন, খণ্ডিত
করেন, তিনি বিদ্যুৎ; দ্বিতীয়বোধ দূর হয়ে আত্মজ্ঞান বিকশিত হলে, বিদ্যমানতার যে উৎকৃষ্ট
অবস্থা তা প্রকাশ পায়।
 ৮।৩।১। বিদ্যুৎ, বাক্‌, বজ্র, ইন্দ্র।
এই যে আমরা পরিবর্ত্তিত হচ্ছি, এইটি যার দ্বারা হয়, তাকে আমরা কাল বলে অনুভব করি। এই
কলন বা কাল-বাহিত পরিবর্ত্তন, এর মূলে আছে আত্মার ঈশিত্ব; ইনি জানছেন, তাঁর সেই জানা বা
বোধক্রিয়ার দ্বারা সকল পরিবর্ত্তন সাধিত হচ্ছে। যার দ্বারা পরিবর্ত্তন হয়, তার নাম শক্তি এবং এঁর
বৈদিক নাম বাক্‌। (১।৩।১ অংশ দ্রষ্টব্য।)এই বাকের দ্বারাই দ্বিতীয়তা বা দ্বিতীয় সত্তা আত্মস্বরূপ
থেকে সৃষ্টি হয়, আবার এই বাকের দ্বারাই দ্বিতীয়তা আত্মস্বরূপে সমাপ্ত হয়। তাই এই বিদ্যুৎ
বাকেরই জ্যোতি বা দ্যুতি, যার দ্বারা দ্বিতীয়তা বা দিতিত্ব ধ্বংস হয়। তাই অদিতির তনয় ইন্দ্রর
অস্ত্র হল বজ্র। 
1/23/25, 11:13 PM দধীচি উক্ত মধুবিদ্যা। বৃহদারণ্যক উপনিষদ্‌ দ্বিতীয় অধ্যায় পঞ্চম ব্রাহ্মণ। (Brihadaranyaka Upanishad Second Chapter Fifth Brahmin in Bengali languag…
https://upanishadinbengali.blogspot.com/2025/01/brihadaranyaka-upanishad-second-chapter.html 25/67

৯ম মন্ত্র।
অয়ং স্তনয়িত্নুঃ সর্ব্বেষাং ভূতানাং মধ্বস্য স্তনয়িত্নোঃ সর্ব্বাণি ভূতানি
মধু যশ্চায়স্মিনস্তনয়িত্নৌ তেজোময়ো'মৃতময়ঃ পুরুষঃ যশ্চায়মধ্যাত্মং শাব্দঃ
সৌবরজোময়ো'মৃতময়ঃ পুরুষঃ অয়মেব স যো'য়মাত্মা ইদমৃতম্‌ ইদং ব্রহ্ম ইদং সর্ব্বম্‌।।
৯।১।অন্বয়-অর্থ।
অয়ম্‌ (এই) স্তনয়িত্নুঃ (স্তনয়িত্নু) সর্ব্বেষাং (সকল) ভূতানাং (ভূত সকলের) মধু (মধু)
অস্য স্তনয়িত্নোঃ (এই স্তনয়িত্নুর) সর্ব্বাণি (সকল) ভূতানি (ভূত) মধু (মধু) যঃ চ অয়ম্‌ (যে
এই) অস্মিন্‌ (এই) স্তনয়িত্নৌ (স্তনয়িত্নুতে) তেজোময়ঃ (তেজোময়) অমৃতময়ঃ (অমৃতময়)
পুরুষঃ (পুরুষ), যঃ চ অয়ম্‌ (এবং যে এই) অধ্যাত্মং (অধ্যাত্মে, অন্তরে) শাব্দঃ (শব্দময়)
সৌবর (সৌবর) তেজোময়ঃ (তেজোময়) অমৃতময়ঃ (অমৃতময়) পুরুষঃ (পুরুষ), অয়ম্‌ এব
(এই-ই) স (সে) যঃ (যে) অয়ম্‌ (এই) আত্মা (আত্মা); ইদম্‌ (ইহা) অমৃতম্‌ (অমৃত), ইদং
(ইহা) ব্রহ্ম (ব্রহ্ম), ইদং (ইহা) সর্ব্বম্‌ (সব)। 
৯।২। অর্থ।
এই স্তনয়িত্নু সকল ভূতের মধু, এই স্তনয়িত্নুর সকল ভূত মধু; যে এই, এই স্তনয়িত্নুতে
তেজোময় অমৃতময় পুরুষ, এবং যে এই অধ্যাত্মে (অন্তরে) শব্দময় সৌবর তেজোময় অমৃতময়
পুরুষ, এই-ই সে, যে এই আত্মা; ইহা অমৃত, ইহা ব্রহ্ম, ইহা সব। 
৯।৩।সংক্ষিপ্ত ব্যাখ্যা এবং নিরুক্তি।
স্তনয়িত্নু শব্দের অর্থ 'মেঘ-গর্জ্জন'। স্তনয়িত্নু শব্দটি স্তন্ ধাতু থেকে হয়েছে; স্তন্ অর্থে শব্দ
করা, গর্জ্জন করা। স্তন্ ধাতুটি তন্‌ ধাতু থেকে উৎপন্ন; তন্‌ শব্দের অর্থ তনুময় হওয়া,
নিজেকে বিস্তার করা; তন্‌ ধাতু থেকে তনয়, তনয়া, তনু শব্দগুলি হয়েছে। 
স্তন্ = সঃ + তন্‌ ---সে তনুময় হচ্ছে; বাক্‌ যখন আত্মবিস্তার করেন, নিজের তনু রচনা
করেন, তনু বা তনয়াকে সৃষ্টি করেন, তখন তাঁর যে ধ্বনি তার নাম 'স্তনন', এবং সেই ধ্বনি
যেখান থেকে সোমময় হয়ে, দুগ্ধ হয়ে বর্ষিত হয়, তার নাম স্তন। স্তন =আত্মস্তুতিময় অন
(প্রাণ)। আত্মস্তুতিময়, সন্তানবতী বাকের নাম স্তনয়িত্নু।
এই প্রসঙ্গে উল্লেখযোগ্য যে বাকের চারটি স্তন আছে, এবং তার দ্বারা তিনি দেবগণ, মনুষ্যগণ
এবং পিতৃগণকে পালন করেন; এই ধ্বনিময়,স্ব-দুগ্ধ দোহনকারিণী বাকের নাম ধেনু।
স্তন্যদায়িনী বাকের উপনিষদোক্ত  একটি মন্ত্র  উদ্ধৃত করলাম (বৃহদারণ্যক উপনিষদ্‌ , মন্ত্র
৫।৮।১) : 
" বাচং (বাক্‌কে) ধেনুম্‌ (ধেনুরূপে) উপাসীতঃ (উপাসনা করবে) 
তস্যাঃ (তাঁর) চত্বারঃ (চারটি) স্তনাঃ (স্তন) স্বাহাকারো (স্বাহাকার) বষট্‌কারো
(বষট্‌কার) হন্তকারঃ (হন্তকার) স্বধাকারঃ (স্বধাকার)
তস্যৈ (তার) দ্বৌ (দুইটি) স্তনৌ (স্তন) (পান করে) দেবা (দেবগণ) উপজীবন্তী (জীবনধারণ
করেন) স্বাহাকারং চ বষট্‌কারং চ (স্বাহাকার এবং বষট্‌কার [নামক])
হন্তকারং (হন্তকার [ নামক স্তন] মনুষ্যাঃ (মনুষ্যগণ) স্বধাকারং (স্বধাকার) পিতরঃ (পিতৃগণ)
1/23/25, 11:13 PM দধীচি উক্ত মধুবিদ্যা। বৃহদারণ্যক উপনিষদ্‌ দ্বিতীয় অধ্যায় পঞ্চম ব্রাহ্মণ। (Brihadaranyaka Upanishad Second Chapter Fifth Brahmin in Bengali languag…
https://upanishadinbengali.blogspot.com/2025/01/brihadaranyaka-upanishad-second-chapter.html 26/67

তস্যাঃ (তাঁর) প্রাণ (প্রাণ) ঋষভঃ (ঋষভ; বৃষ) মনো (মন) বৎসঃ
(বৎস) :  বাক্‌কে ধেনুরূপে উপাসনা করবে; তাঁর চারটি স্তন
:  স্বাহাকার, বষট্‌কার, হন্তকার, স্বধাকার।তার দুইটি স্তন (স্বাহাকার এবং বষট্‌কার)পান
করে দেবগণ জীবনধারণ করেন; 
হন্তকার (নামক স্তন) মনুষ্যগণ (পান করে জীবনধারণ করেন), স্বধাকার (নামক
স্তন) পিতৃগণ (পান করে জীবনধারণ করেন)। তাঁর (বাক্‌ রূপ ধেনুর), ঋষভ (বৃষ)
(হলেন) প্রাণ, মন (হল) বৎস (বাছুর)। (বৃহদারণ্যক উপনিষদ্‌ , মন্ত্র ৫।৮।১।)
৯।৩।১।ইন্দ্র ও স্তনয়িত্নু।
ইন্দ্র যিনি অদিতির সন্তান, তিনি জন্মেই মাতৃ স্তন্য দর্শন করেছিলেন, এবং সেই স্তন থেকে সোম
এবং দুগ্ধ পান করেছিলেন। (ঋক্‌ বেদ, তৃতীয় মণ্ডল ৪৮ সূক্তের মন্ত্রগুলি দ্রষ্টব্য।) যিনি সকল রপ
প্রকাশের দ্রষ্টা এবং ভোক্তা, তিনি ইন্দ্র, 'ইদং দ্রষ্টা' পুরুষ। যা কিছু ইদং, যা কিছু রূপ, যা কিছু ইদং
পদবাচ্য, তাকে ইনি আত্মপ্রকাশ বলে দেখছেন; এই অদিতির  তনুময় হওয়ার ইনি দ্রষ্টা; তাই ইনি
অদিতির তনয়। স্তনন থেকে রূপ এবং সোম প্রকাশ হচ্ছে। প্রকাশের দিকে 'রূপ' এবং ভোগ বা
অনুভূতির দিকে 'সোম'। 
এই জন্য 'ইন্দ্র কে?' , এই প্রশ্নের উত্তরে বলা হয়েছে যে, 'স্তনয়িত্নুই ইন্দ্র' । স্তনয়িত্নুঃ এব ইন্দ্রঃ 
(স্তনয়িত্নুই ইন্দ্র)। (বৃহদারণ্যক উপনিষদ্‌ ৩।৯।৬ মন্ত্র দ্রষ্টব্য।)
বাইরের আকাশে, যে মেঘ গর্জ্জন, তাও স্তনয়িত্নু। ধরিত্রীকে কে অন্নময় করতে এই প্রাণস্বরূপ
অদিতি বর্ষণ করছেন। ইনিই সম্বৎসর, অর্থাৎ বাৎসল্যময়ী হয়ে কাল বর্ষণ করছেন, তাতে আমরা
নবীন থেকে নবীনতর হয়ে জন্মাচ্ছি। এই জন্য বলা হয়েছে, 'আদিত্যাৎ জায়তে বৃষ্টিঃ বৃষ্টেরন্ন ততো
প্রজাঃ '----আদিত্য থেকে জাত হয় বৃষ্টি, বৃষ্টি থেকে অন্ন, অন্ন থেকে প্রজারা (জন্মায়)।
অন্ন হল পোষণময় প্রাণ বা অন। প্রশ্নোপ্নিষদের একটি মন্ত্র উদ্ধৃত করা হল: 
যদা ত্বমভিবর্ষস্যথেমাঃ প্রাণ তে প্রজাঃ।
আনন্দরূপাস্তিষ্ঠন্তি কামায়ান্নং ভবিষ্যতীতি।। (প্রশ্নোপনিষদ্‌, মন্ত্র ২।১০।)
অর্থ : যদা (যখন) ত্বম্‌ (তুমি) অভিবর্ষসি (অভিমুখে/উদ্দেশ্যে
 বর্ষণ কর) অথ (তখন) ইমাঃ (এরা) প্রাণ (হে প্রাণ) তে (তোমার) প্রজাঃ (প্রজারা)  আনন্দরূপাঃ
(আনন্দময় হয়ে)  তিষ্ঠন্তি (অবস্থান করে) কামায় (কাম্য) অন্নং (অন্ন) ভবিষ্যতি (ভবিষ্যতে হবে)
ইতি : যখন তুমি ([প্রজাদের] উদ্দেশ্যে বর্ষণ কর) অথ (তখন) ইমাঃ (এরা) প্রাণ (হে প্রাণ) তে
(তোমার) প্রজাঃ (প্রজারা) আনন্দরূপাঃ (আনন্দময় হয়ে)  তিষ্ঠন্তি অবস্থান করে)  কামায় (কাম্য)
অন্নং (অন্ন) ভবিষ্যতি ( ভবিষ্যতে হবে) ইতি (ইহা জেনে) : যখন তুমি প্রজাদের (প্রজা = যারা
প্রাণ থেকে জাত) উদ্দেশ্যে বর্ষণ কর, তখন এরা, হে প্রাণ,  তোমার প্রজারা কাম্য অন্ন
ভবিষ্যতে হবে এইটি জেনে আনন্দময় হয়ে অবস্থান করে।  (প্রশ্নোপনিষদ্‌, মন্ত্র ২।১০।)
আমরা যে কর্ম্মানুসারে মৃত্যুর পর প্রত্যাগমন করি, পুনরায় জন্মাই, তখন চন্দ্রলোক থেকে ক্রমান্বয়ে
আমরা আকাশ থেকে মেঘে প্রবেশ করি;  তারপর ঐ স্তনয়িত্নু জাত বর্ষণ থেকে, মেঘাম্বু থেকে বর্ষিত
হয়ে, পার্থিব শস্যাদির মধ্য দিয়ে, খাদ্যের মাধ্যমে পিতার শরীরে প্রবিষ্ট হই এবং শুক্রাকারে থাকি।
সেখান থেকে মাতৃগর্ভে সিঞ্চিত হই। যে যেমন কর্ম্ম গতিতে ফেরে, সে সেইরকম পুরুষের শরীরে
1/23/25, 11:13 PM দধীচি উক্ত মধুবিদ্যা। বৃহদারণ্যক উপনিষদ্‌ দ্বিতীয় অধ্যায় পঞ্চম ব্রাহ্মণ। (Brihadaranyaka Upanishad Second Chapter Fifth Brahmin in Bengali languag…
https://upanishadinbengali.blogspot.com/2025/01/brihadaranyaka-upanishad-second-chapter.html 27/67

প্রবিষ্ট হয়। নিকৃষ্টতর জীব, যেমন কীট, পতঙ্গ ইত্যাদির গতি অন্যরকম।  (বৃহদারণ্যক উপনিষদের
৬।২।১৬ মন্ত্র এবং, ছান্দোগ্য উপনিষদের ৫।১০।৬ এবং পরবর্ত্তী মন্ত্রগুলি দ্রষ্টব্য।) 
৯।৩।২।শাব্দ সৌবর পুরুষ।
শব্দাত্মিকা পয়স্বিনী যে বাক্‌, যিনি বাক্যের অন্তরে ভাব, আমাদের অন্তরে অনুভূতিরাশি, প্রাণ
প্রবাহ, যাঁর দ্বারা, বা যাঁর ঈশিত্বে আমরা সর্ব্বদা নিয়ন্ত্রিত, তাঁর সন্তান বাৎসল্যময়ী যে বাক্‌ বা
বেদন প্রকাশ, তা যেমন বহিরাকাশে বৃষ্টি হয়ে বর্ষিত হয়, তেমনি তা অনুভূতি রাশি হয়ে, প্রাণ হয়ে
আমাদের প্রাণময় করে রেখেছে। গর্ভধারিণী মার স্তনে যে দুগ্ধ সৃজিত এবং সেই স্তন থেকে 
নিঃসরিত হয়, তা এই বাকের দ্বারাই হয়। ইনিই এই মন্ত্রে উক্ত 'শাব্দঃ সৌবর তেজোময়ঃ
অমৃতময়ঃ পুরুষঃ'।
বাক্‌, যিনি আত্মশক্তি, যিনি শবত্ব দান (দা-ধাতু) করেন এবং শবত্বকে বিদীর্ণ (দো-ধাতু) বা
খণ্ডন করেন তিনি শব্দ। এই শব্দই বাক্‌, যাঁর দ্যুতি বিদ্যুৎ। বিদ্যুতের কথা আগে ৮।৩ এবং
৮।৩।১ অংশে বলা হয়েছে। শাব্দ অর্থে 'শব্দাত্মিকা'। 
শব্দের যে বহির্মুখী গতি, তার নাম 'রব'। আত্মশক্তি বাক্‌ আত্মাকে বা নিজেকে যে ভাবে বরণ
করেছেন,  প্রতি রব-ই , তার প্রকাশ। তাই এই বাকের দ্বারা আলিঙ্গিত আত্মার নাম 'বর'। সৌবর
অর্থে যিনি, সু-বর বা  সুখময় যে বরণ বা মিথুন, তাতে স্থিত পুরুষ। এই ভোগময় পুরুষই ইন্দ্র,
যিনি প্রত্যেক রব বা রূপ-প্রকাশের দ্রষ্টা এবং তার অন্তরে আত্ম-মিথুন ময়। 
১০ম মন্ত্র।
অয়মাকাশঃ সর্ব্বেষাং ভূতানাং মধ্বস্যাআকাশস্য সর্ব্বাণি ভূতানি
মধু যশ্চায়মস্মিন্নাকাশে তেজোময়ো'মৃতময়ঃ পুরুষঃ যশ্চায়মধ্যাত্মং
হৃদ্যাকাশোস্তেজোময়ো'মৃতময়ঃ পুরুষঃ অয়মেব স যো'য়মাত্মা ইদমৃতম্‌ ইদং ব্রহ্ম ইদং সর্ব্বম্‌।।
১০।।
১০।১।অন্বয়-অর্থ।
অয়ম্‌ (এই) আকাশঃ (আকাশ) সর্ব্বেষাং (সকল) ভূতানাং (ভূত সকলের) মধু (মধু) অস্য
আকাশস্য (এই আকাশের ) সর্ব্বাণি (সকল) ভূতানি (ভূত) মধু (মধু) যঃ চ অয়ম্‌ (যে এই)
অস্মিন্‌ (এই) আকাশে (আকাশে) তেজোময়ঃ (তেজোময়) অমৃতময়ঃ (অমৃতময়) পুরুষঃ
(পুরুষ), যঃ চ অয়ম্‌ (এবং যে এই) অধ্যাত্মং (অধ্যাত্মে, অন্তরে) হৃদ্যাকাশঃ (হৃদয়াকাশে)
তেজোময়ঃ (তেজোময়) অমৃতময়ঃ (অমৃতময়) পুরুষঃ (পুরুষ), অয়ম্‌ এব (এই-ই) স (সে)
যঃ (যে) অয়ম্‌ (এই) আত্মা (আত্মা); ইদম্‌ (ইহা) অমৃতম্‌ (অমৃত), ইদং (ইহা) ব্রহ্ম
(ব্রহ্ম), ইদং (ইহা) সর্ব্বম্‌ (সব)।
১০।২। অর্থ।
এই আকাশ ভূত সকলের মধু, সকল ভূত এই আকাশের মধু; যে এই এই আকাশে তেজোময়
অমৃতময় পুরুষ, এবং যে এই অধ্যাত্মে (অন্তরে) হৃদয়াকাশে তেজোময় অমৃতময় পুরুষ, এই-ই
সে, যে এই আত্মা; ইহা অমৃত, ইহা ব্রহ্ম, ইহা সব।
1/23/25, 11:13 PM দধীচি উক্ত মধুবিদ্যা। বৃহদারণ্যক উপনিষদ্‌ দ্বিতীয় অধ্যায় পঞ্চম ব্রাহ্মণ। (Brihadaranyaka Upanishad Second Chapter Fifth Brahmin in Bengali languag…
https://upanishadinbengali.blogspot.com/2025/01/brihadaranyaka-upanishad-second-chapter.html 28/67

১০।৩।সংক্ষিপ্ত ব্যাখ্যা এবং নিরুক্তি।
আমরা পূর্ব্বে বিদ্যুৎ এবং স্তনয়িত্নুর কথা বলেছি। চেতনার যে স্বরূপ
থেকে বিদ্যুৎ এবং স্তনয়িত্নু প্রকাশ পায়, এবং যাঁতে বিদ্যুৎ এবং স্তনয়িত্নু অস্তমিত হয়, তিনি
আকাশ। উপরে বিদ্যুৎ এবং স্তনয়িত্নুর বিষয়ে যা বলা
হয়েছে তা আমাদের দ্যুতিময়, শব্দাত্মিকা স্বরূপ,যা শরীর বা স্থূল স্থিতির উর্দ্ধে। জ্যোতি শব্দের
অর্থ শুধু আলো নয়, জ্যোতি অর্থে যে আলো দিয়ে 'জ্যা' অর্থাৎ পৃথিবী বা স্থূল রূপ সকল
রচিত হয়, প্রতিষ্ঠা পায়। জ্যোতি শব্দটি জুৎ ধাতু থেকে হয়েছে, যার অর্থ দীপ্ত হওয়া। আমার
যা কিছু দেখছি তা আলোরই রূপ।ছান্দোগ্য উপনিষদে, প্রজাপতি যে উপদেশ ইন্দ্রকে
দিয়েছিলেন, তাতে বলা হয়েছে যে বায়ু, অভ্র, বিদ্যুৎ, স্তনয়িত্নু, এরা অশরীরী; এঁরা আকাশ
থেকেই উত্থিত হয়ে পরম জ্যোতি-সম্পন্ন হয়। জ্যোতির্ম্ময় প্রকাশের যে ভূমি, তার নাম
আকাশ। আকাশ = আ+ কাশ; আ = ব্যাপ্ত, কাশ= প্রকাশ; কাশ্‌ = দীপ্ত হওয়া। আকাশ
= যিনি সর্ব্বত্র ব্যাপ্ত প্রকাশ-ভূমি, প্রকাশ ক্ষেত্র।
ছান্দোগ্যের মন্ত্রগুলি উদ্ধৃত করলাম :
ছান্দোগ্য ৮।১২।১।
মঘবন্‌ (হে মঘবন্‌/হে ইন্দ্র) মর্ত্ত্যম্‌ বা (মর্ত্ত্যই) ইদম্‌ (এই) শরীরম্ (শরীর) আত্তম্‌ (গ্রস্ত)
মৃত্যুনা (মৃত্যুর দ্বারা) তৎ (তা,সেই শরীর) অস্য (এই) অমৃতস্য (অমৃতের) অশরীরস্য
(অশরীরী) আত্মনঃ (আত্মার) অধিষ্ঠানম্‌ (অধিষ্ঠান ক্ষেত্র) আত্তঃ বৈ (অবশ্যই
গ্রস্ত) সশরীরঃ (শরীরী)  প্রিয়াপ্রিয়াভ্যাম্‌ (প্রিয় এবং অপ্রিয় বোধের দ্বারা) ন বৈ (অবশ্যই
না) সশরীরস্য (শরীরীর) সতঃ (সত্তার) প্রিয়াপ্রিয়য়োঃ (প্রিয় এবং অপ্রিয় বোধ) অপহতিঃ
অস্তি (অবসান হয়) অশরীররম্‌ বাব সন্তম্‌ (অশরীরী হবার জন্যই) ন (না) প্রিয়াপ্রিয়ে (প্রিয়
এবং অপ্রিয়) স্পৃশতঃ (স্পর্শ করে) : হে মঘবন্‌ (হে ইন্দ্র), এই শরীর মর্ত্ত্যই (নশ্বর), মৃত্যুর
দ্বারা গ্রস্ত; সেই শরীর এই অমৃতের, অশরীরী আত্মার অধিষ্ঠান ক্ষেত্র। অবশ্যই (যে) শরীরী
(দেহাত্মবোধ যুক্ত) (সে) প্রিয় এবং অপ্রিয় বোধের দ্বারা গ্রস্ত; শরীরী সত্তার প্রিয় এবং অপ্রিয়
বোধের (অনুভূতির) অবশ্যই অবসান (বিরতি) হয় না; অশরীরী হবার জন্যই (দেহাত্মক
বোধবিহীন হবার জন্যই) প্রিয় এবং অপ্রিয় (তাঁকে, অশরীরী আত্মাকে) স্পর্শ করে না।
ছান্দোগ্য উপনিষদ্‌, মন্ত্র৮।১২।১।)
ছান্দোগ্য উপনিষদ্‌ ৮।১২।২ এবং ৮।১২।৩।
অশরীরো বায়ুঃ (বায়ু অশরীরী) অভ্রম্‌ বিদ্যুতঃ স্তনয়িত্নুঃ (অভ্র, বিদ্যুত, স্তনয়িত্নু) অশরীরাণি
এতানি (এরা অশরীরী) তৎ (তাই;সেই জন্য) যথা (যেমন) এতানি (এরা) অমুস্মাৎ (ঐ)
আকাশাৎ (আকাশ থেকে)  সমুত্থায় (সম্যক্‌ রূপে উত্থিত হয়ে) পরম্‌ জ্যোতিঃ (পরম জ্যোতি)
উপসম্পদ্য (প্রাপ্ত হয়ে) স্বেন রূপেণ (স্বীয় স্বীয় রূপে) অভিনিষ্পদ্যন্তে (অভিসম্পন্ন হয়) এবম্‌
এব এষঃ (এই রকমই এই) সম্প্রসাদঃ (সম্প্রসাদ থেকে) অস্মাৎ শরীরাৎ (এই শরীর থেকে)
সমুত্থায় (সম্যক রূপে উত্থিত হয়ে) পরং (পরম)  জ্যোতিরূপসম্পদ্য (জ্যোতিরূপ প্রাপ্ত হয়ে)
স্বেন রূপেণ (স্বীয় রূপ) অভিনিষ্পদ্যতে (সম্পন্ন হয়) স উত্তমপুরুষঃ (সে/তিনি উত্তমপুরুষ) স
(সে/তিনি) তত্র (তথায়) পর্যেতি (পর্যটন করেন) জক্ষৎ (পরিহাস করে) ক্রীড়ন্‌ (ক্রীড়া
1/23/25, 11:13 PM দধীচি উক্ত মধুবিদ্যা। বৃহদারণ্যক উপনিষদ্‌ দ্বিতীয় অধ্যায় পঞ্চম ব্রাহ্মণ। (Brihadaranyaka Upanishad Second Chapter Fifth Brahmin in Bengali languag…
https://upanishadinbengali.blogspot.com/2025/01/brihadaranyaka-upanishad-second-chapter.html 29/67

করে)  রমমানঃ স্ত্রীভিঃ বা যানৈঃ বা জ্ঞাতিভিঃ বা (স্ত্রীগণের সাথে, বা যানসকলে আরোহণ
করে, বা জ্ঞাতিগণের সাথে আনন্দ-সঙ্গ করে) , ন (না) উপজনম্‌ (উপজনকে/
অবলম্বনকে) স্মরন্‌ (স্মরণ করে)  ইদং শরীরং (যা এই শরীর) স (সে) যথা (যেমন) প্রযোগ্য
(প্রযুক্তি--যা প্রয়োগ করা হয় বা যা চালনা করে) আচরণে (যা চলে তাতে যুক্ত; যানে) এবম্‌
এব অয়ম্‌ (এই রকমই এই) অস্মিন্‌ শরীরে (এই শরীরে) প্রাণো (প্রাণ) যুক্তঃ (যুক্ত): বায়ু
অশরীরী; অভ্র, বিদ্যুত, স্তনয়িত্নু এরা অশরীরী; সেই জন্য যেমন এরা ঐ আকাশ থেকে
সম্যক্‌ রূপে উত্থিত হয়ে পরম জ্যোতি প্রাপ্ত হয়ে স্বীয় স্বীয় রূপে অভিসম্পন্ন হয়, এই
রকমই এই সম্প্রসাদময় আত্মা এই শরীর থেকে সম্যক রূপে উত্থিত হয়ে পরম জ্যোতিরূপ
প্রাপ্ত হয়ে স্বীয়-রূপ সম্পন্ন হয়; তিনি উত্তমপুরুষ। তিনি তথায় পরিহাস করে, ক্রীড়া
করে, যানসকলে আরোহণ করে, বা স্ত্রীগণের সাথে, বা জ্ঞাতিগণের সাথে আনন্দ-সঙ্গ
করে পর্যটন করেন; যা এই শরীর, (সেই) অবলম্বনকে স্মরণ করেন না; সেই প্রযুক্তি
(প্রযুক্তি = যা প্রয়োগ করা হয়, বা যা চালনা করে) যেমন যানের সাথে যুক্ত থাকে, এই
রকমই এই প্রাণ এই শরীরে যুক্ত।(ছান্দোগ্য উপনিষদ্‌, মন্ত্র ৮।১২।২, ৮।১২।৩।)
ছান্দোগ্য উপনিষদ্‌ ৮।১২।৪।
অথ (অনন্তর) যত্র (যেখানে) এতদ্‌ (এই) আকাশম্‌ (আকাশ; হৃদয়াকাশ) অনুবিষণ্ণম্‌
(অনুপ্রবিষ্ট) চক্ষুঃ (চক্ষু) স (তিনি) চাক্ষুষঃ পুরুষো (চাক্ষুষ পুরুষ) দর্শনায় (দর্শনের হেতু;
দর্শন করেন বলেই) চক্ষুঃ (চক্ষু) অথ যো (অনন্তর যে ) বেদং (জানে; বোধ করে) জিঘ্রাণি
ইতি  (এইটি আঘ্রাণ করি) স (তিনি) আত্মা (আত্মা) গন্ধায় (গন্ধের জন্য) (চেতনার বা
আত্মার গন্ধরূপ যে বেদন, তার জন্য) ঘ্রাণম্‌ (ঘ্রাণ;ঘ্রাণেন্দ্রিয়) অথ (আর) যো (যে) বেদম্‌
(জানে;বোধ করে) অভিব্যাহরাণী (কথা বলছি) ইতি স (তিনি) আত্মা
(আত্মা) অভিব্যাহারায় (কথা বলার জন্যই; কথা বলেন বলেই) বাক্‌ (বাক্য; বাগিন্দ্রিয়)
অথ (আর) যো (যে) বেদ (জানে; বোধ করে) ইদং (এইটি) শৃণবানীতি (শ্রবণ করছি) স
(তিনি) আত্মা (আত্মা) শ্রবণায় (শ্রবণের জন্যই; শ্রবণ করেন বলেই) শ্রোত্রম্‌
(শ্রোত্র): অনন্তর যেখানে এই আকাশে (হৃদয়াকাশে) চক্ষু অনুপ্রবিষ্ট, তিনি চাক্ষুষ পুরুষ;
দর্শনের হেতু (দর্শন করেন বলেই) চক্ষু (বর্ত্তমান)*; অনন্তর যে জানে (বোধ
করে) 'এইটি আঘ্রাণ করি' তিনি আত্মা, গন্ধের জন্য (চেতনার বা আত্মার গন্ধরূপ যে
বেদন, তার জন্য) ঘ্রাণেন্দ্রিয় (বর্ত্তমান); আর যে জানে (বোধ করে) 'কথা বলছি',
তিনি আত্মা; কথা বলার জন্যই (কথা বলেন বলেই বাক্য (বাগিন্দ্রিয় বর্ত্তমান)
আর যে জানে (বোধ করে) এইটি শ্রবণ করছি, তিনি আত্মা; শ্রবণের জন্যই (শ্রবণ
করেন বলেই) শ্রোত্র/কর্ণ (বর্ত্তমান)। (ছান্দোগ্য উপনিষদ্‌, মন্ত্র ৮।১২।৪।)
( *বৃহদারণ্যক উপনিষদে বলা হয়েছে : প্রাণন্‌ এব প্রাণো নাম ভবতি, বদন্‌ বাক্‌, পশ্যন্‌ চক্ষুঃ, শৃন্বন্‌
শ্রোত্রম্‌, মন্বানো মনঃ : (এই আত্মা) প্রাণন করে প্রাণ নাম ধারণ করেন (অর্থাৎ ইনি প্রাণন করে
প্রাণ হন), কথা বলে বাক্‌ বা বাগিন্দ্রিয় হন, দেখে চক্ষু হন, শ্রবণ করে শ্রোত্র হন, মনন করে মন হন।
(বৃহদারণ্যক উপনিষদ্‌ মন্ত্র ১।৪।৭ থেকে উদ্ধৃত।)
1/23/25, 11:13 PM দধীচি উক্ত মধুবিদ্যা। বৃহদারণ্যক উপনিষদ্‌ দ্বিতীয় অধ্যায় পঞ্চম ব্রাহ্মণ। (Brihadaranyaka Upanishad Second Chapter Fifth Brahmin in Bengali languag…
https://upanishadinbengali.blogspot.com/2025/01/brihadaranyaka-upanishad-second-chapter.html 30/67

উপরের মন্ত্রগুলিতে যে আকাশ, বায়ু, অভ্র, বিদ্যুৎ, স্তনয়িত্নুর কথা বলা হল তা আমাদের
নিজেদের, বা আমাদের চেতনার বা আত্মারই স্বরূপ।বিদ্যমানতার যে উৎকৃষ্ট রূপ, তার নাম
বিদ্যুৎ। এই রকম যে আমরা, এই যে আত্মা, ইনি স্বাধীন; এঁর দর্শন থেকে চক্ষু সৃষ্টি হয়, সেই চক্ষু
থেকে সকল রূপ উত্থিত হয়; এঁর আঘ্রাণ থেকে নাসিকা সৃষ্টি হয়, সেই নাসিকা থেকে সকল গন্ধ
উত্থিত হয়; এঁর বাক্‌-বৃত্তি বা কথা বলা থেকে জিহ্বা এবং কণ্ঠ ইত্যাদি  সৃষ্টি হয়, সেই জিহ্বা থেকে
সকল বাক্য উত্থিত হয়; এঁর শ্রবণ থেকে শ্রুতি বা  শ্রোত্র সৃষ্টি হয়, সেই শ্রোত্র বা কর্ণ থেকে সকল
শ্রুতি উত্থিত হয়; এই আত্মা হৃদয়াকাশে স্থিত বা আকাশই এঁর বপু; আকাশ অর্থে যেখানে কোন
আয়তন (dimension) নেই; যেখানে দেশ (space) দিকে অন্তর্নিহিত হয়ে গেছে, আর যেখানে
সর্বদিক্‌ একই সাম্যে আছে। শব্দ, স্পর্শ, রূপ, রস, গন্ধ এই আত্মার থেকে বা আত্মার ক্রিয়াময়তা
থেকে উত্থিত হয়, এবং এই জন্য প্রাণকে উক্‌থ বলা হয়েছে। (বৃহদারণ্যক উপনিষদ্‌ ৫।১৩।১ মন্ত্র
দ্রষ্টব্য।) আত্মার ক্রিয়াময়তাই প্রাণ, আর প্রাণের প্রকাশাত্মক ক্ষেত্র হল আকাশ। 
বৃহদারণ্যক উপনিষদের ৪।৩।৭ মন্ত্রে বলা হয়েছে যে, এই আত্মা আমাদের প্রাণ সকলের মধ্যে,
অর্থাৎ প্রাণের বেদন সকলের মধ্যে বা ইন্দ্রিয়দের মধ্যে, বিজ্ঞানময় বা জ্ঞানক্রিয়াময় বা
বোধক্রিয়াময়; আমাদের হৃদয়ের অন্তরে  বা হৃদ্যাকাশে ইনি জ্যোতির্ম্ময় পুরুষ। ইনি স্বপ্ন* হয়ে,
অর্থাৎ স্বয়ং-জ্যোতির্ম্ময় হয়ে ইহ লোক বা মর্ত্ত, যা মৃত্যুরই নানা রূপের সমন্বয়, তাকে অতিক্রম
করেন।  ( *স্বপ্ন = স্বয়ম্‌ আপ্নোতি =নিজেতেই আপ্ত হয়, নিজেতেই সব পায়।)
১১শ মন্ত্র।
অয়ং ধর্ম্মঃ সর্ব্বেষাং ভূতানাং মধ্বস্য-ধর্ম্মস্য সর্ব্বাণি ভূতানি
মধু যশ্চায়স্মিন্ধর্ম্মে তেজোময়ো'মৃতময়ঃ পুরুষঃ যশ্চায়মধ্যাত্মং ধার্ম্মস্তেজোময়ো'মৃতময়ঃ
পুরুষঃ অয়মেব স যো'য়মাত্মা ইদমৃতম্‌ ইদং ব্রহ্ম ইদং সর্ব্বম্‌।।
১১।১।অন্বয়-অর্থ।
অয়ম্‌ (এই) ধর্ম্মঃ (ধর্ম্ম) সর্ব্বেষাং (সকল) ভূতানাং (ভূত সকলের) মধু (মধু) অস্য ধর্ম্মস্য
(এই ধর্ম্মের ) সর্ব্বাণি (সকল) ভূতানি (ভূত) মধু (মধু) যঃ চ অয়ম্‌ (যে এই) অস্মিন্‌
(এই) ধর্ম্মে (ধর্ম্মে) তেজোময়ঃ (তেজোময়) অমৃতময়ঃ (অমৃতময়) পুরুষঃ (পুরুষ), যঃ চ
অয়ম্‌ (যে এই) অধ্যাত্মং (অধ্যাত্মে, অন্তরে) ধার্ম্মঃ (ধর্ম্ম স্বরূপ) তেজোময়ঃ (তেজোময়)
অমৃতময়ঃ (অমৃতময়) পুরুষঃ (পুরুষ), অয়ম্‌ এব (এই-ই) স (সে) যঃ (যে) অয়ম্‌ (এই)
আত্মা (আত্মা); ইদম্‌ (ইহা) অমৃতম্‌ (অমৃত), ইদং (ইহা) ব্রহ্ম (ব্রহ্ম), ইদং (ইহা) সর্ব্বম্‌
(সব)।
১১।২। অর্থ।
এই ধর্ম্ম ভূত সকলের মধু, সকল ভূত এই ধর্ম্মের মধু; যে এই ধর্ম্মে (স্থিত) তেজোময়
অমৃতময় পুরুষ, যে এই অধ্যাত্মে, অন্তরে ধর্ম্ম-স্বরূপ তেজোময় অমৃতময় পুরুষ, এই-ই সে,
যে এই আত্মা; ইহা অমৃত, ইহা ব্রহ্ম ইহা সব।
১১।৩। সংক্ষিপ্ত ব্যাখ্যা এবং নিরুক্তি।
1/23/25, 11:13 PM দধীচি উক্ত মধুবিদ্যা। বৃহদারণ্যক উপনিষদ্‌ দ্বিতীয় অধ্যায় পঞ্চম ব্রাহ্মণ। (Brihadaranyaka Upanishad Second Chapter Fifth Brahmin in Bengali languag…
https://upanishadinbengali.blogspot.com/2025/01/brihadaranyaka-upanishad-second-chapter.html 31/67

ধর্ম্ম = ধৃ+মর্ম্ম।আমাদের মর্ম্ম বা প্রকৃতি যে গুণ-সমূহের দ্বারা চেতনা ধরে রেখেছেন, তা
আমাদের ধর্ম্ম; চিন্ময় আত্মার বা প্রাণের এই মর্ম্ম-ধারক যে ব্যক্তিত্ব তাঁর নাম ধর্ম্ম।
বৃহদারণ্যক উপনিষদের প্রথম অধ্যায়ের চতুর্থ ব্রাহ্মণে ব্রহ্মের চারটি মূল বর্ণ (ব্রাহ্মণ, ক্ষত্রিয়,
বৈশ্য, শূদ্র), এবং ধর্ম্মের উৎপত্তির বিষয়ে বলা হয়েছে। সেখানে ঋষি বলেছেন যে ব্রাহ্মণ,
ক্ষত্রিয়, বৈশ্য এবং শূদ্র এই চারটি বর্ণ সৃষ্টি করার পর ব্রহ্ম বা স্রষ্টা দেখলেন, যে সৃষ্টি রূপে
তাঁর প্রকাশ তখনও সম্পূর্ণ হল না। তখন তিনি, 'শ্রেয়ো রুপী' ধর্ম্মকে সৃষ্টি করলেন।
 উপনিষদে 'ধর্ম্মকে সৃষ্টি করলেন' বলার বদলে, 'ধর্ম্মকে অতি সৃষ্টি করলেন' বলা হয়েছে।
বৃহদারণ্যক উপনিষদের এই মন্ত্রটি (বৃহদারণ্যক মন্ত্র ১।৪।১৪) উদ্ধৃত করলাম :
সঃ (তিনি) ন (না) এব (এই ভাবেও) ব্যভবৎ (বি +অভবৎ---সমর্থ হলেন; বিভব =
সামর্থ্য) তৎ (তখন) শ্রেয়োরূপম্‌ (শ্রেয়োরূপকে) অতি অসৃজত (অতি-সৃজন করলেন, অতি-
সৃষ্টি করলেন) ধর্ম্মম্‌ (ধর্ম্মকে) তৎ (সেই; সেই ধর্ম্ম) এতৎ (এই) ক্ষত্রস্য (ক্ষত্রের, ক্ষত্রিয়র)
ক্ষত্রম্‌ (ক্ষত্র, বা ক্ষাত্র তেজ, বা ক্ষত্রিয়ত্ব) যৎ (যা) ধর্ম্মঃ (ধর্ম্ম) তস্মাৎ (সেই হেতু; তাই)
ধর্ম্মাৎ (ধর্ম্ম থেকে) পরম্‌ (শ্রেষ্ঠ) নাস্তি (নেই) অথঃ (এই জন্য) অবলীয়ান্‌ (বলহীন)
বলীয়াংসম্‌ (বলীইয়ানকে) আশংসতে (শাসন করতে ইচ্ছা করে) ধর্ম্মেণ (ধর্ম্মের দ্বারা) যথা
(যেমন) রাজ্ঞা (রাজ শাসনে) এবম্‌ (এই রকম) যো বৈ স ধর্ম্মঃ (যে সেই ধর্ম্ম) সত্যম্‌ বৈ তৎ
(তা সত্যই) তস্মাৎ সত্যম্‌ বদন্তম্‌ (যে সত্য বলে) আহুঃ (বলা হয়) ধর্মম্‌ বদতি (ধর্ম্ম বলছে)
ইতি ধর্ম্মং বা বদন্তম্‌ (যে ধর্ম্ম বলে) (বলা হয়) সত্যম্‌ বদতি (সত্য বলছে) ইতি এতৎ (এই)
হি এব (এই রকমই) এতৎ উভয়ং (এই উভয়) ভবতি (হয়) : তিনি (স্রষ্টা রূপ আত্মা) এই
ভাবেও (ব্রাহ্মণাদি চার বর্ণকে সৃষ্টি করেও) সমর্থ হলেন না (সৃষ্টিকে সম্পূর্ণ করতে
পারলেন না), তখন শ্রেয়োরূপ ধর্ম্মকে অতি-সৃষ্টি করলেন। সেই যে  ধর্ম্ম তা এই ক্ষত্রিয়র
ক্ষাত্র তেজ, বা ক্ষত্রিয়ত্ব। সেই হেতু ধর্ম্ম থেকে শ্রেষ্ঠ কিছু নেই। এই জন্য যে বলহীন সে
বলবানকে ধর্ম্মের দ্বারা শাসন করতে ইচ্ছা করে;  যেমন রাজ শাসনে (হয়), এই রকম।
যে সেই ধর্ম্ম, তা সত্যই; তাই যে সত্য বলে, (তার উদেশ্যে) বলা হয়, 'ধর্ম্ম বলছে',
(এবং) যে ধর্ম্ম বলে, (তার উদেশ্যে) বলা হয়, 'সত্য বলছে'; এই রকমই এই উভয়
(ধর্ম্ম এবং সত্য)। 
১১।৪।যম ধর্ম্ম।
 যে ধর্ম্ম লাভ করলে আমরা স্বাভাবিক ভাবে বেদ জ্ঞানের অধিকারী হই, তার নাম যম-ধর্ম্ম। 
এই যে বিশ্ব, এ এক জনের বেদন বা অনুভূতি দিয়ে গড়া, আর তিনি আমার এবং সর্ব্বভূতের
আত্মা, এই রকম দর্শন বা উপলব্ধি হওয়ার নাম বেদ জ্ঞান অর্জ্জন করা। যিনি যমনের দ্বারা
আমাদের আত্মজ্ঞতার দিকে নিয়ে চলেছেন, আত্মার সেই নিয়ন্ত্রণময় স্বরূপের নাম যম।
যমদেবের কথা আমরা ৬।৩।১ অংশে উল্লেখ করেছি। ভগবান্‌ শ্রীকৃষ্ণ গীতায় যম ধর্ম্মের
বিষয়ে বলেছেন। যম ধর্ম্ম দশটি : ১-অমানিত্ব (দম্ভহীনতা), ২-ক্ষমা ( বাইরের প্ররোচনা
সত্বেও স্থির হয়ে থাকা), ৩- সত্য (সততা), ৪- অহিংসা, ৫-ধৃতি, ৬- ঋজুতা (সরলতা), ৭-
প্রীতি (আনন্দময়তা), ৮-প্রসাদ (প্রসন্নতা), ৯- মাধুর্য (মধুময়তা), ১০- আর্দ্রতা
(সংবেদনশীলতা)। 
১২শ মন্ত্র।
1/23/25, 11:13 PM দধীচি উক্ত মধুবিদ্যা। বৃহদারণ্যক উপনিষদ্‌ দ্বিতীয় অধ্যায় পঞ্চম ব্রাহ্মণ। (Brihadaranyaka Upanishad Second Chapter Fifth Brahmin in Bengali languag…
https://upanishadinbengali.blogspot.com/2025/01/brihadaranyaka-upanishad-second-chapter.html 32/67

ইদং সত্যং সর্ব্বেষাং ভূতানাং মধ্বস্য সত্যস্য সর্ব্বাণি ভূতানি মধু যশ্চায়মস্মিন্‌ সত্যে
তেজোময়ো'মৃতময়ঃ পুরুষঃ যশ্চায়মধ্যাত্মং সাত্যস্তেজোময়ো'মৃতময়ঃ পুরুষঃ অয়মেব স
যো'য়মাত্মা ইদমৃতম্‌ ইদং ব্রহ্ম ইদং সর্ব্বম্‌।। ১২।।
১২।১।অন্বয়-অর্থ।
ইদং (এই) সত্যং (সত্য) সর্ব্বেষাং (সকল) ভূতানাং (ভূত সকলের) মধু (মধু) অস্য (এই)
সত্যস্য (সত্যের) সর্ব্বাণি (সকল) ভূতানি (ভূত) মধু (মধু) যঃ চ অয়ম্‌ (যে এই) অস্মিন্‌
(এই) সত্যে (সত্যে) তেজোময়ঃ (তেজোময়) অমৃতময়ঃ (অমৃতময়) পুরুষঃ (পুরুষ), যঃ চ
অয়ম্‌ (এবং যে এই) অধ্যাত্মং (অধ্যাত্মে, অন্তরে) সাত্যঃ (সত্যে স্থিত) তেজোময়ঃ
(তেজোময়) অমৃতময়ঃ (অমৃতময়) পুরুষঃ (পুরুষ), অয়ম্‌ এব (এই-ই) স (সে) যঃ (যে)
অয়ম্‌ (এই) আত্মা (আত্মা); ইদম্‌ (ইহা) অমৃতম্‌ (অমৃত), ইদং (ইহা) ব্রহ্ম (ব্রহ্ম) ইদং
(ইহা) সর্ব্বম্‌ (সব)।
১২।২।অর্থ।
এই সত্য সকল (ভূত সকলের) মধু (মধু) অস্য (এই) সত্যস্য (সত্যের) সর্ব্বাণি (সকল)
ভূতানি (ভূত) মধু (মধু) যঃ চ অয়ম্‌ (যে এই) অস্মিন্‌ (এই) সত্যে (সত্যে) তেজোময়ঃ
(তেজোময়) অমৃতময়ঃ (অমৃতময়) পুরুষঃ (পুরুষ), যঃ চ অয়ম্‌ (এবং যে এই) অধ্যাত্মং
(অধ্যাত্মে, অন্তরে) সাত্যঃ (সত্যে স্থিত) তেজোময়ঃ (তেজোময়) অমৃতময়ঃ (অমৃতময়)
পুরুষঃ (পুরুষ), অয়ম্‌ এব (এই-ই) স (সে) যঃ (যে) অয়ম্‌ (এই) আত্মা (আত্মা); ইদম্‌
(ইহা) অমৃতম্‌ (অমৃত), ইদং (ইহা) ব্রহ্ম (ব্রহ্ম) ইদং (ইহা) সর্ব্বম্‌ (সব)।
১২।৩। সংক্ষিপ্ত ব্যাখ্যা এবং নিরুক্তি।
আমরা সত্যের বিষয় ৫।৩।২, ৬।৩।১ এবং ১১।৩ অংশে উল্লেখ করেছি।
অস্তিত্ব বোধের মূলে আছে সত্যবোধ। এই দৃশ্যমান বিশ্ব সত্য; এই বিশ্ব আছে বলেই আমরা
প্রতি মুহূর্ত্তে নিজেদের অস্তিত্ব অনুভব করছি। আমাদের শরীর এই বহির্বিশ্বেরই অংশ। আমরা
১১।৩ অংশে বৃহদারণ্যক উপনিষদের একটি উক্তি উল্লেখ করেছি যে, যা ধর্ম্ম তাই সত্য এবং
যা সত্য তাই ধর্ম্ম। এই সত্যের দ্বারা অস্তিত্ববোধময় হয়ে আমরা ধরিত্রীতে বিধৃত হয়ে রয়েছি।
এই মধুময় চিন্ময় আত্মাই আমাতে চাক্ষুষ পুরুষ হয়ে সকল দৃশ্যকে বা দৃশ্যের বোধকে প্রকাশ
করছেন, আবার ইনিই এই দৃশ্যমান, অনুভূতি যোগ্য বিশ্বকে নিজের মনের সংকল্পের দ্বারা
ফুটিয়ে তুলছেন। এই দৈব মনই ব্রহ্মা, এবং আমরা ৭।৩।১, ৭।৩।২, ৭।৩।৩ অংশে মন
এবং দৈব মনের বিষয়ে বিস্তারিত বর্ণনা করেছি। এই মনরূপ ব্রহ্মা, কারণবারি-শায়ী বিষ্ণুর
নাভিকমল থেকে উদ্ভূত, এবং সত্য সংকল্পময় ব্রহ্মার থেকে বিশ্ব সৃষ্টি হয়েছে। বৃহদারণ্যক
উপনিষদের ৫।৫।১ মন্ত্রে সত্য শব্দের অর্থ বা তাৎপর্য উপদিষ্ট হয়েছে। মন্ত্রটি উদ্ধৃত করা
হল: আপঃ এব (অপ্‌ ই) ইদম্‌ (ইহার; ইহা বা ইদম্‌ পদবাচ্য এই বিশ্বর) অগ্রে (পূর্ব্বে) আসুঃ
(ছিল) তা আপঃ (সেই অপ্‌) সত্যং (সত্যকে) অসৃজন্ত (সৃজন করলেন) সত্যং (সত্য) ব্রহ্ম
(ব্রহ্মকে) (সৃষ্টি করলেন) ব্রহ্মং (ব্রহ্ম) প্রজাপতিঃ (প্রজাপতি
1/23/25, 11:13 PM দধীচি উক্ত মধুবিদ্যা। বৃহদারণ্যক উপনিষদ্‌ দ্বিতীয় অধ্যায় পঞ্চম ব্রাহ্মণ। (Brihadaranyaka Upanishad Second Chapter Fifth Brahmin in Bengali languag…
https://upanishadinbengali.blogspot.com/2025/01/brihadaranyaka-upanishad-second-chapter.html 33/67

কে) (সৃষ্টি করলেন) প্রজাপতি (প্রজাপতি) দেবান্‌ (দেবগণকে) (সৃষ্টি করলেন) তে দেবাঃ
(সেই দেবতারা) সত্যং এব (সত্যকেই) উপাসতে (উপাসনা করেন) তৎ এতৎ (সেই এই) ত্রি
অক্ষরং (তিনটি অক্ষর সম্পন্ন) সত্যং (সত্য) ইতি স ইতি একং অক্ষরং ('স' একটি অক্ষর) 
তি ইতি একং অক্ষরং ('তি' একটি অক্ষর) যম্‌  ইতি একং অক্ষরং (যম্‌/
য্য একটি অক্ষর) প্রথম উত্তমে (প্রথম এবং উত্তম/শেষ) অক্ষরে (অক্ষরে) সত্যং (সত্য)
মধ্যতঃ (মধ্যে) অনৃতং (অনৃত) তৎ এতৎ অনৃতং (সেই এই অনৃত) উভয়তঃ (উভয় দিকেই)
সত্যেন (সত্যের দ্বারা) পরিগৃহীতং (পরিগৃহীত) সত্য (সত্য) ভূয়ম্‌ (অধিক) এব (এই ভাবে)
ভবতি (হয়) ন (না) এনং বিদ্বাংসম্‌ (এই রকম বিদ্বান কে) অনৃতং (অনৃত) হিনস্তি (হিংসা
করে) : অপ্‌ ই ইহার (ইহা বা ইদম্‌ পদবাচ্য এই বিশ্বের) অগ্রে (পূর্ব্বে) ছিল; সেই অপ্‌
সত্যকে সৃজন করলেন; সত্য ব্রহ্মকে সৃষ্টি করলেন, ব্রহ্ম প্রজাপতিকে সৃষ্টি করলেন,
প্রজাপতি দেবগণকে সৃষ্টি করলেন; সেই দেবতারা সত্যকেই উপাসনা করেন। সেই এই
সত্য তিনটি অক্ষর সম্পন্ন, 'স' একটি অক্ষর, 'তি' একটি অক্ষর, যম্‌/য্য একটি
অক্ষর; প্রথম এবং উত্তম (শেষ) অক্ষরে সত্য, মধ্যে অনৃত; সেই এই অনৃত উভয়
দিকেই সত্যের দ্বারা পরিগৃহীত, (এবং) এই ভাবে সত্য অধিক হয়। এই রকম বিদ্বান কে
অনৃত হিংসা করে না।
অপ্‌ বা দিব্য জল হলেন প্রাণের শরীর। (৭।৩।৩ অংশ দ্রষ্টব্য)। অপ্‌ অর্থে সর্ব্ব আপ্তিময়
প্রাণ। নিজেকে নিজের মধ্যে যত রকমে পাওয়া যায়, আপ্ত হওয়া যায়, সেই আপ্তি-ই অপ্‌। এই
অপ্‌ থেকেই ব্রহ্মা, দেবগণ এবং বিশ্ব সৃষ্টি হয়েছে।চিন্ময় আত্মা নিজেকে বৃংহণ করছেন বা
বৃহৎ করছেন, সদা প্রসারিত হচ্ছেন, বর্দ্ধিত হচ্ছেন বলে তাঁকে ব্রহ্ম বলা হয়। ব্রহ্মের যে দৈব
রূপ তা ব্রহ্মা। এই ব্রহ্মা সত্য সঙ্কল্পময়। ছন্দোগ্য উপনিষদে এই আত্মাকে বা ব্রহ্মকে, মনোময়,
ভাস্বর, প্রাণ-শরীরী (প্রাণ বা অপ্‌ যাঁর শরীর), সত্য সংকল্পময় (যাঁর সংকল্প সত্য, যাঁর
সংকল্প বা মনন থেকে সত্যরূপে এই বিশ্ব প্রকাশ পেয়েছে) আকাশ আত্মা (যিনি আকাশ বা
শব্দাত্মিকা (আকাশ তত্ত্বের তন্মাত্রা হল শব্দ), সর্ব্ব-কর্ম্মা, সর্ব্ব-কাম, সর্ব্ব-গন্ধ, সর্ব্ব-রস, সমস্ত
কিছুকে গ্রহণ করে (বর্ত্তমান) (এই) অবাক্‌-অনাদর (ব্রহ্ম) ----
মনোময়ঃ প্রাণশরীরো ভারূপঃ সত্যসঙ্কল্প আকাশাত্মা সর্ব্বকর্ম্মা সর্ব্বকামঃ সর্ব্বগন্ধঃ
সর্ব্বরসঃ সর্ব্বকাম, সর্ব্বগন্ধ, সর্ব্বমিদমভ্যত্তো'বাক্যনাদর ----ছান্দোগ্য উপনিষদ্‌ ৩।১৪।২ মন্ত্র।
সত্য = স+ত (তি) + য (যম্‌)। 'স' অর্থে যাঁর থেকে সবাই 'সৃজিত' হয়েছে তিনি 'স'। এই
'স' গতি নিলে, বা ক্রিয়াময় হলে, 'সর' বা তরল বা প্রবহমান হন। স+ঋ (গতি)+অ= সর
বা সরিৎ।
'ত' অর্থে 'তি' বা স্থিতি। কোন ক্রিয়া যখন সম্পূর্ণ হয় বা  কৃত হয়, তখন সেইটি 'ত' বা 'তি';
যেমন মৃত্যু হলে 'মৃত', 'কায হলে 'কৃত', 'শোনা হলে শ্রুত' ইত্যাদি। সুতরাং এই যে 'ত' বা
'তি', এইটি 'স্থিতি', বা একটি স্থিতাবস্থা। এই যে স্থিতি, এইটি প্রতিমুহূর্ত্তে পরিবর্ত্তিত হচ্ছে;
সৃষ্টি এবং লয়, বা ভবিষ্যৎ ও অতীতের যে সন্ধি, তাই বর্ত্তমান বা স্থিতি বলে আমরা অনুভব
করি, যদিও এই স্থিতি প্রকৃতপক্ষে স্থিতি নয়, গতিরই স্থিতিবৎ রূপ। এই জন্য, বলা হল, যা
মধ্যে তা অনৃত বা মিথ্যা (মধ্যতঃ অনৃতং)। এই যা অনৃত বা মিথ্যা, বা মায়া বলে অভিহিত
1/23/25, 11:13 PM দধীচি উক্ত মধুবিদ্যা। বৃহদারণ্যক উপনিষদ্‌ দ্বিতীয় অধ্যায় পঞ্চম ব্রাহ্মণ। (Brihadaranyaka Upanishad Second Chapter Fifth Brahmin in Bengali languag…
https://upanishadinbengali.blogspot.com/2025/01/brihadaranyaka-upanishad-second-chapter.html 34/67

হয়, তা সত্যেরই প্রবাহ, বা ঋতেরই প্রবাহ। অনৃত অর্থে যা ঋত বা সত্য নয় (ন ঋত),
আবার অনৃত অর্থে, 'অন+ঋত', অন বা প্রাণের মূর্ত্তি।  
'য্য' অর্থে যিনি লয় বা অন্ত  করছেন, যিনি যমন বা নিয়ন্ত্রণ করছেন। 
তাই এই 'ত' বা 'তি' প্রথমে 'স' বা যিনি সৃষ্টি করছেন তাঁর দ্বারা এবং অন্তে 'যম্‌' বা যিনি লয়
করছেন তাঁর দ্বারা গৃহীত, এবং আত্মার নিয়ন্ত্রণের দ্বারাই সৃষ্টি, স্থিতি ও লয় হচ্ছে। এই জন্য
বলা হল, মধ্যস্থ অনৃত সত্যের দ্বারাই আদি এবং অন্তে বেষ্টিত, এবং তাই সত্যের আধিক্যে
এই নশ্বর স্থিতিও সত্য বা সত্যেরই রূপ। তাই অনৃত মানে অন-ঋত (অন ঋতায়তে),
মহাপ্রাণই, প্রাণ হয়ে, আয়ু হয়ে, কালের আকারে বয়ে চলেছেন। তাই সত্যই সব।এই জন্য
দেবগণ সত্যকে উপাসনা করেন---সত্যেন পন্থা বিততো দেবযানঃ : দেবযানের পথ সত্যের
দ্বারা আস্তীর্ণ।(মুণ্ডকোপনিষদ্‌ মন্ত্র ৩।১।৬ দ্রষ্টব্য।)
১৩শ মন্ত্র।
ইদং মানুষং সর্ব্বেষাং ভূতানাং মধ্বস্য মানুষস্য সর্ব্বাণি ভূতানি মধু যশ্চায়মস্মিন্মানুষে
তেজোময়ো'মৃতময়ঃ পুরুষঃ যশ্চায়মধ্যাত্মং মানুষস্তেজোময়ো'মৃতময়ঃ পুরুষঃ অয়মেব স
যো'য়মাত্মা ইদমৃতম্‌ ইদং ব্রহ্ম ইদং সর্ব্বম্‌।। ১৩।।
১৩।১।অন্বয়-অর্থ।
ইদং (এই) মানুষং (মানুষ) সর্ব্বেষাং (সকল) ভূতানাং (ভূত সকলের) মধু (মধু), অস্য
(এই) মানুষস্য (মানুষের) সর্ব্বাণি (সকল) ভূতানি (ভূত) মধু (মধু); যঃ চ অয়ম্‌ (যে এই)
অস্মিন্‌ (এই) মানুষে (মানুষে) তেজোময়ঃ (তেজোময়) অমৃতময়ঃ (অমৃতময়) পুরুষঃ
(পুরুষ), যঃ চ অয়ম্‌ (এবং যে এই) অধ্যাত্মং (অধ্যাত্মে,
অন্তরে) মানুষ (মানুষে স্থিত) তেজোময়ঃ (তেজোময়) অমৃতময়ঃ (অমৃতময়) পুরুষঃ
(পুরুষ), অয়ম্‌ এব (এই-ই) স (সে) যঃ (যে) অয়ম্‌ (এই) আত্মা (আত্মা); ইদম্‌ (ইহা)
অমৃতম্‌ (অমৃত), ইদং (ইহা) ব্রহ্ম (ব্রহ্ম) ইদং (ইহা) সর্ব্বম্‌ (সব)।
১৩।২। অর্থ।
এই মানুষ ভূত সকলের মধু, সকল ভূত এই মানুষের মধু; যে এই মানুষে তেজোময় অমৃতময়
পুরুষ, এবং যে এই অধ্যাত্মে (অন্তরে), মানুষে স্থিত তেজোময় অমৃতময় পুরুষ, এই-ই সে, যে
এই আত্মা; ইহা অমৃত, ইহা ব্রহ্ম, ইহা সব।
১৩।৩। সংক্ষিপ্ত ব্যাখ্যা এবং নিরুক্তি।
মন্ত্রময়তার ঈষৎ আভাস যাদের মধ্যে দেখা যায় তারা 'মানুষ'। এই বিশ্ব মনেতেই সৃষ্ট,
মনেতেই অনুভূত-----এই প্রকার জ্ঞানে মানুষের স্বাভাবিক অধিকার আছে। মানুষ শব্দের
উৎপত্তি মনুস্‌ শব্দ থেকে; মনুস্‌ শব্দের অর্থ মনুর তনয় বা তনয়া। মনু শব্দটি মনস্‌ বা মন
থেকে হয়েছে। এই যে দৈব মন, যিনি ব্রহ্মা, তাঁর থেকে, বা দৈবমন থেকে মনুদের উৎপত্তি।
মনুর সংখ্যা চতুর্দশ, এবং প্রথম মনুর নাম স্বয়ম্ভূ, ইনি ব্রহ্মার পুত্র। আমরা এখন যে মনুর
অধিকারে আছি, তিনি সপ্তম মনু, এবং তাঁর নাম বৈবস্বত।
1/23/25, 11:13 PM দধীচি উক্ত মধুবিদ্যা। বৃহদারণ্যক উপনিষদ্‌ দ্বিতীয় অধ্যায় পঞ্চম ব্রাহ্মণ। (Brihadaranyaka Upanishad Second Chapter Fifth Brahmin in Bengali languag…
https://upanishadinbengali.blogspot.com/2025/01/brihadaranyaka-upanishad-second-chapter.html 35/67

পার্থিব জীবদের সাথে মানুষের যেসব প্রভেদ আছে, তার মধ্যে সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য
হল 'ভাষা'। এই রকম বাক্‌-শক্তির অধিকারী, কথা বলার ক্ষমতা, আর কোন পার্থিব জীবের
মধ্যে দেখা যায় না। আমরা আগে (৯।৩ অংশে) উল্লেখ করেছি যে বাকের হন্তকার নামক স্তন
পান করে মনুষ্যগণ জীবন ধারণ করে। এই হন্তকারের প্রভাবে আমাদের মন বাঙ্‌ময়। হন্ত
শব্দটি হন্ ধাতু থেকে হয়েছে। হন্ অর্থে হনন করা। আকাশ, যা অশরীরী, যেখানে সব
আকার, আয়তন বিলুপ্ত হয়েছে, তার বীজ মন্ত্র হল হং। এই আকাশ থেকেই আবার সব
প্রকাশ পায় এবং মূর্ত্ত হয়। এই মূর্ত্ত হবার শেষ পর্যায়ে বা অন্তে, মন থেকে বাক্য সকল প্রকাশ
পায়। আমাদের মন থেকে বাক্য প্রকাশ হচ্ছে, ইন্দ্রিয় সকল মনের দ্বারা পরিচালিত হচ্ছে, এবং
এই ভাবে আমরা কর্ম্মময় হয়েছি, আমাদের ভৌতিক স্থিতি সাধিত হয়েছে। আবার এই দৈব
মন থেকে স্থূল বিশ্ব (physical universe) সৃষ্টি হয়েছে। এই বহির্বিশ্ব ব্রহ্মার মনে সৃষ্ট, এবং
তাঁর বাক্য সকল। এর নাম হন্ত; হন্ (হনন, আকাশ) + ত (অন্ত, মর্ত্ত)। এই জন্য আমরা
মূর্ত্ত, মর্ত্ত; এবং এই মর্ত্তকে চেতনার বাঙ্‌ময় মূর্ত্তি বলে জানাই আমাদের মনুষ্যত্বের সার্থকতা।
 এই জন্য বৃহদারণ্যক উপনিষদে বলা হয়েছে ----- "মনুষ্যরা (মনুষ্যা) মনে (মন্বন্তে) করে
ব্রহ্ম বিদ্যার দ্বারা সব হব (ভবিষ্যন্ত)"। (বৃহদারণ্যক উপনিষদ্‌, মন্ত্র ১।৪।৯ দ্রষ্টব্য।) স্থূল
বিশ্বকে চেতনার বাঙ্‌ময় মূর্ত্তি বলে জানার নাম ঋক্‌বেদ পাঠ করা। ঋক্‌ অর্থে যিনি 'ঋ' বা
গতিশীলা, যা 'ক্‌' বা বাক্‌ বা বর্ণ-বিচ্ছুরণময়ী। এই জন্য বৃহদারণ্যক উপনিষদে বলা হয়েছে
'বাক্‌ এব ঋগ্বেদা' --- বাক্‌ই ঋক্‌ বেদ।(বৃহদারণ্যক উপনিষদ্‌, মন্ত্র ১।৫।৫ দ্রষ্টব্য।)
হন্ত শব্দের একটি অর্থ হল যে এই শব্দের দ্বারা 'বিস্ময়' বা 'আশ্চর্য' বোধ প্রকাশ করা হয়।
এই বিশ্বকে দেখে 'বিস্মিত' বা 'আশ্চর্য' হওয়া মানুষের স্বাভাবিক প্রবণতা, এবং তাই এই
বিশ্বের মূল কে জানার জন্য মানুষ আবহমান কাল থেকে আগ্রহী।
১৪শ মন্ত্র।
অয়মাত্মা সর্ব্বেষাং ভূতানাং মধ্বস্যাত্মনঃ সর্ব্বাণি ভূতানি মধু যশ্চায়স্মিন্নাত্মনি
তেজোময়ো'মৃতময়ঃ পুরুষঃ যশ্চায়মাত্মা তেজোময়ো'মৃতময়ঃ পুরুষঃ অয়মেব স যো'য়মাত্মা
ইদমৃতম্‌ ইদং ব্রহ্ম, ইদং সর্ব্বম্‌।।১৪।।
১৪।১।অন্বয়-অর্থ।
অয়ম্‌ (এই) আত্মা (আত্মা) সর্ব্বেষাং (সকল) ভূতানাং (ভূত সকলের) মধু (মধু), অস্য
(এই) আত্মনঃ (আত্মার) সর্ব্বাণি (সকল) ভূতানি (ভূত) মধু (মধু); যঃ চ অয়ম্‌ (যে এই)
অস্মিন্‌ (এই) আত্মনি (আত্মাতে) তেজোময়ঃ (তেজোময়) অমৃতময়ঃ (অমৃতময়) পুরুষঃ
(পুরুষ), যঃ চ অয়ম্‌ (এবং যে এই) আত্মা (আত্মা) তেজোময়ঃ (তেজোময়) অমৃতময়ঃ
(অমৃতময়) পুরুষঃ (পুরুষ), অয়ম্‌ এব (এই-ই) স (সে) যঃ (যে) অয়ম্‌ (এই) আত্মা
(আত্মা); ইদম্‌ (ইহা) অমৃতম্‌ (অমৃত), ইদং (ইহা) ব্রহ্ম (ব্রহ্ম) ইদং (ইহা) সর্ব্বম্‌ (সব)।
১৪।২। অর্থ।
1/23/25, 11:13 PM দধীচি উক্ত মধুবিদ্যা। বৃহদারণ্যক উপনিষদ্‌ দ্বিতীয় অধ্যায় পঞ্চম ব্রাহ্মণ। (Brihadaranyaka Upanishad Second Chapter Fifth Brahmin in Bengali languag…
https://upanishadinbengali.blogspot.com/2025/01/brihadaranyaka-upanishad-second-chapter.html 36/67

এই আত্মা ভূত সকলের মধু, সকল ভূত এই আত্মার মধু; যে এই আত্মাতে তেজোময়
অমৃতময় পুরুষ, এবং যে এই আত্মা তেজোময় অমৃতময় পুরুষ, এই-ই সে, যে এই আত্মা;
ইহা অমৃত, ইহা ব্রহ্ম, ইহা সব।
১৪।৩। সংক্ষিপ্ত ব্যাখ্যা এবং নিরুক্তি।
আত্মা শব্দটি আত্মন্‌ শব্দ থেকে হয়েছে। অত্‌ এবং অন্ এই দুই ধাতু থেকে আত্মন্‌ শব্দটি
হয়েছে। অত্‌ অর্থ ব্যাপ্ত হওয়া, এবং অন্ অর্থে প্রাণময় (অন-ময়) হওয়া। যে 'নিজ', বা
'আত্মবোধ' সর্ব্বত্র প্রাণরূপে ব্যাপ্ত হয়েছেন, তিনি আত্মা বা আত্মন্‌। এঁকে আমরা আমাদের
আমিত্বের মূলে নিজবোধ বা আত্মবোধ বলে অনুভব করছি। ইনি সদা বর্ত্তমান, এবং সর্ব্ব
বোধ এই নিজবোধের উপর ফুটে উঠছে। আমরা যখন নিদ্রিত হই, এই আত্মস্বরূপ যেমন
তেমনই থাকেন; সেইজন্য, নিদ্রার সময় আমাদের  অস্তিত্ব বোধ না থাকলেও, জাগ্রত হলে
আমরা উপলব্ধি করি যে 'নিদ্রিত' হয়েছিলাম। একই কারণে আমাদের মৃত্যুর সংস্কার আছে;
কেননা মৃত্যুতে এবং দেহান্তর অবস্থায় এই আত্মা বা আত্মস্বরূপ যেমন তেমনই থাকেন। একই
আত্মা, সর্ব্বভূতের আত্মা, এবং সব হয়েও, যেমন তেমনি থাকেন।
১৪।৩।১। অক্ষর আত্মা, ক্ষর আত্মা, অনুপ্রবিষ্ট আত্মা, প্রত্যক্‌ আত্মা, পরমাত্মা।
এই আত্মা সর্ব্বভূতের আত্মা, এবং সর্ব্বভূতরূপে নিজেকে সৃষ্টি করেছেন, এবং সর্ব্বরূপে নিজেকে
সৃষ্টি করেও, ইনি যেমন তেমনই রয়েছেন---- স্থির, অপরিণামী, নিজমাত্র স্বরূপ। যেহেতু সবাই
এঁর থেকে ক্ষরিত হয়েছে বা হচ্ছে, এবং ক্ষরণ সত্ত্বেও ইনি অক্ষয়, তাই এঁকে অক্ষর বলা হয়।
আর এই যে আমরা এঁর থেকে ক্ষরিত হয়েছি, তাই আমরা ক্ষর আত্মা। আমরা ক্ষরণশীল বা
নশ্বর হলেও, এই অক্ষর আত্মা আমাদের মূল এবং আমাদের অন্তরে বিদ্যমান। এই যে
আমাদের অন্তরে ইনি বিদ্যমান, প্রত্যেকের মধ্যে ইনি রয়েছেন, এই স্বতন্ত্র স্বতন্ত্র ভাবে দেখে,
এঁকে অনুপ্রবিষ্ট আত্মা বলা হয়। সর্ব্ব জীবে, সর্ব্ব ভূতে এই আত্মা অনুপ্রবিষ্ট হয়েছেন। এঁকে
প্রত্যক্‌ আত্মা বলা হয়, কেননা আমাদের প্রত্যেক বোধ, প্রতি অনুভূতির মূলে বা পিছনে এই
আত্মা বা নিজবোধ রয়েছেন। নিজে না থাকলে কোন কিছু অনুভূত হয় না। তাই আমরা যদি
পূর্ব্ব-দিক্‌, বা যে দিকে আমার অনুভূতিগুলি ফুটছে, বা যেদিকে এই দৃশ্যমান বিশ্ব, সেই দিক্‌
থেকে মুখ ঘুড়িয়ে পিছনে বা প্রত্যক্‌ দিকে তাকাই, তবে প্রথমেই যাঁকে দেখতে পাই তিনি এই
নিজবোধ স্বরূপ আত্মা। 
এই নিজবোধ স্বরূপই অক্ষর এবং ক্ষর, এই জন্য এঁকে পরমাত্মা বলা হয়।অক্ষরত্ব বা
অক্ষয়ত্ব, এবং ক্ষরণশীলতা এই একই আত্মার মহিমা। 
১৫শ মন্ত্র।
স বা অয়মাত্মা সর্ব্বেষাং ভূতানাং অধিপতিঃ সর্ব্বেষাং ভূতানাং রাজা তদ্যথা রথনাভৌ
চ রথনেমৌ চারাঃ সর্ব্বেঃ প্রতিষ্ঠিতা এবমেবাস্মিন্নাত্মনি সর্ব্বাণি ভূতানি সর্ব্বে দেবাঃ সর্ব্বে প্রাণাঃ
সর্ব্ব এত আত্মানঃ সমর্পিতা।।১৫।।
১৫।১।অন্বয়-অর্থ।
1/23/25, 11:13 PM দধীচি উক্ত মধুবিদ্যা। বৃহদারণ্যক উপনিষদ্‌ দ্বিতীয় অধ্যায় পঞ্চম ব্রাহ্মণ। (Brihadaranyaka Upanishad Second Chapter Fifth Brahmin in Bengali languag…
https://upanishadinbengali.blogspot.com/2025/01/brihadaranyaka-upanishad-second-chapter.html 37/67

সঃ বা অয়ম্‌ (সেই এই) আত্মা (আত্মা) সর্ব্বেষাং (সকল) ভূতানাং (ভূতের) অধিপতিঃ
(অধিপতি) সর্ব্বেষাং (সকল) ভূতানাং (ভূতের) রাজা (রাজা) তৎ (তা) যথা (যেমন)
রথনাভৌ (রথের নাভিতে) চ রথনেমৌ চ (এবং রথের নেমিতে) অরাঃ (অরা) সর্ব্বেঃ (সকল)
প্রতিষ্ঠিতা (প্রতিষ্ঠিত) এবম্‌ এব (এই প্রকারেই) অস্মিন্ আত্মনি (এই আত্মাতে) সর্ব্বাণি
ভূতানি (সকল ভূত) সর্ব্বে দেবাঃ (সকল দেবগণ) সর্ব্বে প্রাণাঃ (প্রাণের সকল প্রবাহ) সর্ব্ব এত
আত্মানঃ (এই সকল আত্মা; এই সকল আত্মবোধ যুক্ত সত্ত্বারা) সমর্পিতা (সমর্পিত;
প্রতিষ্ঠিত)।
১৫।২।অর্থ।
সেই এই আত্মা সকল ভূতের অধিপতি সকল ভূতের রাজা; তা, যেমন রথের নাভিতে এবং
রথের নেমিতে অরা সকল প্রতিষ্ঠিত, এই প্রকারেই এই আত্মাতে সকল ভূত, সকল দেবগণ,
প্রাণের সকল প্রবাহ, এই সকল আত্মা (এই সকল আত্মবোধ-যুক্ত সত্ত্বারা) সমর্পিত
(প্রতিষ্ঠিত)।
১৫।৩। সংক্ষিপ্ত ব্যাখ্যা এবং নিরুক্তি।
এই আত্মা একান্ত স্থির, এঁতে সকল প্রাণ চাঞ্চল্য, কালের সর্ব্বগতি এক আত্মবোধে বিলীন হয়ে
গেছে। ইনি যেখানে প্রাণ, সেখানে নিজের থেকে আলাদা হয়ে, দ্বিতীয় হয়েও ইনি নিজেতে বা
আত্মত্বে সেই দ্বিতীয়তাকে ধরে রেখেছেন এবং নিয়ন্ত্রণ করছেন। এই জন্য এঁকে অধিপতি বলা
হয়েছে।আধিপত্য বা নিয়ন্ত্রণ করার অর্থ হল নিজেতে নিজের খণ্ড, খণ্ড, দ্বিতীয় সত্ত্বাগুলিকে
নিজেতে ফিরিয়ে নেওয়ার জন্য, নিজেতে বিলীন করার জন্য ক্রিয়াময় হওয়া। নিজেতে বিলীন
হওয়া মানে নিজেকে পূর্ণরূপে, চিরকালের জন্য ফিরে পাওয়া। নিজেকে নিজের মধ্যে যত রকমে
পাওয়া যায় বা জানা যায়, তার নাম বেদ। এই জন্য এই আত্মা মধুময় এবং আমরা সকলে এঁর
মধু।
কাল বা প্রাণ গতির যে ভঙ্গিমা, বা কালের যে অবয়ব, তার নাম রথ। আমরা প্রত্যেকেই
রথারূড়। রথ = (ঋ+অ)+থ = ঋ বা গতির স্থির (থ) রূপ, বা গতির চেহারা। এই প্রাণ বা
কালের চক্রবৎ গতিই রথের চক্র বা চাকা। এই চক্রের কেন্দ্রে স্থিত আত্মা বা প্রাণ; এই
কেন্দ্রকেই রথের 'নাভি' বলা হয়েছে। চক্রের কেন্দ্র থেকে যেমন শলাকাগুলি (spokes) পরিধি
(নেমি) পর্যন্ত বিস্তৃত, সেই রকম এই আত্মা, প্রাণরূপে এই কাল চক্রের নেমি অব্দি বিস্তৃত।
প্রাণের এই বিস্তারই 'অরা'। এই বিস্তারের স্তরে স্তরে সপ্তলোক রয়েছে; সর্ব্ব ভূত, সকল দেবগণ,
সর্ব্ব প্রাণী, সকল সত্ত্বারা প্রতিষ্ঠিত। 
১৬শ মন্ত্র।
ইদং বৈ তন্মধু দধ্যঙ্‌ঙাথর্ব্বণো'শ্বিভ্যামুবাচ তদেতদৃষিঃ পশ্যন্নবোচৎ। তদ্বান্নরাসনয়েদংস
উগ্রমাবিষ্কৃণোমি তন্যতুর্ন বৃষ্টিং দধ্যঙ্‌হ যন্মধ্বাথর্বণো বামশ্বস্য শীর্ষ্ণা প্রয়দোমুবাচেতি।।১৬।। 
১৬।১।অন্বয়-অর্থ।
ইদং (ইহা;এই) বৈ (অবশ্যই) তৎ (সেই) মধু (মধু) দধ্যঙ্‌ (দধ্যঙ্‌) আথর্ব্বণঃ
(আথর্ব্বণ) অশ্বিভ্যাম্‌ (অশ্বিদ্বয়কে) উবাচ (বলেছিলেন)। তৎ এতৎ (সেই এই; সেই এই মধু
1/23/25, 11:13 PM দধীচি উক্ত মধুবিদ্যা। বৃহদারণ্যক উপনিষদ্‌ দ্বিতীয় অধ্যায় পঞ্চম ব্রাহ্মণ। (Brihadaranyaka Upanishad Second Chapter Fifth Brahmin in Bengali languag…
https://upanishadinbengali.blogspot.com/2025/01/brihadaranyaka-upanishad-second-chapter.html 38/67

বিদ্যা) ঋষিঃ (ঋষি; সত্যদ্রষ্টা) পশ্যন্ (দর্শন করে) অবোচৎ (বলেছিলেন)  
তৎ (সেই) বাম্‌ (তোমাদের  দুজনকে) নরা (নরা=নরাণাম্‌= নরদের) সনয়ে (প্রাপ্তির জন্য)
দংসঃ (দংস) উগ্রম্‌ (এই মুহূর্ত্তেই) আবিঃ (এইখানেই) কৃণোমি (করবো/প্রকাশ করবো)
তন্যতুঃ (স্তনয়িত্নু বা মেঘগর্জ্জনের) ন (মতো;যেমন) বৃষ্টিং (বৃষ্টি;বৃষ্টি প্রকাশ করে) দধ্যঙ্‌
(দধ্যঙ্‌;দধ্যঙ্‌ বা দধীচি ঋষি) হ যৎ (অবশ্যই যে ) মধু (মধু) আথর্বণো (আথর্ব্বণ) বাম্‌
(তোমাদের দুই জনকে) অশ্বস্য (অশ্বের; প্রাণের) শীর্ষ্ণা (শীর্ষ্ণের দ্বারা) প্র (প্রকৃষ্ট) যৎ ইম্‌ (যা
এই) উবাচ (বলেছিলেন) ইতি।
১৬।২। অর্থ।
ইহা অবশ্যই সেই মধু (যা) দধ্যঙ্‌-আথর্ব্বণ অশ্বিদ্বয়কে বলেছিলেন। সেই এই মধু
বিদ্যাকে দর্শন করে (বিজ্ঞাত হয়ে) ঋষি (সত্যদ্রষ্টা) বলেছিলেন---"সেই  দংস
(রূপী) তোমাদের দুজনকে, নরদের প্রাপ্তির জন্য, এই মুহূর্তেই, এইখানেই প্রকাশ করবো,
স্তনয়িত্নু বা মেঘগর্জ্জনে যেমন বৃষ্টি (প্রকাশিত হয়)। দধ্যঙ্‌-আথর্ব্বণ ঋষি অবশ্যই যে মধু
(বিদ্যা) তোমাদের দুই জনকে অশ্বের (প্রাণের) শীর্ষ্ণের দ্বারা যা এই প্রকৃষ্ট (বিদ্যা) (তা)
বলেছিলেন।"
১৬।৩। সংক্ষিপ্ত ব্যাখ্যা এবং নিরুক্তি।
আমরা উপড়ে ব্রহ্মখণ্ড/সারাংশ নামক অংশে মধু শব্দের অর্থ ব্যাখ্যা করেছি : অবিনশ্বর,
আপরিণামী আত্মা, যাঁতে মৃত্যু বিধৌত হয়ে গেছে, যিনি মৃত্যুরও মৃত্যু, তিনি মধু। আর প্রাণ
হলেন দধি।দধি অর্থে যিনি সবাইকে ধারণ করেছেন এবং চলেছেন। দধ্‌ ধাতুর অর্থ 'ধারণ'
করা, আর 'ই' অর্থে 'গতি'। এই আত্মা, বিশ্বাত্মা, হৃদয়ের দ্বারা আমাদের ধারণ করে ছুটছেন।
ইনি দধিক্রা---ধারণ করে ক্রমণ করছেন। এই দধিক্রার সর্পবৎ গতির (সসর্পরি) কথা ঋক্‌
বেদে উক্ত হয়েছে।(সাপেরা বুকে হাঁটে।)  এই আত্মস্বরূপ প্রাণকে যিনি দেখেছিলেন, তিনি
দধিক্রা ঋষি, যাঁর অন্যনাম দধিক্রা-আথর্বণ বা দধ্যঙ্‌ আথর্বণ, এবং দধীচি ঋষি। আথর্বণ
অর্থে অথর্ব্বর পুত্র। ব্রহ্মার* থেকে অথর্ব্ব এবং অথর্ব্বর থেকে দধ্যঙ্‌ আথর্বণ, দধ্যঙ্‌ আথর্বণ
থেকে অশ্বিনীকুমারদ্বয় (অশ্বিদ্বয়) এই বিদ্যা পেয়েছিলেন। (মুণ্ডক উপনিষদ্‌ ১।১।১ এবং
বৃহদারণ্যক উপনিষদ্‌ ২।৬।৩ মন্ত্র দ্রষ্টব্য।) (*আমরা পূর্ব্বে ব্রহ্মাকে বর্ণনা করেছি।)
১৬।৩।১। অশ্ব, অশ্বি এবং প্রাণ। স্ব, শ্ব, শ্বি, শ্বন্‌।
অশ্বি এবং অশ্ব শব্দদুটিশ্বি ধাতু থেকে হয়েছে। শ্বি অর্থে স্ফীত হওয়া, বর্দ্ধিত হওয়া। প্রাণই
'অশ্ব', কেননা প্রাণ স্ফীত হন, বর্দ্ধিত হন। প্রাণ বা  বায়ুর এই স্ফীতির কথা উপনিষদে
একাধিক স্থানে উক্ত হয়েছে। আবার উপনিষদে বলা হয়েছে যে মুখ্য প্রাণ বা মহাপ্রাণ অশ্ব নাম
ধারণ করে মনুষ্যদের মৃত্যুর পরপারে বহন করে নিয়ে গিয়েছিলেন।(বৃহদারণ্যক উপনিষদ্‌ ১।১।
২ মন্ত্র দ্রষ্টব্য।)
'শ্ব' শব্দটি কালবাচক। যেমন শাশ্বত অর্থে চিরন্তন, এবং নশ্বর অর্থে যা ক্ষণস্থায়ী। 'শ্ব' এবং
'শ্বন্‌' শব্দের একটি অর্থ 'কুকুর'। তার কারণ, কুকুররা প্রভুভক্ত; তার প্রভুর যে শাসন,
অর্থাৎ যে কাল তার উপর আধিপত্য করে সে স্বভাবতই বা সহজেই তার অনুগত হয়। 
1/23/25, 11:13 PM দধীচি উক্ত মধুবিদ্যা। বৃহদারণ্যক উপনিষদ্‌ দ্বিতীয় অধ্যায় পঞ্চম ব্রাহ্মণ। (Brihadaranyaka Upanishad Second Chapter Fifth Brahmin in Bengali languag…
https://upanishadinbengali.blogspot.com/2025/01/brihadaranyaka-upanishad-second-chapter.html 39/67

যিনি আত্মা বা স্ব, তাঁতে কোন ক্রিয়াময়তা নেই। তাঁতে প্রাণ অপ্রাণ হয়, কাল অকাল হয়ে
যায়।আবার তাঁর থেকেই প্রাণ বা কাল জাত হয়। এই আত্মা স্বয়ংশক্তি, ইনি নিজেই নিজেকে
প্রাণ বা কালরূপে জাত করেন। এই শক্তিযুক্ত স্ব বা আত্মাই শ্ব। অশ্ব= অয়ম্‌ শ্ব----এই শ্ব,
এই স্বয়ংশক্তি আত্মা; ইনি অশ্ব হয়ে আমাদের বহন করে কালের পরপারে নিয়ে চলেছেন।
এই মহাপ্রাণের গতির যাঁরা দ্রষ্টা, বা বিজ্ঞাতা, তাঁরা 'অশ্বি' বা 'অশ্বিন্‌'। এবং তাই অশ্ব-
বিশারদ; এঁরা এই অশ্বের গতি-প্রকৃতির বিষয়ে অভিজ্ঞ। দেবক্ষেত্রে এই অশ্বিনরাই
'অশ্বিনীকুমারদ্বয়', বা 'অশ্বিদ্বয়'। এই অশ্বিনদের সংখ্যা দুই, কেননা, এই আত্মা যখনই
সক্রিয় হন, ইনি দ্বিধা হন, অন্তর এবং বহিঃ এই দুই দিকে প্রাণরূপে প্রবাহিত হন। এই প্রাণের
দুই গতি আমাদের মধ্যে শ্বাস-প্রশ্বাস ক্রিয়াতে পরিণত হয়েছে। (প্রশ্নোপনিষদে, বাহির থেকে
অন্তরে যে প্রাণগতি বা প্রাণবায়ুর প্রবাহ তাকে উচ্ছ্বাস, এবং অন্তর থেকে বাহিরে প্রাণবায়ুর
প্রবাহকে নিশ্বাস বলা হয়েছে। (প্রশ্নোপনিষদ মন্ত্র ৪।৪ দ্রষ্টব্য।) এই শ্বাস-প্রশ্বাস বা প্রাণগতিকে
সংযমন করে এঁরা যেকোন রোগ থেকে এবং জড়া থেকে আমাদের মুক্তি দিতে পারেন। এই
জন্য এঁরা দেব-বৈদ্য বলে প্রসিদ্ধ। 
আমরাআগে উল্লেখ করেছি, যে প্রাণই শ্বি, অর্থাৎ প্রাণই স্ফীত হন, বর্দ্ধিত হন। প্রাণ স্ফীত বা
বর্দ্ধিত হন বলেই, আমরা যা কিছু খাই, তজ্জনিত তৃপ্তি এবং পুষ্টি, আমাদের সর্বাঙ্গে,
আমাদের সাথে যুক্ত যে দেবগণ তাঁদের মধ্যে এবং আমাদের সাথে যুক্ত অন্যান্য প্রাণীদের
মধ্যে ছড়িয়ে পড়ে। (ছান্দোগ্যপনিষদ্‌ ৫।১৯।১ এবং পরবর্ত্তী মন্ত্রগুলি দ্রষ্টব্য।)
প্রাণের শ্বি বা স্ফীত হওয়ার ধর্ম্মকে লক্ষ্য করে ঋষিরা প্রাণকে বায়ু এবং সূত্রাত্মা বলে অভিহিত
করেছেন। এই প্রসঙ্গে আমরা ৪।৩, ৪।৩।১, এবং ৪।৩।২ অংশে বিশদ বিবরণ দিয়েছি। (১৯।৩।
৬ অংশে অশ্বৎ এবং অশ্ব শব্দ ব্যাখ্যাত হয়েছে।)
১৬।৩।২। অশ্বশীর্ষ্ণ (অশ্বশির) দধ্যঙ্‌-আথর্ব্বণ ঋষি এবং অশ্বিদ্বয়।
এই মন্ত্রে উদ্ধৃত হয়েছে যে দধ্যঙ্‌-আথর্ব্বণ ঋষি বা ঋষি দধীচি, অশ্বশির বা প্রাণ-শির হয়ে,
অর্থাৎ প্রাণ-মুখে অশ্বিদের এই মধুবিদ্যা দিয়েছিলেন, যে বিদ্যার দ্বারা উপলব্ধি হয় যে সর্ব্বত্র
একই আত্মা, একই 'নিজ' রয়েছেন। একাত্ম-স্বরূপতার জন্য, তাঁর প্রতি রূপের সাথে প্রতি রূপ
মধুময়তার দ্বারা আবদ্ধ, এবং সবাই এই মধুময় আত্মস্বরূপে মধুময়তার দ্বারা যুক্ত। এই আত্মা
ব্রহ্ম, কেননা ইনি এক থেকেও অনন্তে অনন্তে বহু হয়ে বর্দ্ধিত হচ্ছেন, বৃহৎ হচ্ছেন এই
মধুময়তায়। 
দধ্যঙ্‌ শব্দটি দধ্যচ্‌ শব্দটির প্রথমপুরুষের একবচন রূপ। দধ্যচ্‌ = দধি+অচ্‌; দধি= প্রাণ;
অচ্ শব্দের (ধাতুর) অর্থ হয়, 'বক্র* গতিতে চলা', 'কথা বলা'। আমাদের মুখ থেকে যে কথা
(বচন) প্রকাশিত হচ্ছে, তা প্রাণই। প্রাণই বাক্যের আকারে মুখ থেকে উচ্চারিত হচ্ছেন।
স্বয়ংশক্তি আত্মা বাক্‌ রূপে নিজেকে চূর্ণ চূর্ণ করে, এক একটি প্রাণময় সত্ত্বা নিয়ে অনবরত
স্ফুরিত হচ্ছেন। এর নাম কথা বলা। মুখ্য প্রাণ বা মহাপ্রাণ কে ছান্দোগ্য উপনিষদে 'আয়াস্য'
প্রাণ বলা হয়েছে; আস্য অর্থে মুখ। ছান্দোগ্য উপনিষদে বলা হয়েছে, "এতম্‌ উ এব আয়াস্য
মন্যন্ত আস্যাদ্‌ যৎ অয়তে---এঁকে (মুখ্যপ্রাণকে) আয়াস্য মনে করে, যেহেতু আস্য (মুখ) থেকে
1/23/25, 11:13 PM দধীচি উক্ত মধুবিদ্যা। বৃহদারণ্যক উপনিষদ্‌ দ্বিতীয় অধ্যায় পঞ্চম ব্রাহ্মণ। (Brihadaranyaka Upanishad Second Chapter Fifth Brahmin in Bengali languag…
https://upanishadinbengali.blogspot.com/2025/01/brihadaranyaka-upanishad-second-chapter.html 40/67

ইনি বহির্গত হন"। (ছান্দোগ্য উপনিষদ্‌ মন্ত্র ১।২।১২ দ্রষ্টব্য।) 'অয়তে' অর্থে প্রবাহিত হওয়া,
বহির্গত হওয়া; 'ই' ধাতু থেকে 'অয়তে' শব্দটি হয়েছে।  
এই যে আয়াস্য প্রাণ, ইনি প্রাণধারা হয়ে সর্ব্বদিকে গতি নিচ্ছেন, মুখ থেকে বহির্গত হচ্ছেন।
দধ্যঙ্‌-আথর্ব্বণ ঋষি এই প্রাণধারার দ্রষ্টা।
(*বক্রতার তাৎপর্য হল, যা প্রকাশ পায়, তা প্রকাশ হতে হতে, যুগপৎ উৎসের দিকে ফিরে
যাবার একটি গতি নেয়।)
১৬।১৩।৩।দংস। মধুময় অশ্বিদ্বয়।
 'দ' অর্থে বাক্‌; উপনিষদে 'দ' কে দৈবী বাক্‌ বলা হয়েছে; বলা হয়েছে যে স্তনয়িত্নু থেকে 'দ, দ,দ' এই
দৈবীবাক্‌ উচ্চারিত হয়, যে দৈবী বাক্‌ প্রজাপতি ব্রহ্মার থেকে  দেবতারা, মনুষ্যরা এবং অসুররা
শুনেছিল। দেবতারা 'দ' অর্থে বুঝেছিলেন 'দমন', মনুষ্যরা বুঝেছিল 'দান', এবং অসুররা বুঝেছিল
'দয়া। (বৃহদারণ্যক উপনিষদ্‌ ৫ম অধ্যায়, দ্বিতীয় ব্রাহ্মণ (খণ্ড) দ্রষ্টব্য। )
এই মন্ত্রে অশ্বিদের 'দংস' বলা হয়েছে, তার কারণ, অশ্বিদ্বয়, প্রাণ-মুখে এই বিদ্যা পেয়ে জেনেছিলেন
যে, সকল বাক্য এই প্রাণের বা আত্মারই বাঙ্‌ময় প্রকাশ।দং = বাক্‌; সঃ/সা - সে; সে বাক্‌ই;
আত্মশক্তি বাক্‌ই নিজেকে বা প্রাণকে মূর্ত্ত করে সব হয়েছেন। এইটি না জানলে 'দংস' হয়ে যায়
'দংশ', কালের দংশন। 'স' অক্ষরটি 'সম', 'সহ' ইত্যাদি অর্থ বা ভাব প্রকাশ করে। 'শ' অক্ষরটি
'শাসন', শমন/প্রশমন 'ইত্যাদি অর্থ বা ভাব প্রকাশ করে।
প্রাণের বা দধির যে নিরন্তর ধারা, সেই ধারা বা গতির অভিমানী যে দেবতা বা চিন্ময় ব্যক্তিত্ব, তাঁর
(বা তাঁদের) নাম অশ্বিন্‌। যেখানে যেখানে এই প্রাণগতি অবরুদ্ধ, স্তিমিত, বা প্রতিকূল, সেখানে
সেখানে এঁদের আবির্ভাবে তা প্রবহমান, উজ্বল এবং অনুকূল হয়। এই জন্য বেদে এঁদেরকে
বারংবার মধুময় বলা হয়েছে।
ঋক্‌ বেদের একটি মন্ত্র উদ্ধৃত করা হল :
ঋক্‌ বেদ ৪র্থ মণ্ডল, ৪৫ সূক্ত, ৩য় মন্ত্র।
মধ্বং ( মধু ) পিবতং (পান কর) মধুপেভিঃ (মধুপায়ী) আসভিঃ (আস্যদের দ্বারা;
মুখগুলির দ্বারা) উত (এবং) প্রিয়ং (প্রিয়) মধুনে (মধুর জন্য) যুঞ্জাথাং (যুক্ত করো) রথম্‌
(রথকে)।
আ বর্ত্তনিম্‌ (সমস্ত বর্ত্তনিকে) মধুনা (মধুর দ্বারা > মধুকে পাবার যে কামনা তার দ্বারা> মধুর
জন্য) জিন্বথঃ (জীবন্ত করো; চেতায়িত করো) পথো (পথ সকলকে) দৃতিম্‌ (দৃতিকে; বীর্য্যকে;
দৃঢ়তাকে) বহেথে (বহন করো) মধুমন্তম্‌ (মধুময়) অশ্বিনা (ওগো অশ্বিদ্বয়) ।। 
ওগো মধুময় অশ্বিদ্বয়! মধুপায়ী মুখগুলির দ্বারা মধু পান করো, এবং মধুর জন্য (মধু প্রাপ্তির
জন্য) যুক্ত করো প্রিয় রথকে; সমস্ত বর্ত্তনিকে, পথসকলকে চেতায়িত করো, বহন
করো দৃঢ়তাকে। (ঋক্‌ বেদ মন্ত্র ৪।৪৫।৩।)
র্ত্তনি

ন্দ্রিদেধ্যদিয়েরাবাহিবং
1/23/25, 11:13 PM দধীচি উক্ত মধুবিদ্যা। বৃহদারণ্যক উপনিষদ্‌ দ্বিতীয় অধ্যায় পঞ্চম ব্রাহ্মণ। (Brihadaranyaka Upanishad Second Chapter Fifth Brahmin in Bengali languag…
https://upanishadinbengali.blogspot.com/2025/01/brihadaranyaka-upanishad-second-chapter.html 41/67

এই যে আমাদের ইন্দ্রিয়গুলি, ওরাই পথ এবং বর্ত্তনি।ঐ ইন্দ্রিয়দের মধ্য দিয়ে আমরা বাহির এবং
অন্তরে গতাগতিময় হচ্ছি। আমরা যে ইন্দ্রিয়দের দ্বারা সক্রিয় হয়েছি, তা আসলে অশ্বিদ্বয়ের দ্বারা
পরিচালিত। যে পথ সকল দিয়ে দ্রষ্টা পুরুষ ইন্দ্র চলেন, তাদের নাম ইন্দ্রিয়, এবং ইন্দ্রকে সারথ্য
দেন অশ্বিরা। এই মন্ত্রে অশ্বিদের কাছে প্রার্থনা করা হয়েছে যে আমাদের সকল কর্ম্ম, সকল চাঞ্চল্য
যেন মধুময় হয়, যেন মধু স্বরূপ আত্মায় প্রতিষ্ঠিত হয়, এবং তার দ্বারা যে দৃঢ়তা প্রাপ্তি হয়, তা যেন
মধুময় অশ্বিরা, তাঁদের প্রিয় রথে, আমাদের জন্য বহন করে আনেন।
১৬।৩।৪। নাসত্য অশ্বিদ্বয়।
বেদে অশ্বিদ্বয়কে নাসত্য নামে সম্বোধন করা হয়েছে, কেননা এই প্রাণ নাসা বা নাসিকার মধ্য দিয়ে
অন্তর এবং বাহিরে গতাগতি করেন। নস্* এবং নাস্‌* এই দুইটি শব্দ বা ধাতু প্রাণের গতি সূচক।
'ন' বা অব্যক্ত থেকে অস্‌ বা অস্তিত্ব বোধ যেখানে প্রকাশ পায়, বা প্রাণ-প্রকাশের যে কেন্দ্র, তার
নাম 'নাসা'।অস্‌ অর্থে 'অস্তিত্ব' বোধময় হওয়া, সত্যবোধময় হওয়া, কোন একটি প্রকাশকে সত্য বা
অস্তিত্বময় করে সৃষ্টি করা। এই জন্য অশ্বিদ্বয় নাসত্য নামে প্রসিদ্ধ।
(* নস্= ন্‌+অস্‌; নাস্‌ = ন+ অস্‌ = ন+ আস্‌; অস্‌ অর্থে অস্তিত্ব বোধ ময় হওয়া, থাকা,
সত্যবোধময় বা সত্ত্বাবান্‌ হওয়া; আস্‌ অর্থে আসীন হওয়া,থাকা;  আস্‌ শব্দর আর একটি অর্থ,
'আস্য বা মুখ'।)
১৬।৩।৫। তৎ (সেই) বাম্‌ (তোমাদের  দুজনকে) নরা (নরা=নরাণাম্‌= নরদের) সনয়ে
(প্রাপ্তির জন্য) দংসঃ (দংস) উগ্রম্‌ (এই মুহূর্ত্তেই) আবিঃ (এইখানেই) কৃণোমি (করবো/প্রকাশ
করবো) তন্যতুঃ (স্তনয়িত্নু বা মেঘগর্জ্জনের) ন (মতো;যেমন) বৃষ্টিং (বৃষ্টি;বৃষ্টি প্রকাশ করে)--
-----সেই দংস (রূপী) তোমাদের দুজনকে, নরদের প্রাপ্তির জন্য, এই মুহূর্ত্তেই, এইখানেই
প্রকাশ করবো, স্তনয়িত্নু বা মেঘগর্জ্জনে যেমন বৃষ্টি (প্রকাশিত হয়)।
এই মন্ত্রে 'নরাসনয়ে' অর্থ, নরাণাম্‌ সনয়ে, বা নরদের ''সনি' বা 'প্রাপ্তির জন্য'। নর শব্দে
শুধু 'মনুষ্য'-ই বোঝায় না। নৃ অর্থে যা কিছু মূর্ত্ত হয়েছে, যা কিছু নর্ত্তনময় হয়েছে, বা প্রাণের
দ্বারা আবর্ত্তিত হচ্ছে। নৃত্‌ ধাতুর অর্থ 'নাচা', 'কোন কিছুকে প্রদর্শন করা, বা মুদ্রার দ্বারা
প্রকাশ করা'। প্রাণের থেকে যা কিছু মূর্ত্ত হয়েছে, তারা 'নর', তারা প্রাণ স্পন্দনে নরছে, নৃত্য
করছে। এই জন্য হংসরূপী মহাপ্রাণকে 'নৃসৎ' বলা হয়েছে। (ঋক্‌বেদ উক্ত ৪।৪০।৫ , অথবা
কঠোপনিষদ্‌ উক্ত ২।২।২ মন্ত্র দ্রষ্টব্য।)
তাই এই মধুবিদ্যা যা দধ্যঙ্‌-আথর্ব্বণ ঋষি (দধীচি ঋষি) অশ্বিদের দিয়েছিলেন, সেই বিদ্যাকে
লাভ করে আর এক ঋষি অশ্বিদ্বয়কে বলছেন যে নরদের প্রাপ্তির জন্য, স্তনয়িত্নু যেমন বৃষ্টিকে
প্রকাশ করে, সেইরকমই তিনি সর্ব্ব-সমক্ষে, তৎক্ষণাৎ অশ্বিদ্বয়কে প্রকাশ করবেন।
নরদের প্রাপ্তি অর্থে, এই প্রাণ প্রকাশের দ্বারা যে প্রাপ্তি, যে অমৃতত্ব লাভ হয়, সেই প্রাপ্তি। এই
প্রসঙ্গে উল্লেখযোগ্য যে, এই দেবতাদের আবির্ভাবের বিষয়ে 'তন্যতু' শব্দ প্রয়োগ করা হয়েছে।
তন্যতু শব্দটি তন্‌ ধাতু থেকে হয়েছে, এবং তন্‌ ধাতু স্তন্‌ ধাতু এবং 'স্তনয়িত্নু' শব্দটি হয়েছে।
এখানে 'তন্যতু' শব্দটির প্রকৃত অর্থ হল 'তনুময়তা'; যে শব্দ থেকে 'তনু', অর্থাৎ নিজের রূপ
বা আত্ম-বিস্তার সৃষ্টি হয়, সেই শব্দই 'স্তনয়িত্নু'। স্তনয়িত্নু থেকে বর্ষণ বা বৃষ্টি হয়; বৃষ্টি থেকে
অন্ন এবং অন্ন থেকে প্রজারা জন্মায়। (উপরে ৯।৩।১ অংশ দ্রষ্টব্য।)
1/23/25, 11:13 PM দধীচি উক্ত মধুবিদ্যা। বৃহদারণ্যক উপনিষদ্‌ দ্বিতীয় অধ্যায় পঞ্চম ব্রাহ্মণ। (Brihadaranyaka Upanishad Second Chapter Fifth Brahmin in Bengali languag…
https://upanishadinbengali.blogspot.com/2025/01/brihadaranyaka-upanishad-second-chapter.html 42/67

১৭শ মন্ত্র।
ইদং বৈ তন্মধু দধ্যঙ্‌ঙাথর্ব্বণো'শ্বিভ্যামুবাচ তদেতদৃষিঃ পশ্যন্নবোচদাথর্বণায়াশ্বিনাদধিচেশ্বং শিরঃ
প্রত্যৈরয়তং স বাং মধু প্রবোচদৃতায়ন্ত্বাষ্ট্রং যদ্দস্রাবপি কক্ষ্যং বামিতি।।১৭।।
১৭।১।অন্বয়-অর্থ।
ইদং (ইহা;এই) বৈ (অবশ্যই) তৎ (সেই) মধু (মধু) দধ্যঙ্‌ (দধ্যঙ্‌) আথর্ব্বণঃ
(আথর্ব্বণ) অশ্বিভ্যাম্‌ (অশ্বিদ্বয়কে) উবাচ (বলেছিলেন)। তৎ এতৎ (সেই এই; সেই এই মধু
বিদ্যা) ঋষিঃ (ঋষি; সত্যদ্রষ্টা) পশ্যন্ (দর্শন করে) অবোচৎ (বলেছিলেন), আথর্বাণায়
অশ্বিনা দধিচে (অশ্বিনা দধিচে আথর্বাণায়----হে অশ্বিদ্বয়, দধীচি আথর্বণকে) অশ্বশির
(অশ্বশির/প্রাণশির) প্রতি (প্রতি---দধীচি আথর্বণের প্রতি) ঐরয়তম্‌ (প্রেরণ করেছিলে), সঃ
(সে; সেই দধীচি) বাম্‌ (তোমাদের দুইজনকে) মধু (মধু) প্রবোচৎ (প্রকৃষ্ট রূপে বলেছিলেন)
ঋতায়ন্‌ (ঋত বা সত্যের দ্বারা গতিযুক্ত বা উদ্বুদ্ধ; ঋতায়ন= ঋত+ অয়ন = ঋত (সত্য
প্রকাশ) + অয়ন (নির্দিষ্ট অক্ষে বা পথে গতি; ঋতায়ন্‌= সত্য প্রকাশের জন্য উদবুদ্ধ) ত্বাষ্ট্রম্‌
(তষ্ট্রা-সম্বন্ধী; তষ্ট্রার থেকে প্রাপ্ত) যৎ দস্রৌ অপি কক্ষ্যং (যৎ অপি [যদিও] কক্ষ্যং [কক্ষের
অন্তরে স্থিত; গুপ্ত]) দস্রৌ (দস্রদ্বয়) বাম্‌ (তোমাদের দুজনকে [বলেছিলেন]) ইতি।
১৭।২।অর্থ।
ইহা অবশ্যই সেই মধু (মধু বিদ্যা) (যা) দধ্যঙ্‌-আথর্ব্বণ অশ্বিদ্বয়কে বলেছিলেন। সেই এই
মধুকে ঋষি (সত্যদ্রষ্টা) দর্শন করে বলেছিলেন : "হে অশ্বিদ্বয়, দধীচি-আথর্বণকে (দধ্যঙ্‌-
আথর্ব্বণকে) অশ্বশির (প্রাণশির) প্রেরণ করেছিলে। সেই দধীচি তোমাদের দুইজনকে মধু
(মধুবিদ্যা) প্রকৃষ্ট রূপে বলেছিলেন, ঋতের (সত্য প্রকাশের) দ্বারা উদ্বুদ্ধ হয়ে; তষ্ট্রার থেকে প্রাপ্ত
(বিদ্যা) যদিও গুপ্ত, (তত্রাচ) (হে) দস্রদ্বয় তোমাদের দুজনকে (বলেছিলেন)।
১৭।৩। সংক্ষিপ্ত ব্যাখ্যা এবং নিরুক্তি।
বেদে বা উপনিষদে কোন ঋষি, যে বিদ্যা বা যে বিশেষ আত্মশক্তির দ্রষ্টা, তাঁকে সেই নামে বা
সেই ভাবে অভিহিত করা হয়েছে, এবং অনেক সময় সেই বিদ্যার সাথে অভিন্ন ভাবে বর্ণনা
করা হয়েছে। এর কারণ হল: ব্রহ্ম বেদ বহ্মৈব ভবতি -----ব্রহ্মকে জেনে বহ্মই হয়। চেতনার
ধর্ম্মই হল তৎ-সারূপ্য নেওয়া। এই চেতনা বা বোধস্বরূপ যা জানেন বা বোধ করেন, তাই হন।
এই জন্যই, কর্ম্ম বা অনুভূতি অনুসারে আমাদের পরিণতি হয়, এবং ভবিষ্যৎ নির্দ্ধারিত হয়। 
এই মন্ত্রে দধ্যঙ্‌-আথর্ব্বণকে দধীচি বলেও সম্বোধন করা হয়েছে। উপরে ১৬।৩।২ অংশে,
আমরা দধ্যচ্‌ এবং দধ্যঙ্‌ শব্দের অর্থ যে দধি (প্রাণ) এবং অচ্‌ (কথা বলা) শব্দ থেকে হয়েছে
তা বলেছি। সুতরাং দধীচি অর্থে সেই ঋষি, যিনি সর্ব্বত্র প্রাণকে কথার আকারে প্রবাহিত হয়ে
রূপময় হতে দেখছেন। পরম আত্মস্বরূপ, যিনি প্রতি রূপ প্রকাশের দ্রষ্টা বা সেই রূপটির
ভোক্তা, তাঁর নাম ইন্দ্র বা ইদং দ্রষ্টা পুরুষ। ইনি দেখছেন যে ইনিই রূপময় হয়েছেন এবং সেই
রূপটিকে ভোগ করছেন। ইনি যে রূপময় হয়ে নিজেকে প্রজাত করছেন, বা প্রাণময় হয়ে জাত
হচ্ছেন, এই জন্য এঁর নাম প্রজাপতি। সুতরাং প্রজাপতির যে ভোক্তৃত্ব, তার নাম ইন্দ্র। এই যে
ইন্দ্র বা প্রজাপতি এঁর নাম ব্রহ্মা। ব্রহ্মার থেকে যিনি এই মধুবিদ্যা পেয়েছিলেন, তাঁর নাম
1/23/25, 11:13 PM দধীচি উক্ত মধুবিদ্যা। বৃহদারণ্যক উপনিষদ্‌ দ্বিতীয় অধ্যায় পঞ্চম ব্রাহ্মণ। (Brihadaranyaka Upanishad Second Chapter Fifth Brahmin in Bengali languag…
https://upanishadinbengali.blogspot.com/2025/01/brihadaranyaka-upanishad-second-chapter.html 43/67

আথর্ব্বণ-দধ্যঙ্‌। আমরা আগে উল্লেখ করেছি যে এই মধুবিদ্যা ব্রহ্মার থেকে অথর্ব্ব এবং
অথর্ব্বর থেকে দধ্যঙ্‌ আথর্বণ, দধ্যঙ্‌ আথর্বণ (দধীচি ঋষি) থেকে অশ্বিনীকুমারদ্বয় (অশ্বিদ্বয়)
পেয়েছিলেন। (উপরে ১৬।৩ অংশ দ্রষ্টব্য।) অথর্ব্ব অর্থে যিনি 'অথ' বা যা কিছু স্থায়িত্ব বা
স্থিতি নিয়েছে, তার মূলে যিনি; 'থ', বা 'থম্‌' অর্থে 'স্থিতি'। (ছান্দোগ্য উপনিষদ্‌ মন্ত্র ১।৩।
৬, ১।৩।৭ মন্ত্র দ্রষ্টব্য।) প্রাণের চাঞ্চল্য যেখানে আত্মসান্নিধ্যে স্তিমিত, যেখানে তারল্য লঘু
হয়ে জমাট বেঁধেছে, সেখানে ইনি 'দধি'। দধ্‌ অর্থাৎ 'ধরে আছেন'; সবাই, বা সকল প্রাণগতি
প্রাণেই বিধৃত। আবার দধ্‌ অর্থাৎ 'দান করছেন', নিজেকে দ্বিতীয় করে বইছেন, যে যা চায়, যে
যা হবে, তাকে তাই দেবার জন্য। আর যত রূপ অনন্তে অনন্তে ফুটেছে, তাদেরকে স্থায়িত্ব দেবার
জন্য, স্ব স্ব অক্ষে আবর্ত্তিত হতে সক্ষম করছেন এই অশ্বিদ্বয়।নাসার মধ্য দিয়ে আবর্ত্তিত হয়ে,
এই নাসত্যদ্বয় (অশ্বিদ্বয়) তাদেরকে স্ব-স্ব সৌরভে সুরভিত করছেন,গন্ধময় করছেন। যে, যে
অক্ষে রয়েছে, সেইটি তার থাকার জায়গা বা কক্ষ, আর সেই কক্ষে তাকে, বা তার প্রাণকে
আবর্ত্তিত করতে নিয়ন্ত্রণ করছেন এই অশ্বিরা; এই মন্ত্রে কক্ষ শব্দ যে ব্যবহার করা হয়েছে,
এইটি তার একটি তাৎপর্য।
১৭।৩।১। ত্বষ্টৃ----ত্বষ্টা। 
এই মন্ত্রে ত্বাষ্ট্রম্‌ শব্দটি ব্যবহার করা হয়েছে। ত্বাষ্ট্রম্‌ শব্দটি ত্বষ্টৃ শব্দ থেকে হয়েছে। ত্বাষ্ট্রম্‌ অর্থে
ত্বষ্টৃ বা ত্বষ্টার সাথে সম্বন্ধ-যুক্ত, বা ত্বষ্টা যে বিদ্যা অর্জ্জন করেছিলেন। (ত্বষ্টা শব্দটি ত্বষ্টৃ শব্দের
প্রথমপুরুষ এবং একবচনের রূপ।) বৃহদারণ্যক উপনিষদে উক্ত হয়েছে যে, ব্রহ্মর বা ব্রহ্মার
থেকে ক্রমান্বয়ে দধ্যঙ্‌-আথর্ব্বণ, দধ্যঙ্‌-আথর্ব্বণ থেকে অশ্বিদ্বয়, অশ্বিদ্বয় থেকে বিশ্বরূপ তাষ্ট্র,
এবং বিশ্বরূপ তাষ্ট্র থেকে আভূতি তাষ্ট্র এই মধুবিদ্যা লাভ করেছিলেন।(বৃহদারণ্যক উপনিষদ্‌
মন্ত্র ২।৬।৩ দ্রষ্টব্য।)
ত্বষ্টৃ বা ত্বষ্টা, বিশ্বকর্ম্মা নামে পরিচিত। এঁর একটি নাম বিশ্বরূপ। ইনি কর্ম্মের দ্বারা বা স্বহস্তে
বিশ্বের সকল রূপ সৃষ্টি করেন।চেতনার এই রূপ-নির্মাণকারী ব্যক্তিত্বের নাম ত্বষ্টা বা বিশ্বকর্ম্মা।
হস্ত বা হাত হল স্পর্শের কর্ম্মেন্দ্রিয়, আর ত্বক্‌ (চর্ম্ম) হল জ্ঞানেন্দ্রিয়। ত্বক্‌ বা স্পর্শ থেকে রূপ
সৃষ্টি হয়; যেমন দুটো পাথর বা কাষ্ঠের ঘর্ষণে আগুন বেরোয়। সৃষ্টি ক্ষেত্র হল আকাশ।
 আকাশের তন্মাত্রা শব্দ। তাই যে কোন সৃষ্টির আদিরূপ হল শব্দ, তার পরবর্ত্তী ক্রম হল
স্পর্শ। বায়ু বা মরুতের তন্মাত্রা হল স্পর্শ। শব্দর পর স্পর্শ হল মানে, যা সৃষ্টি হল, তা প্রাণ
থেকে জাত হয়ে, প্রাণেই সংলগ্ন রইলো; এই সংলগ্ন রেখে প্রবাহিত হওয়া প্রাণের ধর্ম্ম। এই
জন্য বৃহদারণ্যক উপনিষদে বলা হয়েছে যে যিনি প্রবাহিত হন, তিনি অধি-অর্দ্ধ বা দেড়। এই
প্রাণ যেন এক হয়েও, অধি-অর্দ্ধ (১-১/২) হয়ে প্রবাহিত হন, তাই ইনি অধি-অর্দ্ধ (১-১/২),
যেহেতু এঁতে সবাই অধি- 'অর্দ্ধনোৎ' বা বৃদ্ধি প্রাপ্ত হন। (বৃহদারণ্যক উপনিষদ মন্ত্র ৩।৯।৮
এবং ৩।৯।৯ দ্রষ্টব্য।)  (এই বৃদ্ধি বা স্ফীতি (শ্বি) এবং সংলগ্নতার কথা আমার আগেও
উল্লেখ করেছি।) এক হয়েও যে দ্বিতীয়, এইটি স্পর্শের ক্ষেত্র। তাই আকাশরূপ যে
উৎপত্তির ক্ষেত্র বা যোনি, তাতে যখন স্পর্শ হয়, তখন রূপ সৃষ্টি হয়। এই জন্য প্রথমে শব্দ,
তারপর স্পর্শ, এবং তারপর রূপ। তাই দৈব-হস্ত  বা দৈব-স্পর্শ-ইন্দ্রিয় যে দেবতার অধিকারে,
সেই বিশ্বকর্ম্মার নাম ত্বষ্টা বা ত্বষ্টৃ, তিনি ত্বক্‌ বা স্পর্শ অনুযায়ী রূপ প্রদান করেন। এই জন্য
ত্বক্‌ শব্দের উৎপত্তি ত্বক্ষ্‌ তথা ত্বচ্‌ ধাতু থেকে হয়েছে। ইংরিজি ভাষায় তাই স্পর্শ কে 'টাচ্‌'
1/23/25, 11:13 PM দধীচি উক্ত মধুবিদ্যা। বৃহদারণ্যক উপনিষদ্‌ দ্বিতীয় অধ্যায় পঞ্চম ব্রাহ্মণ। (Brihadaranyaka Upanishad Second Chapter Fifth Brahmin in Bengali languag…
https://upanishadinbengali.blogspot.com/2025/01/brihadaranyaka-upanishad-second-chapter.html 44/67

(touch) বলা হয়। ত্বক্ষ্‌ এবং তক্ষ্‌, এই দুই ধাতুর অর্থ, 'নির্মাণ করা'। যে পরমেশ্বরী বা
পরম আত্মস্বরূপ চেতনার 'নির্মাণ-ক্ষম' স্বরূপকে 'ত্বষ্টৃ' বা 'ত্বষ্টা; বলা হয়, আজও ভারতবর্ষে
যাঁকে বিশ্বকর্ম্মা-দেব বলে লোকে পূজা করে, সেই পরমেশ্বরীর বিষয়ে ঋক্‌ বেদের একটি মন্ত্র
(ঋক্‌ বেদ মন্ত্র ১।১৬৪।৪১) উদ্ধৃত করলাম: গৌরী (গৌরীঃ--গুরুশক্তি---বাক্‌,) মিমায়
(নির্মাণ করেছেন) সলিলানি (সলিল সকলকে; চেতনার যে অপ্‌ বা জলময় স্বরূপ, যার
থেকে সব মূর্ত্ত হয়, ভৌতিক হয়, তা সলিল; সল্‌= প্রবাহিত হওয়া) তক্ষতি (তক্ষণ করে;
ক্ষোদিত করে, খোদাই করে) একপদী (একপদী) দ্বিপদী (দ্বিপদী) সা (সে/ইনি) চতুষ্পদী
(চতুষ্পদী)। অষ্টাপদী (অষ্টপদী) নবপদী (নবপদী) বভূবূষী (যিনি ভূ অর্থাৎ সব হয়েছেন)
সহস্রাক্ষরা ([আত্মনা]সহ-স্রবতি-অক্ষরা--- অক্ষরা বা অক্ষয়া যে বাক্‌ তিনি আত্মস্বরূপে
স্থিত হয়েই ক্ষরিত বা স্ফুরিত হচ্ছেন) পরমে ব্যোমন্‌ (পরম ব্যোমে স্থিত)----গৌরী
(গুরুশক্তি-বাক্‌), নির্মাণ করেছেন *সলিল সকলকে তক্ষণ করে (ক্ষোদিত করে); ইনি
একপদী (একটি ধারায় ক্ষরিত হন), দ্বিপদী (দুইটি ধারায় ক্ষরিত হন), চতুষ্পদী(চারটি
ধারায় ক্ষরিত হন)। (ইনি) আটটি ধারায় ক্ষরিত হন, নয়টি ধারায় ক্ষরিত হন (নব
ধারায় বা নিত্য নবীন হয়ে ক্ষরিত হন); ইনি সব হয়েছেন;  (ইনি) **সহস্রাক্ষরা, (এই)
পরম ব্যোমে স্থিত। (ঋক্‌ বেদ মন্ত্র ১।১৬৪।৪১)
*চেতনার যে অপ্‌ বা জলময় স্বরূপ, যার থেকে সব মূর্ত্ত হয়, ভৌতিক হয়, তা সলিল;
সল্‌= প্রবাহিত হওয়া।
**অক্ষরা বা অক্ষয়া যে বাক্‌ তিনি আত্মস্বরূপে স্থিত হয়েই ক্ষরিত বা স্ফুরিত হচ্ছেন।
(আমরা পূর্ব্বে এই ব্যোম/আকাশ এবং তার তন্মাত্রা শব্দের কথা উল্লেখ করেছি।)
এই ঋক্‌ মন্ত্রে যা বলা হল তা তষ্টৃর তষ্টৃত্ব। এই বাকের দ্বারাই বিশ্ব ভুবন নির্ম্মিত, এবং
রূপময়; আর এই ত্বষ্টৃ (ত্বষ্টা) দেবতা এই বাকেরই অংশভূত, এই বাকেরই রূপ প্রদানকারী
মহিমা।)  
১৭।৩।২। ত্বষ্টৃ----ত্বষ্টা, এবং অশ্বিদ্বয়।
গর্ভাধানের, বা স্ত্রীর গর্ভ-সঞ্চারের মন্ত্র বৃহদারণ্যক উপনিষদে এবং ঋক্‌ বেদে উল্লেখ করা
হয়েছে। (বৃহদারণ্যক উপনিষদ চতুর্থ অধ্যায়, ষষ্ঠ ব্রাহ্মণ দ্রষ্টব্য।)
ঋক্‌ বেদের তিনটি মন্ত্র উদ্ধৃত করছি। মন্ত্রগুলি গর্ভাধানের, বা স্ত্রীর গর্ভ-সঞ্চারের আগে পাঠ
করা বিধি। তবে কেউ পাঠ করুক আর নাই বা করুক, যে দেবতাদের কথা এই মন্ত্রে আছে,
গর্ভ-সঞ্চার হয় এঁদের অধিকারে, এবং এঁদের অংশ গ্রহণেই হয়। শুধু তাই নয়, যখন যা কিছু
সৃষ্টি হয়, তা যে দেবতাদের বা যে সকল দেবশক্তির অংশ গ্রহণে সাধিত হয়, তাঁদের বিষয়ে
ঋক্‌ বেদের তিনটি মন্ত্র উদ্ধৃত করলাম:
(ঋক্‌ বেদ ১০।১৮৪।১।)
বিষ্ণুর্যোনিল্পতু
1/23/25, 11:13 PM দধীচি উক্ত মধুবিদ্যা। বৃহদারণ্যক উপনিষদ্‌ দ্বিতীয় অধ্যায় পঞ্চম ব্রাহ্মণ। (Brihadaranyaka Upanishad Second Chapter Fifth Brahmin in Bengali languag…
https://upanishadinbengali.blogspot.com/2025/01/brihadaranyaka-upanishad-second-chapter.html 45/67

বিষ্ণুর্যোনি কল্পয়তু (বিষ্ণু, যোনি বা উৎপত্তির কারণ, অর্থাৎ জাতক কি হয়ে জাত হবে তা
কল্পনা করুন, বা নির্দ্ধারণ করুন) ত্বষ্টা রূপাণি (ত্বষ্টা রূপ সকলকে) পিংশতু (পেষণ
করুন) আসিঞ্চতু (সিঞ্চন করুন) প্রজাপতি (প্রজাপতি ) ধাতা গর্ভং দধাতু তে (তে
[তোমার] গর্ভং [গর্ভ] ধাতা (ধাতা) দধাতু (ধারণ করুন; ধরে থাকুন)------ বিষ্ণু
যোনিকে নির্মান করুন (বিষ্ণু জাতক যা হবে, তা বিধান করুন), ত্বষ্টা রূপ
সকলকে পেষণ করুন (ত্বষ্টা রূপ সকলকে পেষণ করে রূপ নির্মাণ
করুন), প্রজাপতি (রেতঃ) সিঞ্চন করুন, ধাতা তোমার গর্ভকে ধারণ করুন।
(ঋক্‌ বেদ ১০।১৮৪।২।)
গর্ভং ধেহি সিনীবালি (হে সিনীবালি গর্ভকে ধারণ করো) গর্ভং ধেহি সরস্বতি
(হে সরস্বতী গর্ভকে ধারণ করো) । গর্ভং তে (তোমার গর্ভকে) অশ্বিনৌ দেবাবা ধত্তাং
(অশ্বিনৌ দেবৌ আ ধত্তাং---অশ্বিন্‌ দেবদ্বয় ধারণ করুন) পুষ্করস্রজা (পুষ্টিদানকারী যে
আবর্ত্ত বা অক্ষমালা ধারী)-----হে সিনীবালি গর্ভকে ধারণ করো, হে সরস্বতী গর্ভকে
ধারণ করো।তোমার গর্ভকে অশ্বিন্‌ দেবদ্বয় ধারণ করুন, (যাঁরা) পুষ্করস্রজা
(পুষ্টিদানকারী অক্ষমালা ধারী)।
পুষ্করস্রজা (পুষ্টিদানকারী অক্ষমালা ধারী)--- অশ্বিদ্বয় শ্বাস-প্রশ্বাস রূপ প্রাণাবর্ত্তের দ্বারা বা
অক্ষগতির দ্বারা আমাদেরকে পোষণ করছেন। 
(ঋক্‌ বেদ ১০।১৮৪।৩।)
হিরণ্ময়ী (হিরণ্যবর্ণা) অরণী (অরণিদ্বয়) যং (যাকে) নির্মন্থতো (মন্থন করেছেন) অশ্বিনা
(অশ্বিদ্বয়)। তং (সেই) তে (তোমার) গর্ভ (গর্ভকে) হবামহে (হবন করছি; আবাহন করছি)
দশমে মাসি (দশম মাসে) সূতয়ে (প্রসূত হবার জন্য)-------হিরণ্যবর্ণা অরণিদ্বয় (যাদের
দ্বারা) অশ্বিদ্বয় মন্থন করেছেন যাকে, সেই তোমার গর্ভকে, আবাহন করছি দশম মাসে
প্রসূত হবার জন্য।
উপনিষদে কথিত আছে যে ব্রহ্মলোকে দুইটি অক্ষর আছে, 'অর' এবং 'ণি'। এই দুইটি অক্ষর
নিয়ে অরণি শব্দটি হয়েছে। এই অক্ষর দুইটি, প্রাণ এবং বাক্‌, যাঁদের ঘর্ষণে বা মিথুনে, সবাই
জাত হয়েছে, বা প্রাণ বহু হয়েছেন। এই দুইয়ের মন্থনে বিশ্ব জাত হয়, সবাই জাত হয়,
প্রতি মুহূর্ত্ত জাত হয়। বৈদিক ক্রিয়াতে প্রাণরূপ দধি এবং আত্মরূপ (আত্মশক্তিরূপ) মধু দিয়ে
মন্থ প্রস্তুত হয়। 
'অর' অর্থে প্রাণ, যিনি রথচক্রের অরার ন্যায় নিজেকে বিস্তার করে বহু হয়েছেন, এবং প্রতিটি
সৃষ্ট সত্ত্বাকে নিজেতে যুক্ত রেখেছেন। 'ণি' অর্থে মূর্ধার, অর্থাৎ মস্তক বা দ্যুলোকের অভ্যন্তরে
যিনি নিহিত, যাঁতে সমস্ত বিশ্বভুবন, সর্বকাল বীজাকারে নিহিত। ইনি বিশ্বযোনি বাক্‌।  
বাক্‌ ও প্রাণের এই মন্থন অভিমানী যে দুই দেবতা, বা চিন্ময় ব্যক্তিত্ব, তারা এই অশ্বিদ্বয়। 
১৭।৩।৩। অশ্বশির দ্বারা প্রদত্ত মধুবিদ্যা।দস্র। ইন্দ্র,দধীচি এবং অশ্বিদ্বয়।
এই মন্ত্রে উক্ত হয়েছে যে অশ্বিদ্বয় যে 'অশ্বশির' দধীচিকে (দধ্যঙ্‌-আথর্ব্বণকে) প্রেরণ
করেছিলেন, সেই অশ্বশির দ্বারা বা প্রাণমুখে, দধীচি (দধ্যঙ্‌-আথর্ব্বণ) তাঁদেরকে মধুবিদ্যা
1/23/25, 11:13 PM দধীচি উক্ত মধুবিদ্যা। বৃহদারণ্যক উপনিষদ্‌ দ্বিতীয় অধ্যায় পঞ্চম ব্রাহ্মণ। (Brihadaranyaka Upanishad Second Chapter Fifth Brahmin in Bengali languag…
https://upanishadinbengali.blogspot.com/2025/01/brihadaranyaka-upanishad-second-chapter.html 46/67

দিয়েছিলেন। এই বিষয়ে বিজ্ঞাত হয়ে, ঋষি অশ্বিদ্বয়কে বলেছিলেন: হে অশ্বিদ্বয়, দধীচি-
আথর্বণকে (দধ্যঙ্‌-আথর্ব্বণকে) অশ্বশির (প্রাণশির) প্রেরণ করেছিলে। সেই দধীচি তোমাদের
দুইজনকে মধু (মধুবিদ্যা) প্রকৃষ্ট রূপে বলেছিলেন, ঋতের (সত্য প্রকাশের) দ্বারা উদ্বুদ্ধ হয়ে;
তষ্ট্রার থেকে প্রাপ্ত (বিদ্যা) যদিও গুপ্ত (তত্রাচ) (হে) দস্রদ্বয় তোমাদের দুজনকে (বলেছিলেন)।
এই মন্ত্রে অশ্বিদের 'দস্র' বলে সম্বোধন করা হয়েছে। দস্র অর্থে 'দ' অর্থাৎ বাক্‌ তথা প্রাণের যে
অন্তর্মুখী ও বহির্মুখী 'স্র' বা স্রবণে বা প্রবাহে অধিষ্ঠিত যে দুই-দেবতা, বা এই দুই প্রাণ-গতি
অভিমানী যে দুই দেবতা। তাই অশ্বিদ্বয়ই দস্র।
এই যে মধুবিদ্যা ইহা আত্মবিদ্যা। আত্মার সাথে আত্মার যে সম্বন্ধ, তা প্রাণরূপ সূত্রের দ্বারা যুক্ত
এবং তাই মধুময়। এই জন্য এই বিদ্যার যিনি দ্রষ্টা, বা ঋষি, তিনি যদি কাউকে এই বিদ্যা দেন,
তাকে আত্মবোধে বা আত্মারই প্রতিমূর্ত্তি, এই বোধে দেন। এই ক্ষমতা যার নেই, সে এই বিদ্যার
ধারকও নয় এবং এই বিদ্যা কাউকে দিতেও পারবে না। আত্মজ্ঞানে বিদ্যা দান করা, বা আত্মজ্ঞানে
ব্যবহার করা মানেই, প্রাণময় হয়ে ব্যবহার করা। আত্মত্বে বা নিজেতে সব একাত্মবোধে একসা হয়ে
থাকে, আর তিনি যখন ক্রিয়াময় হন, তখন এক থেকেও দ্বিতীয় হন; এঁর নাম প্রাণ, দধি,অশ্ব।এই
প্রাণ, এক এবং দুই একই সাথে, তাই ইনি অধি-অর্দ্ধ (১-১/২)। এ সব কথা আমরা আগেও উল্লেখ
করেছি। এই জন্য এই উপদেশ অশ্বশির বা অশ্বমুখে বা প্রাণের দ্বারাই উপদিষ্ট হয়। আমরা আগে
উল্লেখ করেছি যে উপনিষদ্‌, মুখ্যপ্রাণ বা মৃত্যুহীন মহাপ্রাণকে 'আয়াস্য' প্রাণ বলে অভিহিত
করেছেন, যেহেতু ইনি 'আস্য' বা মুখ থেকে শব্দ বা বাক্যের আকারে বেড়িয়ে আসছেন (আস্যাৎ যৎ
অয়তে= আয়াস্য; ছান্দোগ্য উপনিষদ্‌ ১।২।১২)। 
অশ্বিদ্বয় দধীচিকে অশ্বশির দিয়েছিলেন, এর অর্থ অশ্বিদ্বয় এই আত্মবিদ্যা পাবার জন্য,  আত্মা,
যাঁর থেকে প্রাণ জাত হন, সেই মধুময় আত্মাকে পাবার জন্যই, আত্মার এই প্রাণমুখ, বা আয়াস্য
প্রাণকে দর্শন করেছিলেন। এই জন্য বলা হয়েছে : আথর্বাণায় অশ্বিনা দধিচে অশ্বশির
প্রতিঐরয়তম্‌ সঃ বাম্‌ মধু প্রবোচৎ ----হে অশ্বিদ্বয়, দধীচি আথর্বণকে অশ্বশির/
প্রাণশির প্রেরণ করেছিলে,সেই দধীচি তোমাদের দুইজনকে মধু (বিদ্যা) প্রকৃষ্ট রূপে বলেছিলেন।
 
যজুর্বেদের অন্তর্গত শতপথ ব্রাহ্মণে বলা হয়েছে যে ইন্দ্র মধুবিদ্যা দধীচিকে দিয়েছিলেন, এবং
বলেছিলেন যে যদি দধীচি এই বিদ্যা অন্য কাউকে দেন, তাহলে তিনি দধীচির শিরচ্ছেদ
করবেন। শতপথ ব্রাহ্মণে 'অন্য' শব্দটি ব্যবহার করা হয়েছে। অন্য অর্থাৎ দ্বিতীয় জ্ঞানে বা
আত্মজ্ঞান থেকে বিচ্যুত হয়ে এই বিদ্যা দিলে শিরচ্ছেদ হয় বা বুদ্ধিভ্রংশ হয়; আর যে বিজ্ঞাতা,
'অন্য'কে আত্মার অন-রূপ, বা প্রাণের রূপ বলে জানেন, তিনি প্রাণ-শির বা অশ্বশির সম্পন্ন
হয়েই এই বিদ্যা দান করেন। মাত্র দ্বিতীয় বোধ হলে, শিরচ্ছেদ হবে, মৃত্যু বা মর্ত্ত দর্শন হবে।
অশ্বিরা তাই এই প্রাণশির বা অশ্বশির কে আবাহন করেছিলেন, বা দধীচির স্ব-মস্তককে অন্যত্র
লুকিয়ে রেখে সেখানে অশ্বশির সংযোজন করেছিলেন। এই বিদ্যা দানের পর, ইন্দ্র দধীচির
অশ্বশিরকে ছিন্ন করেন, এবং অশ্বিদ্বয় আবার দধীচির স্ব-মস্তক সংযোজন করেন। (শতপথ
ব্রাহ্মণ ১৪।১।১।২২, ১৪।১।১।২৩, ১৪।১।১।২৪ দ্রষ্টব্য।) ইন্দ্র, দধীচির অশ্বশিরকে ছিন্ন করেন
এর অর্থ----- এই অশ্ব বা প্রাণের উৎস আত্মা; আর অশ্বিরা সেই প্রাণশির ছিন্ন
হলে, দধীচির পূর্ব্বের মস্তক সংযোজন করেন, এর অর্থ ----- অশ্বিরা আত্মবিদ্যা বা মধু বিদ্যা
পেয়ে, এখন জানেন যে প্রাণ আত্মার থেকেই প্রকাশ পান। 
1/23/25, 11:13 PM দধীচি উক্ত মধুবিদ্যা। বৃহদারণ্যক উপনিষদ্‌ দ্বিতীয় অধ্যায় পঞ্চম ব্রাহ্মণ। (Brihadaranyaka Upanishad Second Chapter Fifth Brahmin in Bengali languag…
https://upanishadinbengali.blogspot.com/2025/01/brihadaranyaka-upanishad-second-chapter.html 47/67

ইন্দ্র হলেন আত্মার বা প্রাণের দর্শনময় ব্যক্তিত্ব। ইনি মহাপ্রাণ অদিতির সন্তান; আর এই
মহাপ্রাণে স্থিত হয়ে, বা আত্মস্থ হয়ে ইনি বিশ্বের দিকে তাকিয়ে আছেন, সবাইকে দেখছেন,
আর সেই দৃশ্য
সকলকে ভোগ করছেন। (আধুনিক পদার্থ বিজ্ঞানও বলে যে এই বিশ্ব তার দ্রষ্টাকে বাদ দিয়ে
সৃষ্টি হয় না।) এই ইন্দ্র, বিষ্ণু বা প্রাণের দ্রষ্টা অভিমানী পুরুষ বলে, ঋক্‌ বেদে বিষ্ণুকে 'ইন্দ্রস্য
যুজ্য সখা' বলে বর্ণনা করা হয়েছে।(ঋক্‌বেদ ১।২২।১৯)। বিষ্ণু ইন্দ্রের সাথে যুক্ত সখা। সখা
অর্থে যারা সমান আখ্যার অধিকারী। আবার সখা অর্থে যারা সমান 'খ' বা হৃদয়াকাশে বাস
করে। ঋক্‌ বেদে উক্ত হয়েছে যে বিষ্ণুর যে পরম পদ তা দ্যুলোকের ন্যায় বিস্তৃত চক্ষু। মন্ত্রটি
উদ্ধৃত করলাম:
তদ্বিষ্ণোঃ (সেই বিষ্ণুর) পরমং পদং (পরম পদকে) সদা (সর্ব্বদা) পশ্যন্তি (দর্শন করেন)
সূরয়ঃ (সূরগণ)। দিবীব (দিবি ইব----দ্যুলোকের ন্যায়) চক্ষুরাততম্‌ (চক্ষুঃ আততম্‌ ---
আতত বা বিস্তৃত চক্ষু)।। 
(অর্থ।) সেই বিষ্ণুর পরম পদকে সর্ব্বদা সূরগণ দর্শন করেন। দ্যুলোকের ন্যায় বিস্তৃত চক্ষু।
(ঋক্‌বেদ ১।২২।২০)। 
বিষ্ণুর পরম পদ অর্থে প্রাণের সেই পদ, পা বা গতি যার থেকে ত্রিকাল এবং সকল কিছু বা
সর্ব্বরূপ সৃষ্টি হচ্ছে। তাই এই মন্ত্রে পদ এবং চক্ষু এই দুই শব্দ প্রয়োগ করা হয়েছে। ইন্দ্র এই
রূপেরই অনুগত। প্রতি রূপে ইনি এই বিষ্ণু বা প্রাণকেই দর্শন করছেন। এই দর্শন মধুময়।
আত্মা আত্মাকে, নিজেই নিজেকে দেখছেন অনাদি অনন্ত রূপে। এই জন্যই সর্ব্ব ভূত এই
আত্মার মধু এবং এই আত্মা সর্ব্বভূতের মধু; এই জন্য সর্ব্ব ভূত সর্ব্ব ভূতের মধু; আর সকল
মাধুর্যেরই ভোক্তা ইন্দ্র, কেননা এই 'ইদং দ্রষ্টা' আত্মা, যাকিছু 'ইদং' (বা 'ইহা') পদবাচ্য, তার
দ্রষ্টা এবং তার অন্তরে স্থিত। তাই এই মধুবিদ্যা ইন্দ্রের-ই অধিকারে। 
১৭।৩।৪। পর্ব্বতে লুক্কায়িত অশ্বশির এবং শরণ্যা (আশ্রয়দায়িনী)।
ঋক্‌ বেদে একটি মন্ত্রে উক্ত হয়েছে যে এই অশ্বশির পর্বতে লুক্কায়িত বা অপশ্রিত। পর্বত অর্থে
ভৌতিকতা, পর্ব্বে পর্ব্বে, স্তরে স্তরে গড়ে ওঠা ভৌতিকতা, যাতে প্রাণ বা অশ্ব ঢাকা পড়ে গেছে।
কিন্তু যখন এই প্রাণ কে দেখা যায়, তখন বিদিত হয় যে এই ভৌতিকতা প্রাণকেই আশ্রয় করে
বর্ত্তমান। এই কথাটি ঋক্‌ বেদের ১।৮৪।১৪ মন্ত্রে বলা হয়েছে; মন্ত্রটি উল্লেখ করলাম: ইচ্ছন্‌
অশ্বস্য যৎ শিরঃ পর্বতেষু অপশ্রিতম্‌ । তৎ বিদৎ শরণ্যাবতি।। (ঋক্‌বেদ ১।৮৪।১৪।)
(অর্থ।) পর্বতেষু (পর্বতে) অপশ্রিতম্‌ (অপশ্রিত; অপসারিত; লুক্কায়িত)  অশ্বস্য (অশ্বের) শিরঃ
(শির) যৎ (যখন) ইচ্ছন্‌ (ইচ্ছা করেছিল; সন্ধান করতে ইচ্ছা করেছিল), তৎ (তখন) বিদৎ
(বিদিত হয়েছিল) শরণ্যা (শরণ বা আশ্রয়দায়িনী) বত (যেন) 
ইতি : পর্বতে অপসারিত অশ্বের শির যখন সন্ধান করতে ইচ্ছা করেছিল, তখন বিদিত
হয়েছিল, 'যেন শরণ্যা (আশ্রয়দায়িনী)'।
এই অশ্বিদ্বয়, যিনি শরণ্যা, সবার আশ্রয়-স্বরূপা মুখ্যপ্রাণ, তাঁকে  জানেন। এই মুখ্যপ্রাণই দেবী দুর্গা
বলে শরৎ কালে পূজিতা হন। শরণ বা আশ্রয়-ভাব যে ঋতুতে প্রকৃতিতে বিশেষ ভাবে প্রকাশ পায়,
তাই শরৎকাল এবং শারদীয় দুর্গা পূজার সময়।এই শরতের একটি মাসের নাম 'আশ্বিন', যে মাসে
এই মহা প্রাণরূপ অশ্বের বা দুর্গার পূজা আমরা করি। শরৎকালে ধরিত্রী 'সুজলা, সফলা, শস্য-
1/23/25, 11:13 PM দধীচি উক্ত মধুবিদ্যা। বৃহদারণ্যক উপনিষদ্‌ দ্বিতীয় অধ্যায় পঞ্চম ব্রাহ্মণ। (Brihadaranyaka Upanishad Second Chapter Fifth Brahmin in Bengali languag…
https://upanishadinbengali.blogspot.com/2025/01/brihadaranyaka-upanishad-second-chapter.html 48/67

শ্যামলা' হয়ে ওঠে।অশ্বিদের প্রভব যে মাসে প্রকট হয়, তার নাম আশ্বিন। রাজর্ষিরা যে অশ্বমেধ
যজ্ঞ করতেন, তা এই দুর্গারই পূজা।বৃহদারণ্যক উপনিষদের প্রথম এবং দ্বিতীয় অধ্যায়ে অশ্ব এবং
অশ্বমেধের কথা বলা হয়েছে, এবং 'দূর্‌' নামক এক দেবীর কথা বলা হয়েছে, যাঁর থেকে মৃত্যু দূরে
থাকে। এই দূর্‌ই দুর্গা। বৃহদারণ্যক উপনিষদের ১।৩।৯ মন্ত্রটি উদ্ধৃত করলাম : সা বা এষা (সেই
এই) দেবতা দূর্নাম (দেবতার নাম দূর্‌) দূরং হি অস্যা মৃত্যুঃ (মৃত্যু অবশ্যই এঁর থেকে দূর) দূরং হ বা
অস্মাৎ (এঁর থেকে অবশ্যই দূর) মৃত্যুঃ ভবতি (মৃত্যু হয়) য এবং বেদ (যিনি ইহা জানেন)-----সেই
এই দেবীর* নাম দূর্‌, মৃত্যু অবশ্যই এঁর থেকে দূরে; যিনি ইহা জানেন, মৃত্যু অবশ্যই এঁর থেকে দূরে
থাকে।
(* যদিও মন্ত্রে দেবতা শব্দ ব্যবহার করা হয়েছে, কিন্তু তার সাথে স্ত্রীলিঙ্গ বাচক শব্দ 'সা' এবং
'এষা' ব্যবহার করা হয়েছে। এই জন্য মন্ত্রে  'দেবতা' শব্দের অর্থ  'দেবী' বলেই মনে করি।) 
শতপথ ব্রাহ্মণ, (যেখানে অশ্বি, দধীচি এবং ইন্দ্রর কাহিনী উক্ত হয়েছে), যজুর্ব্বেদের অন্তর্গত; এবং
বৃহদারণ্যক উপনিষদ্‌, শতপথ ব্রাহ্মণের অন্তর্গত।
যে বেদনের দ্বারা আত্মা প্রাণময় হয়ে সবাইকে সবার সাথে যুক্ত করে রেখেছেন, তার নাম যজুর্ব্বেদ।
এই যজুর্ব্বেদেই দুর্গার একটি মন্ত্র আছে, যেখানে 'শরণ' কথাটি ব্যবহার করা হয়েছে। মন্ত্রটি উদ্ধৃত
করলাম : 
তামগ্নিবর্ণা (তুমি অগ্নিবর্ণা) তপসা (তপস্যার দ্বারা; স্বীয় তপের দ্বারা) জ্বলন্তীং (প্রজ্জল্বিত)
বৈরোচনীং (বিরোচনা; রোচন বা দৃষ্টি থেকে নানারূপ সৃজিত হচ্ছে) কর্ম্মফলেষু (কর্ম্মফলেতে)
জুষ্টাম্‌ (তৃপ্ত)।
দুর্গা (দুর্গা) দেবীং (দেবীকে) শরণম্‌ ( শরণ; আশ্রয়) অহম্‌ (আমি) প্রপদ্যে (সমর্পণ করছি)
সুতরসি (সুন্দর ভাবে পারকারিণী) তরসে (পার করবার জন্য) নমঃ (নমস্কার)।।
(অর্থ।) তুমি অগ্নিবর্ণা, স্বীয় তপের দ্বারা প্রজ্জল্বিত, বিরোচনা (তোমার রোচন বা দৃষ্টি থেকে
নানারূপ সৃজিত হচ্ছে), কর্ম্মফলেতে তৃপ্ত (কর্ম্মফল প্রদানের দ্বারা সকলকে উদ্ধার করে তৃপ্ত
হচ্ছ); আমি দুর্গা দেবীর আশ্রয়ে নিজেকে সমর্পণ করছি; সুন্দর ভাবে পারকারিণী, পার
করবার জন্য নমস্কার। (যজুর্ব্বেদীয় তৈত্তরীয় আরণ্যক, দশম প্রপাঠক, দ্বিতীয় অনুবাক্‌।)
১৭।৩।৫। ঋতায়ন্‌।
এই মন্ত্রে বলা হয়েছে ঋত প্রকাশকারী যে অয়ন বা গতি, সেই গতিতেই দধীচি অশ্বিদের এই
বিদ্যা দিয়েছিলেন। প্রাণ, যিনি দধিক্রা, যিনি সবাইকে হৃদয়ের দ্বারা ধারণ করে (দধি) ক্রমণ
(ক্র) করছেন আত্মস্বরূপতায় নিয়ে যাবার জন্য, এবং তার উদ্দেশ্য হল সত্য বা ঋত প্রকাশ।
সত্যের প্রকাশ গুলিই ঋত। আবার ঋত শব্দের একটি অর্থ হল চলা, প্রবাহিত হওয়া। পৃথিবী,
অপ্‌, বায়ু, আকাশ ইত্যাদি সর্ব্বভূত যে অমৃতময় এবং একই আত্মার রূপ, এই মহাসত্যকে
প্রতিটি সত্ত্বার কাছে প্রকাশ করবার জন্য, প্রত্যেককে ধারণ করে দধিক্রা ছুটছেন। এই জন্য
'ঋতায়ন্‌' শব্দটি ব্যবহার করা হয়েছে।
১৮শ মন্ত্র।
ইদং বৈ তন্মধু দধ্যঙ্‌ঙাথর্ব্বণো'শ্বিভ্যামুবাচ তদেতদৃষিঃ পশ্যন্নবোচৎ পুরশ্চক্রে দ্বিপদঃ পুরশ্চক্রে
চতুষ্পদঃ পুরঃ স পক্ষীভূত্বা পুরঃ পুরুষ আবিশদিতি স বা অয়ং পুরুষঃ সর্ব্বাসু পূর্ষু পুরিশয়ঃ
নৈনেন কিংচনাবৃতম্‌ কিংচনাসংবৃতম্‌।।১৮।।
1/23/25, 11:13 PM দধীচি উক্ত মধুবিদ্যা। বৃহদারণ্যক উপনিষদ্‌ দ্বিতীয় অধ্যায় পঞ্চম ব্রাহ্মণ। (Brihadaranyaka Upanishad Second Chapter Fifth Brahmin in Bengali languag…
https://upanishadinbengali.blogspot.com/2025/01/brihadaranyaka-upanishad-second-chapter.html 49/67

১৮।১।অন্বয়-অর্থ।
ইদং (ইহা;এই) বৈ (অবশ্যই) তৎ (সেই) মধু (মধু) দধ্যঙ্‌ (দধ্যঙ্‌) আথর্ব্বণঃ (আথর্ব্বণ)
অশ্বিভ্যাম্‌ (অশ্বিদ্বয়কে) উবাচ (বলেছিলেন)। তৎ এতৎ (সেই এই; সেই এই মধু বিদ্যা) ঋষিঃ
(ঋষি; সত্যদ্রষ্টা) পশ্যন্ (দর্শন করে) অবোচৎ (বলেছিলেন) : পুরঃ (পূর্ব্বে) চক্রে
(করছিলেন; চক্র শব্দটি কৃ ধাতুর রূপ) দ্বিপদঃ (দ্বিপদ; দ্বিপদ গতিময় ) পুরঃ (পূর্ব্বে) চক্রে
(করছিলেন) চতুষ্পদঃ (চতুষ্পদ; চতুষ্পদ গতিময়) পুরঃ (পূর্ব্বে) স (সে) পক্ষীভূত্বা (পক্ষী
হয়ে) পুরঃ (পুরসকলকে/পুরসকলের মধ্যে) পুরুষ (পুরুষ) আবিশৎ (অনুপ্রবিষ্ট হয়েছিলেন)
ইতি স বা অয়ং পুরুষঃ (সেই এই পুরুষ) সর্ব্বাসু (সর্ব্ব) পূর্ষু (পুরেতে) পুরিশয়ঃ (পুরে শায়িত;
পুরিশয়=পুরি/পুরী+শয়) ন অনেন কিংচন অনাবৃতম্‌ (ন [না] কিংচন [কিছুই] অনেন [এঁর
দ্বারা] অনাবৃতম্‌ [অনাবৃত]) কিংচন [কিছুই] অসংবৃতম্‌ [অসংবৃত] হয়নি])।।
১৮।২।অর্থ।
ইহা অবশ্যই সেই মধু (মধু বিদ্যা) (যা) দধ্যঙ্‌-আথর্ব্বণ অশ্বিদ্বয়কে বলেছিলেন। সেই এই
মধুকে ঋষি (সত্যদ্রষ্টা) দর্শন করে বলেছিলেন : পূর্ব্বে দ্বিপদ গতিময়
হয়েছিলেন, পূর্ব্বে চতুষ্পদ গতিময় হয়েছিলেন। পূর্ব্বে, সে পক্ষী হয়ে, পুরসকলের
মধ্যে পুরুষ অনুপ্রবিষ্ট হয়েছিলেন। সেই এই পুরুষ সর্ব্ব পুরেতে শায়িত; কিছুই নেই যা এঁর
দ্বারা অনাবৃত নয়, কিছুই নেই যা এঁর দ্বারা অসংবৃত নয়।
১৮।৩। সংক্ষিপ্ত ব্যাখ্যা এবং নিরুক্তি।
পূর্ব্বে ১।৩।২ অংশে পুরুষ শব্দের ব্যাখ্যা করা হয়েছে।
নিজেকে খণ্ডন করে ইনি বহু হয়েছেন।সেই প্রতিটি খণ্ডিত সত্ত্বারও অন্তরে ইনি নিজবোধ বা
আত্মস্বরূপ; এর অর্থ প্রতিটি সৃষ্ট সত্ত্বাই এঁর রূপ। এই রূপের অন্তরে, অর্থাৎ পুরেতে এই
পুরুষ বা আত্মস্বরূপ বিদ্যমান। সৃষ্টির পূর্বে যিনি, তিনি পুরুষ। এঁর দ্বারাই পুর সকল আবিষ্ট
(আবিশৎ), বা ইনি স্বয়ং প্রতি পুরে, প্রতি আয়তনে অনুপ্রবিষ্ট। প্রতি পুরে ইনি শায়িত, স্থির,
অপরিণামী নিজবোধ স্বরূপ এবং একই সাথে সকল পরিণামের দ্রষ্টা বা ভোক্তা। 'অহং' বা
'আমি' বলে যে 'বোধ' তা এই আত্মস্বরূপেরই 'অহং' বোধ বা আমিত্ব। ইনি অহং হয়ে
শব্দ,স্পর্শ, ইত্যাদি বোধর সাথে সর্ব্বদাই লিপ্ত হচ্ছেন, সর্ব্বদাই সুখ-দুঃখময় হচ্ছেন, আবার
একইসাথে নিষ্কল, নিষ্ক্রিয় অসঙ্গ নিজবোধ স্বরূপ হয়ে প্রতি বোধক্রিয়ার মূলে রয়েছেন এবং
নিজের সঙ্গময় সত্ত্বার দ্রষ্টা। ইনি পুরশায়ি পুরুষ এবং প্রতি রূপের বা প্রতি বোধ প্রকাশের দ্রষ্টা।
 
১৮।৩।১। দ্বিপদ,চতুষ্পদ।
শক্তির যে প্রথম প্রকাশ তা অন্তর এবং বহিঃ, এই উভয়দিকে যুগপৎ শক্তি প্রবাহিত হন।
এইজন্য এই চিৎশক্তি দ্বিপদী, এবং আমরা সবাই অন্তর ও বহিঃ এই দুই বোধ নিয়ে বিদ্যমান।
তিনি পূর্ব্বে দ্বিপদ হয়ে তারপর চতুষ্পদ হয়েছিলেন। চার সংখ্যাটিতে বর্গ বা সমূহ বোঝায়। ২ বা
দ্বিতীয়তার বর্গ হল চার (৪) বা চতুঃ। একই রকম প্রজাতি বা প্রাণী, একই রকম বস্তু, একই
1/23/25, 11:13 PM দধীচি উক্ত মধুবিদ্যা। বৃহদারণ্যক উপনিষদ্‌ দ্বিতীয় অধ্যায় পঞ্চম ব্রাহ্মণ। (Brihadaranyaka Upanishad Second Chapter Fifth Brahmin in Bengali languag…
https://upanishadinbengali.blogspot.com/2025/01/brihadaranyaka-upanishad-second-chapter.html 50/67

রকম ধর্ম্ম  ইত্যাদি নিয়ে বর্গ রচিত হয়। নিজেকে দ্বিত্বীয় করে একটি রূপ সৃষ্টি করে, আবার
সেই রূপেরই বহু বহু অনুরূপ বা প্রতিরূপ সৃষ্টি করেন, এর নাম বর্গ সৃষ্টি করা; এইটি
চতুষ্পদ, বা চতুষ্পদ গতি। এই রূপ এবং প্রতিরূপের কথা পরবর্ত্তী মন্ত্রে বলা হয়েছে। 
প্রত্যেক রূপে এবং প্রত্যেক প্রতিরূপে, এই এক অদ্বিতীয় আত্মাই অনুপ্রবিষ্ট হয়েছেন; একথা
আমরা পূর্ব্বে ১৪।৩।১ অংশে বর্ণনা করেছি। এই আত্মা যখন দ্বিধা হন, তখন সেই দ্বিতীয়
সত্ত্বাতে থাকেন অনুপ্রবিষ্ট আত্মা এবং বাক্‌, প্রাণ ও মন; এই আত্মা এবং তাঁর তিনটি স্বরূপ
বাক্‌, প্রাণ এবং মন নিয়ে চার হয়। এই আত্মা এবং তাঁর তিনটি পাদ, যথাক্রমে জাগ্রতপাদ,
স্বপ্নপাদ এবং সুষুপ্তিপাদ নিয়ে ইনি চতুষ্পদ ব্রহ্ম। (মাণ্ডুক্য উপনিষদ্‌ দ্রষ্টব্য।)
১৮।৩।২।পক্ষী। প্রাণ এবং আত্মা।ষোড়শ-কলাময় পুরুষ।  
এই যে ইনি অনুপ্রবিষ্ট হন, রূপের বা প্রতিরূপের অন্তরে বিদ্যমান থাকেন এবং বেদনময়
(প্রাণময়) হন, এতে যা হয় তার নাম অন্তরীক্ষ লোক। এই অন্তরীক্ষে চেতনা অন্তর-
ঈক্ষণময়, অন্তর-দর্শনময়। এখানে সবাই সবাইকে নিজের অন্তরেই পায়, নিজের অন্তরেই
দেখে। এই অন্তরীক্ষে আধিপত্য করেন চেতনার সোম বা চন্দ্রমা নামক মহিমা বা স্বরূপ; প্রতি
রূপটিকে সোমময় বা ভোগময় ইনিই করেন, এবং তদ্বারা তার পরিবর্ত্তন সাধিত হয়। এই
চন্দমা আত্মার দক্ষিণাগ্নি নামক স্বরূপের জ্যোতিরূপ।(উপরে ৭।৩।১ অংশ দ্রষ্টব্য।)
প্রতি ভোগে, এই চন্দ্রমা আমাদের পরিবর্ত্তন সাধ করেন; একটি নূতন কলা বা নবকলা প্রদান
করেন। এঁর এই যে কলা-প্রদানকারী স্বরূপ বা কলনময়তা, তার দুটি ভাগ বা দুটি পক্ষ আছে,
যাকে শুক্ল এবং কৃষ্ণ পক্ষ বলে। চন্দ্রমা বা দক্ষিণাগ্নির এই শুক্ল এবং কৃষ্ণ পক্ষের দ্বারা আমরা
নিয়ন্ত্রিত বা গঠিত হচ্ছি। এই পক্ষ শক্তি বা নিয়ন্ত্রণ শক্তির নাম 'পক্ষী'; পক্ষী =
পক্ষ+ঈ(শক্তি)।
সোম বা অনুভূতির দ্বারা যখন আমরা প্রাণবন্ত হই, তার নাম শুক্লপক্ষ। আবার সেই অনুভূতি
যখন চেতনার (চন্দ্রমার/দক্ষিণাগ্নির) নিয়ন্ত্রণে প্রত্যাহার করা হয়, তার নাম অর্থাৎ সে কাল
বা কলনের নাম কৃষ্ণপক্ষ। প্রতি অনুভূতিতে এই ভাবে জোয়ার-ভাঁটা চলছে; এই জন্য
শুক্লপক্ষকে আপূর্যমানপক্ষ এবং পূর্ব্বপক্ষও বলা হয়। সোম বা অনুভূতির দ্বারা যখন পূর্ণ হতে
থাকি তখন আপূর্যমানপক্ষ; অনুভূতির উদয় বা আবির্ভাব শুক্লপক্ষে হয় বলে, এর অন্য নাম
পূর্ব্বপক্ষ, কেননা পূর্ব্বদিকেই কোন-কিছুর উদয় বা আরম্ভ হয়। একইভাবে, কৃষ্ণপক্ষকে
'অপরপক্ষ' বলা হয়; সোম বা অনুভূতি যখন অপক্ষীয়মান হয়, ক্ষীণ হয় বা অপসারিত হয়,
সেই কালকে অপরপক্ষ বলা হয়। এই পুরুষ বা আত্মস্বরূপ আমাদেরকে বেদনের দ্বারাই
সোমময় করেন, আবার সেই সোমকে নিজেতেই আকর্ষণ করে ফিরিয়ে নেন; কর্ষণ বা আকর্ষণ
থেকে 'কৃষ্ণপক্ষ' শব্দটি হয়েছে। 
এই বেদনকে উপনিষদ্‌ 'বিত্ত' বলেছেন; যা জানা হয়েছে, বিদিত হয়েছে, বা যা বেদন থেকে জাত, তা
বিত্ত।প্রাণই সম্বৎসর, কেননা ইনি কালের আবর্ত্তন হয়ে নিজেকে প্রকাশ করে, তাঁর বৎস বা
প্রজাদের পালন করেন। তাই প্রাণের এক নাম প্রজাপতি, এবং এই প্রজাপতিই দক্ষিণাগ্নি, এবং
অন্তরীক্ষস্থ চন্দ্রমা তাঁর জ্যোতির্ম্ময় রূপ। অমাবস্যা থেকে পূর্ণিমা হতে প্রায় ১৫টি  (পঞ্চদশ) রাত্রি,
এবং পূর্ণিমা থেকে অমাবস্যা হতে প্রায় ১৫টি  (পঞ্চদশ) রাত্রি সময় লাগে।এই হল  চন্দ্রমার
পঞ্চদশ কলা, বা  কলনের পঞ্চদশ প্রকার; আর তাঁর যে ষোড়শ কলা তিনি আত্মা, যিনি সনাতন,
যাঁর কোন তিথি নেই। তাই এই আত্মার নাম 'অতিথি', অর্থাৎ যাঁর কোন তিথি নেই বা যাঁর
1/23/25, 11:13 PM দধীচি উক্ত মধুবিদ্যা। বৃহদারণ্যক উপনিষদ্‌ দ্বিতীয় অধ্যায় পঞ্চম ব্রাহ্মণ। (Brihadaranyaka Upanishad Second Chapter Fifth Brahmin in Bengali languag…
https://upanishadinbengali.blogspot.com/2025/01/brihadaranyaka-upanishad-second-chapter.html 51/67

একটাই তিথি, যাঁর নাম আত্মবোধ বা নিজবোধ, যিনি পরিবর্ত্তন-বিহীন।উপনিষদে বলা হয়েছে
'অতিথি দুরোণসৎ', অর্থাৎ দুরোণ্‌  (দ্রোণ) বা সোমের কলসের মধ্যে 'অতিথি' বর্ত্তমান।
(কঠোপনিষদ্‌ মন্ত্র ২।২।২ দ্রষ্টব্য।) সকল অনুভূতির প্লাবনে, সোমের সকল প্লাবনে, আমরা সদা
পরিবর্ত্তনময়; আর এই অতিথি তার অন্তরে স্থির, অপরিণামী, নিজবোধ স্বরূপ। এই আত্মা এবং
পঞ্চদশ কলা নিয়ে যে চেতনা বা আত্মপুরুষ, তিনি ষোড়শকলা পুরুষ নামে প্রসিদ্ধ।(বৃহদারণ্যক
উপনিষদ্‌ মন্ত্র ১।৫।১৪,  ১।৫।১৫ দ্রষ্টব্য।) এই যে ইনি কলার দ্বারা, সোম প্লাবন এবং সোম
সংহরণের দ্বারা, সদা আমাদের নিয়ন্ত্রণ করছেন, এর নাম পক্ষী হয়ে বিচরণ করা বা পক্ষশক্তির
দ্বারা পালন করা। বৃহদারণ্যক উপনিষদে পঞ্চদশটি কলার নাম রাত্রি, আর ষোড়শতম কলার নাম
'ধ্রুবা'।  এই ধ্রুব আত্মাই 'শিব' এবং এঁর শক্তি 'রাত্রি'।) বলা হয়েছে যে, প্রজাপতি, রাত্রিরূপ
কলাদের দ্বারাই সোমের দ্বারা পূর্ণ হন (আ চ পূর্যতে) বা সোমময় হন, এবং রাত্রিরূপ কলাদের
দ্বারাই সোমময়তা হ্রাস বা ক্ষীণ হয় (অপ চ ক্ষীয়তে)। প্রাণ প্রবাহই সোম এবং যিনি অতিথি বা
ধ্রুবা-কলা তিনি আত্মা। 
এই যে বলা হয়েছে, "পুরঃ স পক্ষীভূত্বা পুরঃ পুরুষ আবিশৎ-----পূর্ব্বে সে পক্ষী হয়ে পুরসকলের
মধ্যে পুরুষ অনুপ্রবিষ্ট হয়েছিলেন", সেই একই কথা বৃহদারণ্যকের ১।১৫।১৪। মন্ত্রে উক্ত
হয়েছে। বৃহদারণ্যকের ১।১৫।১৪। মন্ত্রটি উদ্ধৃত করলাম : 
স এষ সংবৎসর প্রজাপতিঃ (সেই এই সংবৎসর রূপ প্রজাপতি)  ষোড়শকলঃ
(ষোড়শকলাময়) তস্য (তাঁর) রাত্রয় এব (রাত্রি সকলই) পঞ্চদশ কলাঃ (পঞ্চদশ কলা,১৫টি
কলা) ধ্রুবৈবাস্য (ধ্রুব এবা অস্য --ধ্রুবই এঁর) ষোড়শি (ষোড়শতম) কলা (কলা) স (সে/
তিনি) রাত্রিভিরেবা চ পূর্যতে'প চ ক্ষীয়তে (রাত্রিভিঃ এব [রাত্রি সকলের দ্বারাই] আ চ পূর্যতেঃ
[পূর্ণ হন] অপ চ ক্ষীয়তে [অপক্ষয়ীমান হন; ক্ষীণ হন]  সো'মাবাস্যাং রাত্রিমেতয়া
(সঃ[তিনি] অমাবাস্যাং রাত্রিম্‌ [অমাবস্যার রাত্রিতে] এতয়া ষোড়স্যা কলয়া (এই সকল
১৬টি কলার দ্বারা] সর্ব্বমিদং (সর্ব্বম্‌ [সকল] প্রাণভৃদনুপ্রবিশ্য (প্রাণভৃৎ [প্রাণীকে/প্রাণীর
মধ্যে]) অনুপ্রবিশ্য (অনুপ্রবেশ করে)  ততঃ (তার পর) প্রাতর্জায়তে (প্রাতঃ [প্রাতে] জায়তে
[জাত হন]) তস্মাদেতং (তস্মাৎ[সেইজন্য] এতং রাত্রিম্‌ (এই রাত্রিতে) প্রাণভৃতঃ (প্রাণীর)
প্রাণং (প্রাণকে) ন বিচ্ছিন্দ্যাৎ (বিছিন্ন করবে না) অপি (এমনকি) কৃকলাসস্যৈতস্যা এব
দেবতায়া (কৃকলাসস্য [কৃকলাসের/গিরগিটির] এতস্য এব দেবতায়া [এই
দেবতারই]) অপচিত্যৈ (সন্মানার্থে)-----সেই এই সংবৎসর রূপ প্রজাপতি
ষোড়শকলাময়; তাঁর রাত্রি সকলই পঞ্চদশ কলা (১৫টি কলা), ধ্রুবই এঁর ষোড়শ কলা;
তিনি রাত্রি সকলের দ্বারাই পূর্ণ হন, (এবং) ক্ষীণ হন।  তিনি অমাবস্যার রাত্রিতে এই
সকল ১৬টি কলার দ্বারা সকল প্রাণীর মধ্যে অনুপ্রবেশ করে, তার পর প্রাতে জাত হন।
সেইজন্য এই রাত্রিতে প্রাণীর প্রাণকে বিছিন্ন করবে না (প্রাণী হত্যা করবে না) এমনকি
কৃকলাসের/গিরগিটির (প্রাণকেও প্রাণকে বিছিন্ন করবে না), এই দেবতারই সন্মানার্থে।
প্রতিমুহূর্ত্তটিকে, প্রতি স্থিতিকে, প্রতি জীবকে, এই ধ্রুব আত্মা, এই শিব , তাঁর রাত্রিরূপ শক্তির
দ্বারা জাত করছেন এবং সেই শক্তির দ্বারাই সংহরণ করছেন। এই যে জাত হয়, তা ইনি
স্বয়ংই, আত্মাই। এই জন্য বলা হল যে প্রজাপতি অমাবস্যার রাত্রিতে এই সকল ১৬টি কলার
দ্বারা সকল প্রাণীর মধ্যে অনুপ্রবেশ করে, তার পর প্রাতে জাত হন।
১৮।৩।৩।পক্ষী, পার্শ্ব, অন্তরীক্ষ, দিক্‌, সোম।
1/23/25, 11:13 PM দধীচি উক্ত মধুবিদ্যা। বৃহদারণ্যক উপনিষদ্‌ দ্বিতীয় অধ্যায় পঞ্চম ব্রাহ্মণ। (Brihadaranyaka Upanishad Second Chapter Fifth Brahmin in Bengali languag…
https://upanishadinbengali.blogspot.com/2025/01/brihadaranyaka-upanishad-second-chapter.html 52/67

আমরা দক্ষিণাগ্নি এবং চন্দ্রমার কথা পূর্ব্বে বলেছি। উপনিষদে বলা হয়েছে যে দক্ষিণাগ্নির (অন্ব-
আহার্য-পচন অগ্নির) একটি তনু হল দিক্‌সমূহ। আয়তন যেমন পৃথিবী বা ভৌতিক ক্ষেত্রের
বৈশিষ্ট্য, সেই রকম দিক্‌সকল অন্তরীক্ষের বৈশিষ্ট্য।প্রাণ বা বায়ু যখন প্রবাহিত হন, তার আগে
দিক্‌ নির্দ্ধারিত হয়।উপনিষদে প্রাণকেই দিক্‌ বলা হয়েছে। প্রাণ প্রবাহ অর্থে, প্রাণ যা হবেন, যা
কাম্য, তার দিকে ক্রমণ বা গতি। এই গতিতে আছে সংলগ্নময়তা----নিজেকে দ্বিতীয় করে, তাকে
নিজেতেই ধরে রাখা; এর নাম স্পর্শ।এই জন্য যে কোন ভোগই স্পর্শ-আত্মক। আর এই স্পর্শ বা
প্রাণপ্রবাহ যে দুইটি দিকের দ্বারা অভীষ্টের দিকে যায়, তারা দক্ষিণ এবং উত্তর।এই দুইটি দিক্‌ পার্শ্ব,
বা দুই পাশ। নদীর গতির ভঙ্গিমা যেমন তার দুই পার্শ্বে স্থিত তটের বিস্তৃতির দ্বারা স্পষ্ট হয়, সেই
রকম এই দুইই দিক্‌ উত্তর ও দক্ষিণ।এই দুই পার্শ্বেই আমাদের স্পর্শের যে কর্ম্মেন্দ্রিয়, অর্থাৎ দুটি
হাত অবস্থিত এবং পক্ষীদের দুইটি পক্ষ অবস্থিত। 
প্রাণ যখন প্রবাহিত হয়, তখন যে দিকে কাম্য বা অভীষ্ট প্রকাশ পায়, সেইটি পূর্ব্ব দিক্‌। এই দিকের
দেবতা আদিত্য এবং এঁকে মিত্র বলা হয়। যে দিকে, ঈপ্সিত কাম্য ফোটে, ইনি সেই দিকের অধিপতি
বলে, এঁর নাম মিত্র। যখন পূর্ব্ব দিকে মিত্র উদিত হতে চলেন, তখন সেই অভীষ্ট প্রকাশ ভিন্ন, অন্য
সকল কিছুকে আবৃত করা হয়। তা না হলে এই মিত্রের প্রকাশটা উজ্জ্বল হয় না। এই যে আবরণের
দিক্‌, এইটি পশ্চিম দিক (প্রতীচী)।এই পশ্চিম দিকের উপর যে দেবতা আধিপত্য করেন, তিনি
বরুণ। আবৃত করেন, তাই বরুণ।বেদে এঁদের কে  মিত্রাবরুণ নামক যুগ্ম-দেবতা বলে বন্দনা করা
হয়েছে। যা ভোগ হয়ে গেছে, যে সোম পান করা হয়েছে, তা ঐ পশ্চিম দিকে বলে সোমকে বারুণীও
বলা হয়, এবং সোম যে পশ্চিম দিকে তাও বলা হয়। (ঐতরেয় ব্রাহ্মণ দ্রষ্টব্য।)
যা পূব দিকে ফুটে উঠল, যা চেতনায় প্রকাশ পেল, তার যে ভোগ, সেটা হয় দক্ষিণ দিকের দ্বারা; টক,
ঝাল, মিষ্টি, দুঃখ, সুখ ইত্যাদির যে ভোগ হয়, সে ভোগের যে মাত্রা, এবং সেই ভোগের দ্বারা যে
পরিণতি, যে দিকে গতি, তা হয় দক্ষিণাগ্নির প্রশাসনে, দক্ষিণ দিকের দ্বারা হয়।অনুভূতি বা
ভোগের দ্বারা আমরা সংযমিত হই, যা ভোগ করি তা হয়ে যায় আমার রস, তাতে  হয় আমার
গঠণ। এইটি  চেতনায় যেখানে হয়, তার নাম সংযমনী পুরী, আর এই যমনের উপর যিনি
আধিপত্য করেন, সেই দেবতার নাম যম।
এই যে আমরা যমিত হচ্ছি, এর সাথে  সাথে আমাদের উত্তরণ হচ্ছে; আমরা আবার কেমন করে
নূতন হয়ে ফিরব, কেমন সোম আবার পান করবো, তা নির্দ্ধারিত হচ্ছে। প্রতি ভোগে আমাদের
একটি অংশ, উত্তর দিকে সোম-পুরীতে চলে যাচ্ছে।  ঐতরেয় ব্রাহ্মণে উক্ত হয়েছে, 'উত্তরা হ  বৈ
সোমোরাজা---রাজা সোমই উত্তর'' ।(ঐতরেয় ব্রাহ্মণ ১।২।৪ দ্রষ্টব্য।) উৎক্ষেত্রের বা দিব্য ভোগের
মাত্রা যিনি দেন, তিনি উমা। উময়া সহ = সোম। তাই এই সোমের যে প্রকৃত ভোগ, তা অন্তবিহীন,
মৃত্যু বা ক্ষয়িষ্ণুতার দ্বারা আক্রান্ত নয়।তাই ইন্দ্র এবং দেবতারা সোমপায়ী। এই উৎক্ষেত্রে বিচরণই
ওড়া, পক্ষী হয়ে, বিহংগ হয়ে উড্ডীয়মান হওয়া।
১৮।৩।৪। অনাবৃত, অসংবৃত।
ন অনেন কিংচন অনাবৃতম্‌ কিংচন অসংবৃতম্‌ ------  কিছুই নেই যা এঁর দ্বারা অনাবৃত
নয়, কিছুই নেই যা এঁর দ্বারা অসংবৃত নয়; অর্থাৎ সকল কিছুই এই আত্মার দ্বারা আবৃত
এবং সংবৃত। 
নিজেকে নিজে সম্যক রূপে বরণ করে এই আত্মস্বরূপ বিশ্বরূপ ধারণ করেছেন। ইনি, যা
জানেন বা বোধ করেন, তাই হন; নিজেকে নিজে এক একটি রূপের দ্বারা বরণ করে, সেই সেই
1/23/25, 11:13 PM দধীচি উক্ত মধুবিদ্যা। বৃহদারণ্যক উপনিষদ্‌ দ্বিতীয় অধ্যায় পঞ্চম ব্রাহ্মণ। (Brihadaranyaka Upanishad Second Chapter Fifth Brahmin in Bengali languag…
https://upanishadinbengali.blogspot.com/2025/01/brihadaranyaka-upanishad-second-chapter.html 53/67

রূপ হয়ে নিজেকে প্রকাশ করেছেন।আবার সেই প্রতিরূপের অন্তরে ইনি স্থির, অপরিণামী
নিজবোধ স্বরূপ হয়ে অবস্থিত। এই রূপময় হওয়াই সংবরণ, বা সংবৃত করা।
এই যে নিজেকে সংবৃত করে, রূপ সকল, হয়েছেন, আর সেই প্রতি রূপটি, বা জীবাত্মা, সেও
জ্ঞানময় বা বোধময়। বহির্বিশ্বে, বায়ু, জল, নক্ষত্র ইত্যাদি যে রূপ সকল, তদনুসারে আমরা
নিজ নিজ অন্তরে, সেই রকম অনুভূতিময় বা রূপময়। বাইরের বৃক্ষটি অনুসারে অন্তরে যে রূপ
বা রূপের অনুভূতি ফুটছে, সেই রূপের আকারেও এই আত্মাই প্রকাশ পাচ্ছেন, বা নিজেকেই
তাদেরকে বরণ করছেন; এইটি লক্ষ করে আবৃত শব্দটি উক্ত হয়েছে।  
১৯শ মন্ত্র।
ইদং বৈ তন্মধু দধ্যঙ্‌ঙাথর্ব্বণো'শ্বিভ্যামুবাচ তদেতদৃষিঃ পশ্যন্নবোচদ্রূপং রূপং প্রতিরূপো বভূব
তদস্য রূপং প্রতিচক্ষণায় ইন্দ্রো মায়াভিঃ পুরুরূপ ঈয়তে যুক্তা হস্য হরয়ঃ শতাদশেত্যয়ং বৈ
হরয়'য়ং বৈ দশ চ সহস্রাণি বহূনি  চানন্তানি চ তদেতদ্‌ব্রহ্মাপূর্ব্বমনপরমনন্তবমবাহ্যময়মাত্মা ব্রহ্ম
সর্ব্বানুভূবিত্যনুশাসনম্‌।।১৯।।
১৯।১।অন্বয়-অর্থ।
ইদং (ইহা;এই) বৈ (অবশ্যই) তৎ (সেই) মধু (মধু) দধ্যঙ্‌ (দধ্যঙ্‌) আথর্ব্বণঃ (আথর্ব্বণ)
অশ্বিভ্যাম্‌ (অশ্বিদ্বয়কে) উবাচ (বলেছিলেন)। তৎ এতৎ (সেই এই; সেই এই মধু বিদ্যা) ঋষিঃ
(ঋষি; সত্যদ্রষ্টা) পশ্যন্ (দর্শন করে) অবোচৎ (বলেছিলেন) রূপং রূপং (রূপে রূপে)
প্রতিরূপো (প্রতিরূপ/অনুরূপ) বভূব (হয়েছেন) তৎ (তা) অস্য (এই) রূপং (রূপকে)
প্রতিচক্ষণায় (প্রতিচক্ষণ/প্রতিদর্শন করার জন্য) ইন্দ্রো (ইন্দ্র) মায়াভিঃ (মায়া সকলের দ্বারা)
পুরুরূপ (বহুরূপ/ বহুরূপেতে) ঈয়তে (গমন করেন) যুক্তা (যুক্ত) হি অস্য (এঁর) হরয়ঃ (হরি
সকল; ইন্দ্রিয় সকল; হয় বা অশ্ব সকল) শতাদশ (শত এবং দশ) ইতি অয়ম্‌ বৈ হরয়ঃ
(ইহাই হরি সকল) অয়ং বৈ দশ চ সহস্রাণি (ইহাই দশ এবং সহস্র) বহূনি চ অনন্তানি চ (বহূ
এবং অনন্ত) তৎ এতৎ ব্রহ্ম (সেই এই বহ্ম) অপূর্ব্বম্‌ (অপূর্ব্ব) অনপরম্‌ (অন্‌ অপরম্‌---পর-
বিহীন; যাঁর পর নেই; অদ্বিতীয়) অনন্তবম্‌ (ন অন্তবম্‌---ন অন্তরম্‌---অন্তর-হীন) অবাহ্যম্‌
(বাহ্য-হীন) অয়ম্‌ আত্মা (এই আত্মা) ব্রহ্ম (ব্রহ্ম) সর্ব্ব (সকল) অনুভূঃ (অনুভূতি) ইতি
(ইহাই অনুশাসনম্‌ (অনুশাসন)।
১৯।২।অর্থ।
ইহা অবশ্যই সেই মধু (মধু বিদ্যা) (যা) দধ্যঙ্‌-আথর্ব্বণ অশ্বিদ্বয়কে বলেছিলেন। সেই এই
মধুকে ঋষি (সত্যদ্রষ্টা) দর্শন করে বলেছিলেন : রূপে রূপে প্রতিরূপ/অনুরূপ হয়েছেন, তা এই
রূপকে প্রতিচক্ষণ/প্রতিদর্শন করার জন্য; ইন্দ্র মায়া সকলের দ্বারা বহুরূপেতে গমন করেন
(বহুরূপময় হন)।
এঁর (ইন্দ্রের) শত এবং দশ হরি (নামক অশ্ব সকল) যুক্ত; ইহাই (এই আত্মাই) হরি সকল,
ইহাই (এই আত্মাই) দশ এবং সহস্র, বহু এবং অনন্ত। সেই এই বহ্ম, অপূর্ব্ব, অদ্বিতীয়,
অন্তর-হীন, বাহ্য-হীন; এই আত্মা ব্রহ্ম, সকল অনুভূতি, ইহাই অনুশাসন।
১৯।৩। সংক্ষিপ্ত ব্যাখ্যা এবং নিরুক্তি।
1/23/25, 11:13 PM দধীচি উক্ত মধুবিদ্যা। বৃহদারণ্যক উপনিষদ্‌ দ্বিতীয় অধ্যায় পঞ্চম ব্রাহ্মণ। (Brihadaranyaka Upanishad Second Chapter Fifth Brahmin in Bengali languag…
https://upanishadinbengali.blogspot.com/2025/01/brihadaranyaka-upanishad-second-chapter.html 54/67

বৃহদারণ্যক উপনিষদে বলা হয়েছে যে, দক্ষিণ অক্ষিতে যে পুরুষ অবস্থিত, তাঁর নাম 'ইন্ধ';
যদিও তিনি ইন্ধ, তত্রাচ তিনি ইন্দ্র রূপেই আচরিত হন।(বৃহদারণ্যক উপনিষদ্‌ মন্ত্র ৪।২।২ মন্ত্র
দ্রষ্টব্য।)
ইন্ধ অর্থে যিনি দীপ্ত বা প্রজ্বলিত হন, যিনি রূপ কে প্রকাশ করেন। ইন্দ্র হলেন ইদং দ্রষ্টা
পুরুষ। যা কিছু ইদং, যা কিছুকে আমরা 'ইহা' বা 'এইটি' বলতে পারি, সে সব কিছুর দ্রষ্টা
হলেন ইন্দ্র। তাই যা কিছু আছে, অস্তিত্ব সম্পন্ন, ইন্দ্র তার দ্রষ্টা, ভোক্তা। এই স্বয়ংপ্রকাশ
আত্মা নিজেকে দ্বিতীয় করে, রূপ হয়ে জাত হচ্ছেন, আবার সেই রূপকে দর্শন করছেন, ভোগ
করছেন। তাই ইনি যুগপৎ ইন্ধ এবং ইন্দ্র। একটি পাখী, একটি মানুষ, একটি বৃক্ষ, ইত্যাদি সব
রূপ। আবার ঐ বৃক্ষটি থেকে যে বৃক্ষের অনুভূতি, যা পাখীতে একভাবে ফুটছে, একটি মানুষে
আর একভাবে ফুটছে, সেইগুলি ঐ বৃক্ষের প্রতিরূপ।
যিনি পরম আত্মস্বরূপ, তিনি নিজেকে বৃক্ষ রূপে জেনে বৃক্ষ হয়েছেন; এইটি হল বহির্বিশ্বের
বৃক্ষ, বা বাইরের একটি গাছ। আবার একটি মানুষে বা পাখীতে, ঐ বাইরের বৃক্ষের রূপটির
অনুসারে, তাদের অন্তরেও ঐ আত্মস্বরূপ চেতনা, বৃক্ষ-রূপ বা বৃক্ষের বোধ ফুটিয়ে দিচ্ছেন; ঐ
অন্তরের বোধ বা অনুভূতির নাম প্রতিরূপ। আবার এই প্রতিরূপ বা অনুভূতিও বিভিন্ন;
একজনের অনুভূতি অন্যজনের থেকে পৃথক, এবং একই বস্তুর অনুভূতি একসময়ে যা,
অন্যসময়ে তার থেকে আলাদা। তাই এই প্রতিরূপ অনন্ত। আবার রূপও অনন্ত। এই আত্মা
যা কিছু হন, তা অনন্তে অনন্তে। ইনি যখন একটি বৃক্ষ হন বা নিজেকে একটি বৃক্ষের আকারে
জানেন, সেইটি অনন্তে, সেইটি কোন দেশ বা কালের দ্বারা ব্যাহত হয় না; আবার তার
বৈচিত্র্যও অনন্ত। যে কোন সত্ত্বার প্রতিটি বৈশিষ্টই অন্তহীন; অন্ত বা মৃত্যুর পরপারে। এই মন্ত্রে
আত্মাকে বহু এবং অনন্ত (বহূনি চ অনন্তানি) বলা হয়েছে। 
 ১৯।৩।১। প্রতিচক্ষণ, প্রতি-দর্শন।
রূপং প্রতিরূপো বভূব তদস্য রূপং প্রতিচক্ষণায় ইন্দ্রো মায়াভিঃ পুরুরূপ ঈয়তে-----রূপে রূপে
প্রতিরূপ(অনুরূপ) হয়েছেন, তা এই রূপকে প্রতিচক্ষণ(প্রতিদর্শন) করার জন্য; ইন্দ্র মায়া
সকলের দ্বারা বহুরূপেতে গমন করেন (বহুরূপময় হন)।
যে ইন্দ্র পরম আত্মস্বরূপের দ্রষ্টা-রূপ ব্যক্তিত্ব, সেই ইন্দ্রই (সেই এক আত্মাই) আমাদের মধ্যেও
দ্রষ্টা। আমাদের সকল ভোগ, সকল দর্শন, আমদের অন্তরাত্মারই ভোগ বা দর্শনের অংশ। এর
অর্থ, একই আত্মা রূপময় হয়ে দ্রষ্টা, এবং প্রতিরূপময় হয়ে প্রতি-দ্রষ্টা। প্রতিরূপময় হওয়া বা
প্রতিরূপকে দর্শন করাই 'প্রতিচক্ষণ', প্রতি-দর্শন। 
১৯।৩।২। চক্ষণ এবং প্রতিচক্ষণ।
চক্ষণ শব্দটি চক্ষ্‌ ধাতু থেকে হয়েছে। চক্ষ্‌ অর্থে (১)দেখা এবং (২)দৃষ্টিগোচর হওয়া। 'চ' অর্থে
'চর্' বা বিচরণ করা। 'ক্ষণ' অর্থে কাল, যা ক্ষরিত হয়, বা যার দ্বারা ক্ষয় বা ক্ষরণ হয়।
সুতরাং 'চক্ষণ' শব্দের প্রকৃত অর্থ হল----- চলা এবং সে চলা বা কাল গতি থেকে আত্ম-
ক্ষরণ বা রূপ প্রকাশ পাওয়া। আমরা ১৭।৩।৩ অংশে এই বিষয়ে বলেছি। আমাদের যে
আকাশ, সেই আকাশে যিনি সূর্যরূপে প্রকাশিত, তিনি প্রাণ, এবং তাঁর থেকে কাল এবং রূপ
(আলোক) পকাশ পাচ্ছে। এই সূর্যে যিনি আছেন, তিনি অক্ষিগত পুরুষ, এবং আমাদের
চক্ষুতে প্রতিষ্ঠিত।
1/23/25, 11:13 PM দধীচি উক্ত মধুবিদ্যা। বৃহদারণ্যক উপনিষদ্‌ দ্বিতীয় অধ্যায় পঞ্চম ব্রাহ্মণ। (Brihadaranyaka Upanishad Second Chapter Fifth Brahmin in Bengali languag…
https://upanishadinbengali.blogspot.com/2025/01/brihadaranyaka-upanishad-second-chapter.html 55/67

সুতরাং চক্ষণ অর্থে যখন গতি বা চলা এবং রূপ প্রকাশ, তখন প্রতিচক্ষণ অর্থে যিনি রূপ
প্রকাশ করছেন এবং যে স্রষ্টার দ্বারা রূপময় হয়ে আমরা প্রকাশ পাচ্ছি, তাঁর দিকে (তাঁর প্রতি)
ফিরে তাকানো, তাঁর দিকে ফিরে চলা। চক্ষণ আর প্রতিচক্ষণ, দেখা এবং ফিরে দেখা, এই
নিয়ে দুনিয়া। এই দৃষ্টির আদান-প্রদান মধুময়।
১৯।৩।৩।প্রতি এবং প্রত্যক্‌।
প্রত্যক্‌ শব্দের অর্থ পশ্চিম বা প্রতীচী। প্রতি +অক্‌ (অঞ্চ্‌)---যা 'প্রতি' দিকে, বা যা 'প্রতি'
দিঙ্‌মুখী। এখানে প্রতি-দিক্‌ অর্থে, যে দিক্‌টি উৎস, সেই দিক্‌-মুখী। আমরা ১৪।৩।১ অংশে
প্রত্যক্‌ আত্মার কথা বলেছি। আমরা যদি বিশ্বকে পূব দিকে, বহির্মুখে না দেখে, 'প্রতি'দিকে
দেখি, তখন দেখি যে আমাদের বিশ্বের প্রতি অনুভূতির মূলে আত্মবোধ বা নিজবোধ রয়েছেন,
যাঁর নাম প্রত্যক্‌ আত্মা। নিজে না থাকলে কোন জ্ঞান বা বোধ হয় না। এই বিশ্ব যাকে আমরা
জানি, তা আমাদের অনুভূতি দিয়ে রচিত। এই অনুভূতি, জ্ঞান বা বোধের বিশ্বকে দেখা
অভ্যাস হলে, ভৌতিকতার মূলে নিজের জ্ঞানময়তা, এবং জ্ঞানময়তার মূলে অপরিণামী,
সনাতন অত্মবোধ বা নিজবোধ দৃষ্ট হন। অহং বা 'আমি' এই আত্মবোধেরই বুকে ফুটে থাকে
এবং আত্মবোধেই নির্বাপিত হয়।
১৯।৩।৪।পুরুরূপ।
এই আত্মা নিজেকে খণ্ডিত করে বহু হয়েছেন, বিশ্বরূপ ধারণ করেছেন; এবং সেই আত্ম-
খণ্ডগুলিকে 'পুরুরূপ' বলা হয়েছে। পুরু শব্দের অর্থ 'বহু'। 'পুরু' শব্দটির সাথে 'পুরুষ' এই
শব্দটির সম্বন্ধ আছে। পুরুষ = পুরু+ষ; ষ অর্থে 'খণ্ডন। সুতরাং পুরুষ অর্থে যিনি পুরু বা
বহু হয়ে খণ্ড খণ্ড পুরে বিদ্যমান। পুরুষ শব্দের অর্থ আমরা ১।৩।২ এবং ১।৩।৩ অংশে
বর্ণনা করেছি।
১৯।৩।৫। ইন্দ্র, মায়া এবং ইন্দ্রিয়।ইন্দ্রো মায়াভিঃ পুরুরূপ ঈয়তে------ ইন্দ্র মায়া সকলের
দ্বারা বহু রূপেতে গমন করেন (বহুরূপময় হন)। যে পথ সকল দিয়ে ইন্দ্র যাতায়াত করেন,
তার নাম ইন্দ্রিয়; ইন্দ্রিয়= ইন্দ্র ঈয়তে। আবার এই ইন্দ্রিয় সকলের দ্বারাই আমরা রূপসমূহে
গতিশীল এবং রূপসকল এই ইন্দ্রিয়দের দ্বারা বাহিত হয়ে শব্দ,স্পর্শ, রূপ, রস, গন্ধের
আকারে আমাদের অন্তরে আসছে। কঠোপনিষদে ইন্দ্রিয়দের 'হয়' বা অশ্ব বলা হয়েছে, যারা
শরীররূপ রথকে বহন করছে। অশ্ব শব্দের বুৎপত্তিগত অর্থ আমরা ১৬।৩।১ অংশে বিবৃত
করেছি।
ইন্দ্রিয় সকলের দ্বারাই আমরা অন্তর্মুখী হই (প্রতিচক্ষণ) এবং ইন্দ্রিয় সকলের দ্বারাই আমরা
বহির্মুখী হই (চক্ষণ)। সর্ব্বভূতের, সর্ব্বরূপের স্রষ্টা যে আত্মা, তিনি সেই রূপসকলকে মায়ার
দ্বারা সৃষ্টি করে বহু, বহু, অনন্ত, অনন্ত রূপ হয়েছেন; আবার সেই সৃষ্ট রূপের প্রত্যেকটি থেকে
সেই একই আত্মা, জীবাত্মা বা প্রত্যক্‌ আত্মা হয়ে সকল রূপকে দর্শন (প্রতিচক্ষণ) করছেন।
মায়া শব্দটি 'মি' ধাতু থেকে হয়েছে। মি ধাতুর অর্থ মাপ বা মান প্রদান করা, নির্মাণ করা।
(এই প্রসঙ্গে,১৭।৩।১ অংশে উদ্ধৃত 'গৌরী মিমায় সলিলানি তক্ষতি...' মন্ত্রটি উল্লেখযোগ্য।)
যে শক্তির দ্বারা আত্মা নিজেকে মান সম্পন্ন, পরিমাপযোগ্য সত্তায় সৃষ্টি করেছেন, বা রূপময়
1/23/25, 11:13 PM দধীচি উক্ত মধুবিদ্যা। বৃহদারণ্যক উপনিষদ্‌ দ্বিতীয় অধ্যায় পঞ্চম ব্রাহ্মণ। (Brihadaranyaka Upanishad Second Chapter Fifth Brahmin in Bengali languag…
https://upanishadinbengali.blogspot.com/2025/01/brihadaranyaka-upanishad-second-chapter.html 56/67

হয়েছেন, তার নাম 'মায়া'। মায়ার দ্বারাই এই চেতনা
নিজেকে সত্যরূপে বিশ্বের আকারে প্রকাশ করেছেন। পরিমাপ যোগ্য, তাই মায়া; যিনি
অপরিমেয়া, যাঁর বৈদিক নাম 'অমা', তিনিই মায়ার দ্বারা পরিমাপযোগ্যা হয়ে অনন্তে অনন্তে
নিজেকে প্রকাশ করে, নিজেই নিজেকে দর্শন করছেন, প্রতিটি সত্ত্বা থেকে। তাই ইনি
সহস্রনয়না, এবং ইন্দ্রের শক্তি। এই জন্য চণ্ডীতে বলা হয়েছে :
কিরিটীনী মহাবজ্রে সহস্রনয়োনজ্জ্বলে।
বৃত্রপ্রাণহরে চৈন্দ্রি নারায়ণী নমো'স্তু তে।। (চণ্ডী ১১।১৯।)কিরিটীনী, মহাবজ্রে (মহান বজ্রশক্তি
ধারিণি), সহস্র নয়নজ্যোতিতে উজ্জ্বলা, বৃত্রের প্রাণ হরণকারিণি, এবং ঐন্দ্রি (ইন্দ্রের
শক্তি), হে নারায়ণি তোমাকে প্রণাম।
নয়ন অর্থে, নয়্‌ + অন। নয়্‌ ধাতুর অর্থ, 'নিয়ে চলা'; অন= প্রাণ। এই যে প্রাণ আমাদের
নিয়ে চলেছেন, এঁর নাম নয়ন; এই গতি থেকে রূপ প্রকাশ পাচ্ছে।
১৯।৩।৬। ইন্দ্রের হরি নামক অশ্ব।
ইন্দ্রের অশ্বকে হর্যশ্ব বা হরি-অশ্ব বলা হয়। এই অশ্বের সংখ্যা দশ, শত, সহস্র, অনন্ত। "যুক্তা
হস্য হরয়ঃ শতাদশেত্যয়ং বৈ হরয়'য়ং বৈ দশ চ সহস্রাণি বহূনি  চানন্তানি-------যুক্তা (যুক্ত)
হি অস্য (এঁর) হরি (হরি নামক অশ্ব) সকল শত এবং দশ। ইহাই (এই আত্মাই) হরি সকল,
ইহাই (এই আত্মাই) দশ এবং সহস্র, বহু এবং অনন্ত।"
সংলগ্নতা এবং যুজ্যতা প্রাণের ধর্ম্ম। এই মহাপ্রাণকে বা বায়ুকে সূত্রাত্মা বলা হয়, এবং
আত্মতন্তুর জালে ইনি সবাইকে সবার সাথে এবং নিজের সাথে যুক্ত করে রেখেছেন। এই
আত্মাই শব্দ,স্পর্শ, রূপ, রস এবং গন্ধরূপ বেদন হয়ে প্রতি ক্ষণে, এবং অনাদি অনন্ত কাল
ধরে, এক থেকে অপরে প্রবাহিত হচ্ছেন। এ সবই প্রাণের প্রবাহ, সোমের প্লাবন, এ সবেরই দ্রষ্টা
এবং ভোক্তা এই এক অব্যয় আত্মা, যিনি সহস্রাক্ষ ইন্দ্র এবং সর্ব্বত্র বিদ্যমান। 
এই মন্ত্রে 'হরয়ঃ' শব্দটি 'হরি' শব্দের বহুবচন। যে যেখানে যা কিছু ভোগ করুক, যাই অনুভব
করুক, তার ভোক্তা এই আত্মাই, এই ইন্দ্র। ইন্দ্র যিনি আত্মার বা প্রাণের বা প্রজাপতির
ভোক্তৃত্ব, বা ভোক্তারূপ, তাঁতেই সর্ব্বরূপ, সর্ব্বভোগ হরণ হয়ে আহৃত হচ্ছে। আমরা যাই ভোগ
করি না কেন, তা প্রথমে প্রাণেতেই নিবেদিত হয়। (ছান্দোগ্য উপনিষদ্‌ ১৯ খণ্ড দ্রষ্টব্য।) আর
প্রাণ যেভাবে বেদনময় হন, তৃপ্ত হন, সেই তৃপ্তির অনুতৃপ্তিতে আমরা, আমাদের ইন্দ্রিয়রা,
অঙ্গ-প্রত্যঙ্গরা, আমাদের সাথে যুক্ত জীবেরা, এবং বহিরাকাশে আমাদের সাথে সম্বন্ধযুক্ত
সূর্যাদি যেসব লোক, তারা সবাই তৃপ্ত হয়। এই যে তৃপ্তির ছড়িয়ে পড়া, স্ফীত হওয়া, এ
প্রাণেরই স্ফীতি। প্রাণের এই স্ফীতি কে লক্ষ্য করে প্রাণকে অশ্ব বলা হয়। শ্বি ধাতুর অর্থ স্ফীত
হওয়া, এবং 'অশ্বৎ' অর্থে 'স্ফীত হয়েছিলেন। অশ্বৎ শব্দটি শ্বি ধাতুর রূপ।অশ্ব শব্দ, অশ্বৎ
শব্দ থেকে হয়েছে। "ততঃ অশ্বঃ সম্ অভবৎ, যৎ অশ্বৎ----- যখন অশ্বৎ (স্ফীত)
হয়েছিলেন, তখন অশ্ব সম্যক হল---- যখন অশ্বৎ (স্ফীত) হয়েছিলেন, তখন অশ্ব সৃষ্টি
হল।" (বৃহদারণ্যক উপনিষদ্‌ মন্ত্র ১।২।৭ দ্রষ্টব্য।) এসব কথা আমরা বিশদভাবে, ১৬।৩।১
অংশে, বলেছি। (আধুনিক বিজ্ঞানও বলে যে বিশ্ব স্ফীত হচ্ছে।)
১৯।৩।৭। দশ, শত, সহস্র, বহু, অনন্ত।
1/23/25, 11:13 PM দধীচি উক্ত মধুবিদ্যা। বৃহদারণ্যক উপনিষদ্‌ দ্বিতীয় অধ্যায় পঞ্চম ব্রাহ্মণ। (Brihadaranyaka Upanishad Second Chapter Fifth Brahmin in Bengali languag…
https://upanishadinbengali.blogspot.com/2025/01/brihadaranyaka-upanishad-second-chapter.html 57/67

যুক্তা হস্য হরয়ঃ শতাদশেত্যয়ং বৈ হরয়'য়ং বৈ দশ চ সহস্রাণি বহূনি  চানন্তানি চ -----
সংযুক্ত এঁর শত এবং দশ (সংখ্যক) হরি নামক অশ্ব সকল। ইহাই (এই আত্মাই) হরি সকল,
ইহাই (এই আত্মাই) দশ এবং সহস্র, বহু এবং অনন্ত।
দশ সংখ্যাটি একটি বিশেষ দশা বা অবস্থার সংখ্যা। শত সংখ্যাটি পূর্ণতা সূচক। দশ থেকে
আমরা পূর্ণতায় যাই, যখন দেখতে পাই যে, দশান্ত বা দশার শেষে আমরা শেষ হইনা, দশার
অন্ত পূর্ণতাতেই হচ্ছে; নিজেবোধ স্বরূপেই, সনাতন আত্মাতেই, দশা সম্পূর্ণ হচ্ছে; এর নাম
শতবর্ষ বাঁচা। আর শত সংখ্যা প্রাপ্ত হবার পর সহস্র সংখ্যা লব্ধ হয়। সহস্র অর্থে, 'আত্মনা
সহ স্রবতি---আত্মার সাথেই প্রবাহিত'। পূর্ণতার যা পারাকাষ্ঠা, তা হল সকল কর্ম্মে, সকল
চাঞ্চল্যে আত্মাই প্রবাহিত হচ্ছেন, আত্মাই রূপময় হচ্ছেন, এই সত্যে প্রতিষ্ঠিত হয়ে বিচরণ
করা।
বহু শব্দটি বাহু শব্দের সাথে সম্বন্ধযুক্ত। বাহু হল স্পর্শ জ্ঞানের কর্মেন্দ্রিয়, এবং বাহু দ্বারা
আমরা কর্ম্ম করি। কর্ম্মের দ্বারাই আমরা বহু হই; প্রতি কর্ম্মে, আমরা একটি ভিন্ন পুরুষ হয়ে
আত্মবোধের বুকে প্রকাশ পাচ্ছি।  প্রাণপ্রবাহই স্পর্শ, এবং স্পর্শ থেকেই সৃষ্টি হয়। 
অনন্ত মানে যা অন্তহীন, যা মৃত্যুর ঊর্দ্ধ্বে। এই প্রাণে যা কিছু সৃষ্ট হয়েছে, তা অনন্ত। এই
আনন্ত্য হল দেবভূমির বৈশিষ্ট্য। 
প্রাণরূপে,কালরূপে প্রবাহিত আত্মারই সংখ্যাতি এই দশ, শত, সহস্র, বহু, অনন্ত। এই জন্য,
ইহাই হরি বা ইন্দ্রের অশ্বের সংখ্যা।
১৯।৩।৮। নবত্ব ও আনন্ত্য। ইন্দ্র এবং দধীচি। 
যা অন্তবান্‌ নয়, তা চির-নবীন। অনন্তের ধর্ম্ম নবত্ব। যেখানে অন্ত বা মৃত্যু নেই, সেখানে
জীর্ণতা বা ক্ষয় নেই; তাই যে অনন্ত, সে নিত্য নবীন। যিনি নিত্য নূতন, তিনি যখন বহু হন,
তখন তা পৌনপৌনিক আনন্ত্যে হয়।  নব (৯) সংখ্যাটি নবত্ব এবং পৌনপৌনিক আনন্ত্যর
প্রকাশক।এই জন্য চিৎ শক্তিকে পুনর্ভূ (পুনঃ-ভূং) বলা হয়। ১ থেকে ৮ অব্দি সংখ্যাগুলিকে
৯ দিয়ে যদি ভাগ করা হয়, তবে ভাগফলগুলিতে এই পৌনপৌনিকতা দেখা যায়; যেমন ১/৯
=0.১১১১১১১..., ২/৯ =0.২২২২২২২......, ৩/৯=0.৩৩৩৩৩..., ইত্যাদি। এই নবীনতা,
পৌনপৌনিক আনন্ত্য, দেবক্ষেত্র তথা ইন্দ্রের বৈশিষ্ট্য। ঋক্‌ বেদে উক্ত হয়েছে যে ইন্দ্র দধীচির
অস্থি থেকে নির্মিত বজ্রের দ্বারা বৃত্রাসুরকে নবনবতিবার হত্যা করেছিলেন। মন্ত্রটি উদ্ধৃত
করলাম : ইন্দ্রো দধীচো অস্থভিঃ বৃত্রাণ্যপ্রতিষ্কুতঃ। জঘান নবতীর্নব।। (ঋক্‌ বেদ ১।৮৪।
১৩ মন্ত্র।) 
অর্থ।  ইন্দ্রো (ইন্দ্র) দধীচো (দধীচীর) অস্থভিঃ (অস্থি সমূহের দ্বারা) বৃত্রাণি (বৃত্রকে)
অপ্রতিষ্কুতঃ (অপ্রতিদ্বন্দ্বী) জঘান (হত্যা করেছিলেন) নবতীঃ নব (নব নবতি বার)--------
অপ্রতিদ্বন্দ্বী ইন্দ্র দধীচীর অস্থি সমূহের দ্বারা বৃত্রকে নব-নবতিবার হত্যা করেছিলেন ।(ঋক্‌
বেদ ১।৮৪।১৩ মন্ত্র।)
নবনবতিবার অর্থে, পৌনপৌনিক আনন্ত্য। বাক্‌, প্রাণ এবং মন এই তিনের সমাসে আত্মা বিশ্ব
সৃষ্টি করেছেন; এর নাম ত্রিবৃৎ। ছান্দোগ্য উপনিষদে বলা হয়েছে যে সৃষ্টি করতে গিয়ে এই
আত্মা বাক্‌ (তেজ), প্রাণ (অপ্‌), এবং মন (অন্ন), এই তিন দেবতা হয়েছিলেন; এবং তাঁদের
সমাসে সকল কিছু গঠিত হয়েছে। (ছান্দোগ্য উপনিষদ্‌ ৬ষ্ঠ অধ্যায় ২য়, ৩য়, ৪র্থ, ৫ম খণ্ড
দ্রষ্টব্য।) যে অন্ধকার বা অজ্ঞানতা, এই ত্রিবৃৎকে আচ্ছাদন করে রাখে, আবৃত করে রাখে,
তার নাম, বা চেতনার সেই স্বরূপের নাম বৃত্রাসুর। বৃত্র = বৃ (আবৃত করা)+ত্র (তিন)। এই
1/23/25, 11:13 PM দধীচি উক্ত মধুবিদ্যা। বৃহদারণ্যক উপনিষদ্‌ দ্বিতীয় অধ্যায় পঞ্চম ব্রাহ্মণ। (Brihadaranyaka Upanishad Second Chapter Fifth Brahmin in Bengali languag…
https://upanishadinbengali.blogspot.com/2025/01/brihadaranyaka-upanishad-second-chapter.html 58/67

বৃত্র যখন নবনবতিবার ধ্বংস হয়, তখন চিরকালের জন্য দৃষ্ট হন স্বয়ংপ্রকাশ আত্মা, এবং তাঁর
দেবময় প্রকাশ, যা মৃত্যুর পরপারে, যা অন্তহীন এবং নিত্য নবীন।
পুরাণে এবং বেদে উক্ত হয়েছে যে দধীচির অস্থিসকল (দধীচো অস্থভিঃ) দিয়ে যে বজ্র নির্মিত
হয়েছিলো, তা দিয়ে ইন্দ্র নবনবতিবার বৃত্রকে হত্যা করেছিলেন। 
যাঁতে আমরা স্থাপিত, প্রতিষ্ঠিত, তিনি প্রাণ। হৃদয়ের দ্বারা ধারণ করে ইনি ক্রমণ করেন, তাই
ইনি দধিক্রা। এই প্রাণকে যিনি জেনেছেন তাঁর নাম দধীচি। দধীচি শব্দটি দধ্যচ্‌ (দধ্যঙ্‌) শব্দ
থেকে হয়েছে; দধ্যচ্‌=দধি+অচ্‌। দধ্যচ্‌ বা দধ্যঙ্‌-আথর্বণ ঋষি বা দধীচি ঋষির কথা আমরা
১৬।৩।২ অংশে ব্যাখ্যা করেছি। এই দধীচি যেখান দিয়ে যান, সবার সঙ্গে প্রাণের আদান-
প্রদান করতে করতে যান, প্রাণময় ব্যবহার করতে করতে যান। এই প্রাণময়, মধুময় আদান-
প্রদানময় ব্যবহার তার সাথেই হয়, যার কাছে এই বিশ্বটা তার নিজেরই চিন্ময়রূপ হয়ে যায়;
এই চিন্ময়তার যে মধুময়তা, তা এই উপনিষদের প্রথম ১৫টি মন্ত্রের দ্বারা  ঋষি ব্যক্ত
করেছেন। 
যাঁতে আমরা স্থাপিত, প্রতিষ্ঠিত, তিনি প্রাণ, আর সেই প্রাণই যাঁর অস্থি, তিনি ঋষি দধীচি।
এই যে নামরূপময় বিশ্ব, নামরূপময় আমরা, আমাদের সবার একটি নাম, সংজ্ঞা, একটি
শব্দাত্মক সত্ত্বা আছে, এবং আয়তনময়, আকার-সম্পন্ন, বা পরিমাপযোগ্য একটি রূপ আছে।
এই নাম আর রূপই সত্য, যার দ্বারা আমাদের অস্তিত্ব বোধ সর্ব্বদা বজায় রয়েছে। আর এই
নামরূপ যাঁকে আচ্ছাদিত করে রেখেছেন, তিনি প্রাণ। প্রাণই সকল স্থিতির মূলে, এবং
উপনিষদে প্রাণকে চক্ষু (সত্য বোধ) এবং প্রতিষ্ঠা বলা হয়েছে। এই প্রাণের যে দৃঢ়তা বা অস্থি
বা হাড়, তাকে কাঠামো করে আমরা নাম-রূপময় হয়েছি। উপনিষদে বলা হয়েছে, 'প্রাণো বা
অমৃতম্‌ নামরূপে সত্যম্‌ তাভ্যাময়ং প্রাণশ্ছন্নঃ-----প্রাণ অমৃত, নাম এবং রূপসকল সত্য,
তাদের দ্বারা (নাম এবং রূপসকলের দ্বারা) প্রাণ আচ্ছাদিত। (বৃহদারণ্যক উপনিষদ্‌ ১।৬।৩।)
দধীচি, যিনি জানেন যে প্রাণই তাঁর অস্থি, সেই অস্থি, হাড় বা মহাপ্রাণের দৃঢ়তা দিয়ে যে বজ্র
নির্মিত হয়, তার দ্বারা বৃত্রাসুর-কৃত অন্ধকার চিরতরে দূর হয়, এবং প্রাণের প্লাবনে প্লাবিত যে
বিশ্ব, আর সেই বিশ্বের মূলে যে মধুময় আত্মা, যিনি সর্ব্বত্র স্থিত, তাঁর প্রকাশে অক্ষয় যে স্বর্গ
বা দ্যুলোক তা লাভ হয়। এই রকম যে দ্যু, তার থেক ইন্দ্র কখন বিচ্যুত হন না । ঋক্‌ বেদের
একটি মন্ত্র উদ্ধৃত করলাম : ইন্দ্রেণ রোচনা দিবো দৃঢ়হানি দৃংহিতানি চ। স্থিরাণি ন
পরানুদে।।(ঋক্‌ বেদ ৮।১৪।৯।)
অর্থ: ইন্দ্রেণ (ইন্দ্রের দ্বারা) রোচনা (দীপ্ত মণ্ডল) দিবো (দ্যুলোকের) দৃঢ়হানি (দৃঢ়), দৃংহিতানি
চ (এবং দৃঢ়তায় প্রতিষ্ঠিত); স্থিরাণি (স্থির) ন(এমনি) পরানুদে (নুদ্‌ = বলপ্রয়োগে সরিয়ে
দেওয়া; পরানুদে = অবিচ্যুত)----ইন্দ্রের দ্বারা দ্যুলোকের দীপ্ত মণ্ডল, (ইন্দ্রের দ্বারা) দৃঢ়
এবং দৃঢ়তায় (দ্যুলোক) প্রতিষ্ঠিত, এমনি স্থির যা অবিচ্যুত।(ঋক্‌ বেদ ৮।১৪।৯।)
১৯।৩।৯। অনন্তর, অবাহ্য ব্রহ্ম।
তদেতদ্‌(তৎ এতৎ)ব্রহ্মাপূর্ব্বমনপরমনন্তবমবাহ্যময়মাত্মা ব্রহ্ম সর্ব্বানুভূবিত্যনুশাসনম্‌----সেই
এই বহ্ম, অপূর্ব্ব, অদ্বিতীয়, অন্তর-হীন, বাহ্য-হীন; এই আত্মা ব্রহ্ম, সকল অনুভূতি, ইহাই
অনুশাসন। 
1/23/25, 11:13 PM দধীচি উক্ত মধুবিদ্যা। বৃহদারণ্যক উপনিষদ্‌ দ্বিতীয় অধ্যায় পঞ্চম ব্রাহ্মণ। (Brihadaranyaka Upanishad Second Chapter Fifth Brahmin in Bengali languag…
https://upanishadinbengali.blogspot.com/2025/01/brihadaranyaka-upanishad-second-chapter.html 59/67

এই মন্ত্রাংশের প্রথমে তৎ এতৎ ব্রহ্ম শব্দটি ব্যবহার কথা হয়েছে। এই 'তৎ'
বা তৎপুরুষের বিষয়ে, পূজ্যপাদ গুরুদেব, মহর্ষি বিজয়কৃষ্ণ চট্টোপাধ্যায়ের একটি উপদেশের
অংশ প্রাসঙ্গিক বলে এখানে উদ্ধৃত করলাম-----  
'তৎ পুরুষের আমরা অপূর্ব্ব বর্ণনা পেয়েছি। ধন্য তিনি, যিনি ব্রহ্মার মত কবি হয়ে লিখেছেন,
"জ্ঞানশক্তিসমারূঢঃ তত্ত্বমালাবিভূষিতঃ|ভুক্তিমুক্তিপ্রদাতা চ তস্মৈ শ্রীগুরবে নমঃ।।"
'তৎ' ----পদবাচ্য। এই 'তৎ' এর যত প্রকাশ, যত বিভিন্ন বিভিন্ন বিস্তৃতি, তার নাম হল তত্ত্ব।
যেমন চক্ষু একটি ইন্দ্রিয়। এর তত্ত্ব দেখলে দেখবে ----অনন্ত অনন্ত চক্ষু। এইরূপ সব বিষয়ে।
সুতরাং তত্ত্ব দেখা মানে সেই জিনিষের আনন্ত্য দেখা, অর্থাৎ তত্ত্ব হল অনন্ত প্রকাশের বীজ।
এইরকম 'তত্ত্বমালাবিভূষিত' মানে, তাঁর অনন্ত রকম চোখ কান নাক তো বটেই, কিন্তু তার
প্রত্যেকটা আবার অনন্ত। গোটাকতক বাঁধা বাঁধা জিনিষের নামকরণ করলেন, তা তো নয়; যা
নামকরণ করছেন সেই হচ্ছে অনন্ত। শব্দ করলেই একটা বস্তু হয়ে গেল, এমন যে ভূমি---- যা
নাম করছে তাই হচ্ছে, তার আবার প্রত্যেকটা অনন্ত। এমন যে অনন্ত বোধশক্তি, এতে যিনি
সমারূঢ়, এই দেবতা হলেন আমাদের ভুক্তি এবং মুক্তিদাতা। ভোগাচ্ছন্ন প্রাণ আমাদের। তাই
উনি যে মুক্তিদাতা, তা বুঝি না। তাই বললে, শুধু মুক্তি দাতা নন, উনি ভুক্তি এবং মুক্তি
দাতা। 
ভুক্তিও অনন্ত, মুক্তিও অনন্ত। আমাদের মূলধন যদি হয় সীমাবদ্ধ, তা হলে এ কথা চলে।
কিন্তু আমাদের মূলধন অনন্ত। তা হলে, কি এল আর কি গেল, এর আর হিসাব নাই। এমন
যে অনন্ত প্রকাশময় দেবতা, এঁকে আমরা বলছি গুরু।
 
এই উপদেশে তৎপুরুষ, তাঁর আনন্ত্য এবং তাঁর বাক্‌শক্তিত্বের কথা উক্ত হয়েছে। আমরা, ১৭।
৩।১ অংশে, গুরুর শক্তি গৌরীর বা বাকের উদ্দেশ্যে ঋক্‌-বেদোক্ত মন্ত্র উদ্ধৃত করেছি।
এই বহ্ম, অপূর্ব্ব অর্থাৎ যাঁর পূর্বে আর কিছু নেই, বা তিনি সবার পূর্ব্বে;  ইনি অদ্বিতীয়, অর্থাৎ
এঁতে দ্বিতীয়তা বলে কিছু নেই; ইনি অন্তর এবং বাহ্য বিহীন, কেননা অন্তর এবং বাহ্য এঁর
থেকে উৎপন্ন হয়; এই আত্মা, অর্থাৎ যাঁর আত্মত্ব নিয়ে আমরা নিজের পরিচয় দিচ্ছি, তিনি
ব্রহ্ম, অর্থাৎ তিনি সব এবং সবাইকে অতিক্রম করছেন। ইনি সর্ব্ব অনুভূ; ইনি সব হয়েছেন
(ভূ), যার নাম বিশ্বরূপ। আর সেই বিশ্বরূপ থেকে যে শব্দ, স্পর্শ, রূপ, রস, গন্ধের বেদন
আসছে তদনুযায়ী আমরা শব্দ-স্পর্শ-রূপ- রস-গন্ধময় হচ্ছি। তাঁর প্রতিটি
'হওয়া', তাঁর প্রতিটি 'মূর্ত্তি', তাঁর প্রতিটি রূপ,  আমাদেরকে তদ্-অনুযায়ী অনুভূতিময় বা
সোমময় বা প্রতিরূপময় করে বাঁচিয়ে রেখেছে। 
১৯।৩।১০। সদ্যজাত শিব এবং মধু।
পরম আত্মস্বরূপ, যিনি সনাতন, চিরপুরাতন, তাঁর যে নিত্যনবীনতা, সেই মহিমাকে
সদ্যোজাত শিবরূপে উপাসনা করা হয়। ইনি সর্ব্বদাই সদ্য, কালের কলনের দ্বারা ইনি প্রভাবিত
হননা। শিবরাত্রি পূজাতে, সদ্যোজাত শিবকে মধু দিয়ে স্নান করনো হয়।
২০।পরিশিষ্ট। 
1/23/25, 11:13 PM দধীচি উক্ত মধুবিদ্যা। বৃহদারণ্যক উপনিষদ্‌ দ্বিতীয় অধ্যায় পঞ্চম ব্রাহ্মণ। (Brihadaranyaka Upanishad Second Chapter Fifth Brahmin in Bengali languag…
https://upanishadinbengali.blogspot.com/2025/01/brihadaranyaka-upanishad-second-chapter.html 60/67

পূজ্যপাদ গুরুদেব, মহর্ষি বিজয়কৃষ্ণ চট্টোপাধ্যায়ের ১৯৪১ সালে দুর্গা পূজার হোম উপরোক্ত
মধুবিদ্যার মন্ত্রগুলির দ্বারা করেছিলেন। আর দশমী পুজাকালীন, দধীচি এবং মধুবিদ্যার
বিষয়ে কয়েকটি উক্তি করেছিলেন; তার থেকে কিয়দংশ উদ্ধৃত করলাম। 
-------------------------------------------------------------
"এই যে মূর্ত্ত হওয়া, এ মূর্ত্তি মানেই জাতবেদা। বেদন আকারে জাত হচ্ছি, এইটি যে জানছে,
তার নাম হচ্ছে জাতবেদা। আমাদের সৌভাগ্যবশতঃ মা দশভূজা হয়ে চোখে, মুখে, নাকে
দাঁড়িয়েছেন। এই মূর্ত্ত মায়ের কথা বলেছি। এ রস এমনই অদ্ভূত ! এমন সব ছোট ছোট কীট
আছে, যারা microscope এও ধরা পড়ে না; তবু তাদের হাত পা আছে। তেমনি আমার মা
অণু হতে অণু এবং মহান্‌ অপেক্ষা মহান্‌ হলেও, ‘দুর্গা' বলে যখন ডেকেছি, অমনি দশভূজা,
সিংহসমাঢ়ূহা, মহিষমর্দ্দিনী হয়ে দাঁড়িয়েছ। মূর্ত্তি তত্ত্বে এই অপূর্ব্বতা আছে। ইন্দ্রিয়সকল তোমার
কাছে যে মূর্ত্তি সংগ্রহ করে এনেছে, দাঁতে চিবিয়ে খাদ্য হজমের মত একে গুঁড়া করলেও, টুকরা
টুকরা করলেও তার প্রতি চূর্ণে, বা প্রতি টুকরায় দশভুজা মহিষমর্দ্দিনী মা। রূপ যদি হয় চোখের
গ্রাহ্য জিনিষ, আর আমার ইন্দ্রিয়কে যদি আমি চালাতে পারি, তবে সে যতই সূক্ষ্মের থেকে
সূক্ষ্ম হক, এই স্মেরাননা দশভুজা দুর্গা তোকে বিজয় দেবার জন্য সেখানে দাঁড়িয়ে আছে।
আমার এ কথা অনুধাবন করছিস ? অগ্নি রাশি রাশি স্ফূলিঙ্গময় হলেও তার প্রতি স্ফূলিঙ্গ
যেমন প্রদীপ্ত অগ্নি,  তেমনি একে গুঁড়া করতে হবে না, চোখে মুখে ধরলেই, এই দুর্গাময়
মূর্ত্তিরহস্য জানা থাকলে, বাক্‌, পাণি, পাদ ইত্যাদিতে দুর্গামূর্ত্তি দেখে নিবি। তুই ডাক্তার, এক
ফোঁটা রক্তে যেমন জীবন corpuscle পাবি, তেমনি আমার দুর্গার ভিতর এই মহিমময়ী মূর্ত্তি
রয়েছে। এমন যে দুর্গা, এই দুর্গা মাথা থেকে পা পর্য্যন্ত প্রবাহিত হচ্ছে বললে, তোর কি একে
গুঁড়া করতে হবে? না। বহুলা মা দিগ্‌দিগন্তে ঘিরে যাচ্ছে। এ দিকে চোখ যায়---- ইন্দ্রাণী, ও 
দিকে চোখ যায়---- বারাহী, সে দিকে চোখ যায়---- কৌমারী, এমনি করে ঘিরে নিয়ে সে
অসুর মেরেছিল। এখন ঠিক এমনি করে, আমার এই শরীরে আবির্ভূত হয়ে আমাকে ঘিরে
নিয়ে মারছে। ওঁ অস্মিন্‌ অধ্যাত্মশরীরে দুর্গা সমৃদ্ধা ভবতু স্বাহা ইতি। সঙ্গে সঙ্গে একটা কথা
শিখিয়ে দিই। এই যে দুর্গা বললি, ওর সঙ্গে, ‘দুর্গা কই, দুর্গা কই ?' বলে ইন্দ্রিয়দের চালাবার
চেষ্টা করিস না। তাতে মধু কৈঠভ হবে। এই যে তোর ডাক, এই যে তোর বেদন, ওর ধর্ম্মই হল
মূর্ত্ত হয়ে ফোটা; ফোটার জন্য আলাদা চেষ্টা করতে হবে না; তোর বেদনের ধর্ম্মই হল ফুটে
ওঠা। যেমন friction এর ধর্ম্মই হল---- খানিক বাদে জ্বলে ওঠা, তেমনি বেদনের ধর্ম্মই হল
তাই। অস্মিন্‌ অধ্যাত্মে দুর্গা মে সমৃদ্ধা ভবতু স্বাহা ইতি। ‘দুর্গা' এই বেদগতি বুঝলি।একে সারা
প্রাণভরে যারা নিতে সক্ষম হয়েছিল, অথবা সক্ষমতা দিয়েছিলেন, তারাই হয়েছিল ব্রাহ্মণ।
বামুন আর শূদ্র, এভাবে বলছি না, তারা দ্বিজ হয়েছিল। ঋক্‌, যজুঃ, সাম, এই তিনটি হল
বেদের প্রবাহিণী শক্তি। বেদ প্রবাহিত হলে এই তিন রকমের প্রকাশ হয়। ঐ শরীরময় আমার
ত্রিবেদ খেলা করছে। ওখানে প্রতি জায়গায় ঋক্‌ ফুটেছে, অধ্যাত্মে যজুঃ ফুটেছে, আর বুকের
ভিতর একরকমে না একরকমে সাম আসছে। বাইরের জগতের প্রত্যেক প্রত্যক্ষতা বুকে ঘুরে
আসছে ? বাইরের গাছটা তোর চোখে এল, তুই মনে করলি,——গাছটা দেখে ফেললি; তা
নয়। ও একটি শক্তিপ্রবাহ মাত্র নয়। যেমনি ঐ গাছটি চিনলুম,——ওঃ, অমনি এইখান থেকে
বেদপ্রবাহ বয়ে গিয়ে গাছটাকে বইয়ে নিয়ে এল। গাছটি হল ঋক্‌ , আর সেই ঋক্‌ মন্ত্র এখানে
উড়ে এল। ঋক্‌, ওখান থেকে বৃক্ষরূপ মধু সংগ্রহ করে বুকে এনে ঠেকালে, মধু সংগ্রহ করে,
1/23/25, 11:13 PM দধীচি উক্ত মধুবিদ্যা। বৃহদারণ্যক উপনিষদ্‌ দ্বিতীয় অধ্যায় পঞ্চম ব্রাহ্মণ। (Brihadaranyaka Upanishad Second Chapter Fifth Brahmin in Bengali languag…
https://upanishadinbengali.blogspot.com/2025/01/brihadaranyaka-upanishad-second-chapter.html 61/67

মধুকর এসে বাসা বাঁধলে। মধু সংগ্রহের জন্য মৌমাছি উড়েছে, মধু নিয়ে এসে এইখানে,
বাসায় ঢালছে। বটে, বটে ! কিন্তু ঐ মধুর ভিতরে যে, সে যতক্ষণ তদাকার না নেয়, ততক্ষণ
মধুর কোন স্বাদ নেই। মধু বটে , কিন্তু খানেওয়ালা চাই তো ? খেয়ে বলতে চাই 'মধু'। মানে,
নিজেই তুই, এইরকম প্রতি অনুভূতি। বাইরে থেকে যা কিছু' পাস, এমনি করে তুই নিজেই
নিস। বাইরে থেকে সংগ্রহ করলি, নিজে খেলি। স্ত্রী, পুত্র, টাকা, একেবারে নিজে তাই হয়ে,
একেবারে সমস্ত প্রাপ্তি হলি। এই ভাবে চিন্ময়ীতে সব একত্ব প্রাপ্ত হয়, একসা হয়। আমি রেগে
জ্বলে উঠলুম বা ভাবে গলে গেলুম, এর লক্ষণ তোরা জানিস, কিন্তু বিজ্ঞান জানিস না। যদি
বেদজ্ঞ হতিস, তবে দেখতিস, রাগ বা ভাব যা-ই হক, একেবারে নিজে ছাড়া কিছু হইনি। এই
হল চেতন তত্ত্বের, চিন্ময়ীর একটি রহস্য। সে যাতে ঠেকে, তাকে গ্রহন করে, বহন করে, ক'রে
তাই হয়ে যায়, তাই হয়ে তাকে বয়ে নিয়ে আসে। মায়ের আমার, চিন্ময়ীর আমার, এই হল
ত্রিবৃৎবিজ্ঞান। এই তে আরোহণ করে, এই ত্রিবেদমহিমা পড়ে নিয়ে, আমরা ত্রিবৃৎময় ব্রাহ্মণ
হয়েছি বলে, ঐ তিন গাঁটের পৈতা গলায় দিয়েছি। ছেলেরা যেমন টোপর, ঝোলা পরে
convocationএ যায়, লোকে দেখেই জানতে পারে যে,ওখানে যাচ্ছে, তেমনি গলায় এই পৈতা
দিলে জানি যে, ওখানে যাচ্ছে।সুতরাং এ বেদপ্রকাশকে আমি কোথায় দেখব ? এ কি নিবে
গেছে ? এ নেবেও না, মরেও না, ঘুমায় তো না-ই। তুই যখন মরে গেছিস, কোথায় গেছিস ?
ঠিক আছিস ? এ কার বুকে—কে আমি ? যখন দেখি যে, মরেও ঠিক আছি, যখন দেখি ——
দুর্গার বুকে দুর্গা আমি, প্রাণের বুকে প্রাণ আমি, আত্মার বুকে আত্মা আমি, মরে গিয়ে আমার
বিলোপ নেই, সে কে আমি ? কংসের কারাগারে একটা কন্যার ঠ্যাং ধরে শিলার উপর আছার
মা’রতে, সে পাথরের দেওয়াল ভেঙ্গে আকাশে উড়ে চলে গেল। সে শিলার আছাড়ে মরে
গিয়েও, যেমন বিন্ধ্যবাসিনী হয়ে জ্বলে উঠেছিল, তোরাও তাই। তোদের মৃত্যু আর কিছুই নয়,
শুধু এইখান থেকে উড়ে যাওয়া, আর ঐ আকাশটায় গিয়ে প্রদীপ্ত হওয়া। সুতরাং
বেদস্বরূপিণী, জাতবেদা, এই সোমময়ী দুর্গা, একে দুর্গা বলে সেই চিনেছে, যে এই ত্রিবেদের
ত্রিভঙ্গিমা চিনেছে। ত্রিবেদের বিভঙ্গ যদি খেলে ওঠে, ঋক্‌, সাম, যজুঃ, এই প্রবাহ যদি প্রবাহিত
হয়, এই বেদগতি যদি তোদের সচেতন করে, তাহলে তোদের মহিষ মরবে। ময়ের আশীর্ব্বাদে
তোরা এই সারা বছর কাটালি। আগামী সারা বছর ধরে তোরা সবের তলা দিয়ে দিয়ে এই
ঋক্‌, এই সাম, এই যজুঃ এই ভাবে পড়তে থাকবি। প্রতি ভোগের তলায় তোরা এই analysis
এর চোখ রাখবি—তা, কি গাড়ী চরতে, কি মারামারি করতে, কি স্ত্রী পুত্র ভোগ করতে। আর
এই ত্রিবেদের ত্রিভঙ্গিমময়ীর নাম দেবী দুর্গা। এই রকমে চলতে পারবি ? এই রকমে চলতে
গিয়ে তোকে এই ত্রিভঙ্গিমময় দুর্গাকে কোথাও ভেঙ্গে ফেলতে হবে না তো ? তা হলে দুর্গা
আমার আপাদ মস্তকে ——অধিদৈব অধ্যাত্ম শরীরে প্রবাহিত হয়েছে ? সে আমার মহিষত্ব 
ঘুচিয়ে দেবে ? তবে আজ একবার প্রাণ ভরে মা বলে ডাক। মা [ উচ্চ সমবেত আহ্বান।]
হায় হায় ! এই যদি হও তুমি আমার দুর্গা মা, তবে কেমন করে তোমাকে নিরঞ্জন দেব ?  দেবি
! কেমন করে তোমাকে নিরঞ্জন দেব ? যে পরতে পরতে এই রূপে আপনাকে পূজার আকারে,
ত্রিবেদের আকারে লীলালহরিত করছে——বাক্‌ প্রাণ মন, তেজ জল অন্ন—— বাক্‌ চলল,
প্রাণ হয়ে গেল, যাঁহাতক প্রাণ হল, অমনি মন ———অন্ন হয়ে গেল। এই হচ্ছে ? আগে
আগুনের মত জ্বলে উঠল, অমনি সেটা প্রাণময় হল, একেবারে তাই হয়ে গেল। ইন্দ্রাণী——
অমনি চক্ষুরাদি হয়ে দাঁড়াল রে ! প্রাণবন্ত হয়ে, ইন্দ্রিয়াদিময় হয়ে চোখে রূপ, জিভে রস, কাণে
1/23/25, 11:13 PM দধীচি উক্ত মধুবিদ্যা। বৃহদারণ্যক উপনিষদ্‌ দ্বিতীয় অধ্যায় পঞ্চম ব্রাহ্মণ। (Brihadaranyaka Upanishad Second Chapter Fifth Brahmin in Bengali languag…
https://upanishadinbengali.blogspot.com/2025/01/brihadaranyaka-upanishad-second-chapter.html 62/67

শব্দ ইত্যাদি হয়ে দাঁড়াল। তোরা এই শরীরটাকে ভোল। ভুলতে না পারিস তো একে নিয়েই
চল। এতে গন্ধপুষ্পে ওঁ কিরীটিনী মহাবজ্রে সহস্র নয়নোজ্বলে। বৃত্রপ্রাণহরে চৈন্দ্রি নারায়ণি
নমোস্তু’তে স্বাহা।। আঃ । কিসে আঃ বলছিস ? এই যে তুই বসে আছিস, কত অন্ধকার দূর
করে, কত বৃত্র সংহার করে বসে আছিস, তোর দিগন্তটা আলো করে বসে আছিস। কিরীটিনী
কেন ? এই চোখ কান প্রভৃতিতে আলো করে বলে। কিরীটিনী মহাবজ্রে সহস্র নয়নোজ্বলে।
বৃত্রপ্রাণহরে চৈন্দ্রি নারায়ণি নমোস্তু’তে স্বাহা।। যে এমনি করে জাগ্রতমূর্ত্তি ধরে, রাত্রের অন্ধকার
দূর করে তোকে জীবন্ততার ভোগ দিচ্ছে, ঐ তোর মা কিরীটিনী। ও যদি এমন করে ত্রিবেদ না
ফুটিয়ে দিত, তবে এতক্ষণ তোর বাড়ীতে, ‘বল হরি, হরি বোল’, শব্দ উঠত। কেমন করে
জাগিয়ে দিল, তুলে ধরল দেখলি ? শুধু তোকে নয়, আমাকে নয়, রাশি রাশি অনন্ত জীবকে
জ্বালিয়ে, জাগিয়ে ধরে রেখেছে। মহাবজ্রে ! সমুদ্রেরই জল যতটা নদীতে ঢোকে, নদী বলে
——আমার জল, তেম্‌নি এই ইন্দ্রাণী তোর ভিতর যতটা ঢোকে, তুই বলিস——তোর ইন্দ্রিয়।
কিরীটিনী মহাবজ্রে সহস্র নয়নোজ্বলে। বৃত্রপ্রাণহরে চৈন্দ্রি নারায়ণি নমোস্তু’তে স্বাহা।। আমি
অনেক বৃত্রাসুর ধ্বংস করেছি। আমার ধর্ম্মই হল বৃত্র সংহার করা। আমি দিগ্‌দিগন্তে আমার
সোমরস প্রবাহিত করি, করে ঐ বৃত্রকে হনন করি। অনন্ত অনন্ত কাল ধরে, আমার বজ্রকে
নিষ্পেষিত করে তার মধ্যে আমি সোম ধারা ঢেলে দিই, বৃত্রকে হনন করি। সোম——ও বজ্রেরই
রস। কিরীটিনী মহাবজ্রে সহস্র নয়নোজ্বলে। বৃত্রপ্রাণহরে চৈন্দ্রি নারায়ণি নমোস্তু’তে স্বাহা।।
জ্বলে থাক, আমাদের এই অধিদৈব যজ্ঞে তুমি জ্বলে থাক, আমাদের এই অধ্যাত্মক্ষেত্রে জ্বলে
থাক, আমাদিগকে আর বৃত্রের আধাঁরে রেখ না। নানা প্রহরণ ধরে, বৃত্রকে মেরে, আমায় তুমি
বক্ষে রাখ। (১০.৩৫ মিনিটে প্রথম পর্ব্ব সমাপ্ত।)
----------------------------------------------------------
                    ১১টায় পর্ব্ব আরম্ভ। 
( গুরু বারান্দা থেকে বললেন) সকলে হাঁটু গেড়ে বস। তারাকান্ত দাঁড়াও। পড়াও——
হংসযুক্তবিমানস্থে ব্রহ্মাণীরূপধারিণী। (পণ্ডিত পড়াতে লাগলেন) । ওঁ হংসযুক্তবিমানস্থে
ব্রহ্মাণীরূপধারিণী।কৌশাম্ভঃ-ক্ষরিকে দেবি নারায়ণি নমোস্তু’তে।। ওঁ ত্রিশূলচন্দ্রাহিধরে
মহাবৃষভবাহিনি। মাহেশ্বরীস্বরূপেণ নারায়ণি নমোস্তু’তে।। ওঁ ময়ূরকুক্কুটবৃতে মহাশক্তিধরে’নঘে।
কৌমারীরূপসংস্থানে নারায়ণি নমোস্তু’তে।। ওঁ শঙ্খচক্রগদাশার্ঙ্গগৃহীতপরমায়ুধে। প্রসীদ
বৈষ্ণবীরূপে নারায়ণি নমোস্তু’তে।। গৃহীতোগ্রমহাচক্রে দংষ্টোদ্ধৃতবসুন্ধরে।বরাহীরূপিণি শিবে
নারায়ণি নমোস্তু’তে।। নৃসিংহরূপেণোগ্রেণ হন্তুং দৈত্যান্‌ কৃতোদ্যমে। ত্রৈলোক্যত্রাণসহিতে
নারায়ণি নমোস্তু’তে।। কিরীটিনী মহাবজ্রে সহস্রোনয়নোজ্বলে। বৃত্রপ্রাণহরে চৈন্দ্রি নারায়ণি
নমোস্তু’তে।।শিবদূতীস্বরূপেণ হতদৈত্যমহাবলে। ঘোররূপে মহারাবে নারায়ণি নমোস্তু’তে।।
দ্রংষ্ট্রাকরালবদনে শিরোমালাবিভূষণে। চামুণ্ডে মুণ্ডমথনে নারায়ণি নমোস্তু’তে।। ওঁ সর্ব্বস্বরূপে
সর্ব্বেশে সর্ব্বশক্তিসমন্বিতে। ভয়েভ্যস্ত্রাহি নো দেবি নারায়ণি নমোস্তু’তে।।   
(গুরু বেদিতে এলেন) মা ! মা ! মা ! পরম আনন্দের ঘোর অঘোরে যখন তুমি মত্ত ছিলে
দেবি ! সেথা তুমি ছাড়া আর কাউকে তুমি রাখনি, সমস্তকে আত্মম্ভূত করে রেখেছ, আপনি
করে, আপনি তখন আপনার সুখে অবস্থান করছিলে। তারপর সেই পরম আনন্দ থেকে সহসা
কি আনন্দে জেগে উঠলে। অমনি তোমার সে জাগরণের প্রভাবে, তোমারই অঙ্গ থেকে ছড়িয়ে
1/23/25, 11:13 PM দধীচি উক্ত মধুবিদ্যা। বৃহদারণ্যক উপনিষদ্‌ দ্বিতীয় অধ্যায় পঞ্চম ব্রাহ্মণ। (Brihadaranyaka Upanishad Second Chapter Fifth Brahmin in Bengali languag…
https://upanishadinbengali.blogspot.com/2025/01/brihadaranyaka-upanishad-second-chapter.html 63/67

পড়ল, যেখানে যা কিছু আছে সমস্ত। ভয়াদস্য অগ্নিস্তপতি ভয়াত্তপ্তি সূর্য্য। ভয়াৎ ইন্দ্রশ্চ বায়ুশ্চ
মৃত্যুর্ধাবতি পঞ্চমঃ।। কি বিজয়নী মূর্ত্তিতে তুমি জাগ ! তোমারই দলভুক্ত যারা, তোমারই স্বরূপ
যারা, তারাও তোমারই জয় ঘোষণা করতে করতে তোমার অনুশাসন পালন করতে থাকে। কি
ভীমা তুমি ! তাদের তুমি কি বিপুল প্রাণে অণুপ্রাণিত করে দাঁড়াও, যাতে তোমার বেদনের
প্রভাবে প্রভাবিত হয়ে তারা দিগন্ত আলোকিত করে রয়েছে। তুমি বজ্রিণী, তোমার এই বজ্র
শাণিত করছে বরুণ, সূর্য্য ওতে চক্‌ চক্‌ করছে, মৃত্যু ওর তীক্ষ্ণাগ্র মুখেতে বসে আছে। অগ্নি
প্রদীপ্ত হয়ে দিগ্‌দিগন্তে জ্বলছেন। এই বজ্রিণী তুমি সাজিয়েছ ইন্দ্রিয়, এই দিগ্‌দিগন্তের অন্ধকার
দূর করে আলো হয়ে তুমি দাঁড়িয়েছ। অন্ধকার রাত্রি ফুটে উঠেছিল। তাই তোমার বেদনে
ঝরঝর করে ফুটে উঠল দিবা, তাতে বসে গেল যত দেবতা, ব্রহ্মা, বিষ্ণু ইত্যাদি, সব এই
বজ্রের প্রভাবে।এই বজ্রের আলো আমায় ঘুম থেকে জাগরণে এবং জাগরণ থেকে ঘুমে নিয়ে
যায়। বজ্রিণি, মহাপ্রতিসরে মাং রক্ষ রক্ষ স্বাহা। বজ্রিণী, দিবসত্রয়ব্যাপী তোমার পূজা
করলাম। তিন দিন ব্যেপে তোমার এ বজ্র যে ভাবে আমাদের আলোকিত করেছে, সেই ভাবে
এই পূজা সমাপ্ত করলাম।বেদ গাথা যত মলিনই হোক, কিন্তু বেদ। এই বেদ দিয়ে তোমার পূজা
করলাম। আজকে আবার নিরঞ্জনের গাথা। আজ নাকি তোমাকে বিদায় দিতে হবে।দেবি তুমি
বিদায় নেবে নাও; কিন্তু অমন করে যেও না। এইখান দিয়ে তুমি যতখানি পথ যাবে, সব পথটা
আলোয় আলোকিত করে রাখ, যেন সবটা আমি দেখতে পাই। দেবি ! তোমার জীবন্ত চোখ,
তাতে বিদ্যুৎ খেলছে। এই চোখ মুক্ত হয়ে থাক; তোমার দৃষ্টি, আমার এই ক্ষুদ্র ভূমির দৃষ্টিতে
সমান রেখায় প্রবাহিত হতে থাক। জানি, আবার বিপ্লবে উল্টে পাল্টে যাব, এখনও তো দ্রাবিত
হই নি, জানি——এখনও সব রস নিংড়ান হয় নি, সুতরাং যতদিন জীবন রেখেছ, ততদিন
যেন রসের ভিতরই ঘুরি, বেদপ্লাবনের ভিতরই যেন আবর্ত্তিত হতে থাকি। দেবি ! আমার এই
তিনদিনের পূজা তুমি সার্থকতায় ভড়িয়ে দাও; তা না হলে তুমি এখান থেকে উঠতে পাবে না।
যতক্ষণ তোমার এই মৃন্ময় শরীর বুকে করে থাকব, ততক্ষণ এই আশীর্ব্বাদ দেবে। দেবি ! যেমন
তুমি কিরীটিনীরূপে দেখা দিলে, তেমনি কিরীটিনী হয়ে সর্ব্বতঃ আমাদের রক্ষা করতে থাক। ঐ
অস্ত্র শস্ত্র ধরে, বেদময়ী হয়ে পাহারা দিতে থাক, যেন বৃত্র তার ভিতর অন্ধকার তৈরি করতে
না পারে। বৃত্রসংহন্ত্রি ! শুনেছি, দধিচীর অস্থি দিয়ে তোমার বজ্র তৈরি হয়েছিল। আমিও
দধীচি হয়েছি। যখন দেখছি, আমিই শুধু ঐ চন্দ্র, সূর্য্য, বায়ু, ইত্যাদি দেখছি না, ওরাও
আমার দিকে চেয়ে আছে, তখন আমিও দধীচি হয়েছি। আমি দেখছি, চেতন অচেতন, সবাই
জাগ্রত হয়ে আমায় দেখছে। এতে আমার বেদন খুলে গেছে——নয় তো কি হয় ? তুমি আমার
দিকে চেয়ে থাক, আমি তোমার দিকে চেয়ে থাকি, তবেই একটা ব্যথা খেলে। তুমি দেখিয়েছ
—— ইয়ং পৃথিবী সর্ব্বেষাং ভূতানাং মধু, অস্যৈ পৃথিব্যৈ সর্ব্বাণি ভূতানি মধু। ওগো মাটি, তুমি
আমার যেমন আদরের, আমিও তোমার তেমনি আদরের। এই যে আদান প্রদান তুমি আমাকে
ইন্দ্রাণী হয়ে দেখিয়ে দিয়েছ, এই আদান প্রদানের চোখ যার খুলেছে, তার নাম দধীচি। দধ্যঙ্‌
——সে যেখান দিয়ে চলে——‘ কি গো মাটি, কিগো অগ্নি ভাল আছ ? কি গো আকাশ,
আমি যাচ্ছি পথ দাও’----এই রকম কথা বলতে বলতে চলে। তার হাড় না হলে বজ্র হয় না।
শিষ্যদের কাছে আমি বলেছি——যা কিছু তোরা দেখছিস ও সব বেদন; একজন বেদিত হয়ে
আমি মাটি বলছে, যেমন তুই এখন যে ভাব ও ভঙ্গিমা নিয়ে বসে আছিস, তা দেখলেই বলব-
1/23/25, 11:13 PM দধীচি উক্ত মধুবিদ্যা। বৃহদারণ্যক উপনিষদ্‌ দ্বিতীয় অধ্যায় পঞ্চম ব্রাহ্মণ। (Brihadaranyaka Upanishad Second Chapter Fifth Brahmin in Bengali languag…
https://upanishadinbengali.blogspot.com/2025/01/brihadaranyaka-upanishad-second-chapter.html 64/67

--- মানুষ বসে আছিস, তেমনি একজন ঐ মাটির ভঙ্গিমা নিয়ে বসে আছে। এ সত্যি ঋক্‌;
তোরাও যেমন ওরাও তেমনি সত্যি ব্রহ্মার্চি। ভিখারি যেমন মিছিমিছি বলে ‘তুমি রাজা’, সে
রকম নয়।এই যে জানে, সে দধীচি।এ কোথাও চলে না, এর গা থেকে হড় হড় করে দধি,
প্রাণের স্রোত চলে। এই রকমে ততটাই বৃত্র বধ হয়, ততটাই বজ্র নির্ম্মিত হয়, যতটা এইরকম
প্রাণে প্রাণে খেলা করতে পারি। ওঁ কিরীটিনী মহাবজ্রে সহস্রোনয়নোজ্বলে। বৃত্রপ্রাণহরে চৈন্দ্রি
নারায়ণি নমোস্তু’তে।। তাই বলছিলাম, আবার যদি আমাকে ঘুম পাড়াও, তবে তো ঘুমাতেই
হবে, কিন্তু আমি আর ঐ অসুরের মত ঘুমাব না; এই আলোয় ঘুমাব। তুমি আমায় কোলে
করে আছ, এই আমার আলো। আর যদি চক্ষু খুলে দাও ——তোমার কাছে তার দাবি
করছি। যাতে অন্ধকার আসে, যে জগৎব্যাপারে কতকটা অংশ নিবিড় অন্ধকারে ঢেকে যায়,
তেমন বাধা-বিঘ্ন, তেমন অন্ধকার আমার গৃহে আসতে দিও না। কিরীটিনী মহাবজ্রে
সহস্রোনয়নোজ্বলে।বৃত্রপ্রাণহরে চৈন্দ্রি নারায়ণি নমোস্তু’তে।।
( স্বর্গীয়া সরলা দেবী চৌধুরাণী শ্রুতি লিখনের দ্বারা এই পূজার মন্ত্র ও উপদেশ লিপিবদ্ধ
করেছিলেন। এই পূজার মন্ত্র এবং ব্যাখ্যা নিম্নের লিংক গুলিতে পাওয়া যাবে :
https://upanishadinbengali.blogspot.com/2024/02/durga-puja-of -
1941-in-bengali-language.html
https://www.slideshare.net/slideshow/durgapuja-by-rishi-
bijoykrishna-chattopadhaya/266375763 )
email: [email protected]
1/23/25, 11:13 PM দধীচি উক্ত মধুবিদ্যা। বৃহদারণ্যক উপনিষদ্‌ দ্বিতীয় অধ্যায় পঞ্চম ব্রাহ্মণ। (Brihadaranyaka Upanishad Second Chapter Fifth Brahmin in Bengali languag…
https://upanishadinbengali.blogspot.com/2025/01/brihadaranyaka-upanishad-second-chapter.html 65/67

শ্রী শ্রী দুর্গা পূজা । আচার্য শ্রী বিজয়কৃষ্ণ কৃত শ্রী শ্রী দুর্গা পূজা। মূর্ত্তি পূজা রহস্য এবং
বেদ। ( ১৯৪১ সাল/ সন ১৩৪৮ এর শারদীয়া দুর্গাপূজা, শ্রীমতী সরলা দেবী
চৌধুরাণী সঙ্কলিত।) (Durga Puja of 1941 in Bengali language--Performed
by Rishi Bijoykrishna Chattopadhaya and recorded by Sarala Devi
Chowdhurani.)
ঈশোপনিষদ্‌ (ঈশ উপনিষদ্‌) --মূল মন্ত্র, অর্থ, নিরুক্ত এবং ব্যাখ্যা সহ।
(Ishopanishad --Isha Upanishad in Bengali language with original texts,
annotaions, meanings, etymolgies and explanation.)
Enter Comment
Popular posts from this blog
February 17, 2024
December 12, 2023
অশ্বিনীকুমারঅশ্বিন্‌ইন্দ্রপ্রজাপতিবৃত্রব্রহ্মামধুবিদ্যাসোম
  আচার্য্য   শ্রী বিজয়কৃষ্ণ কৃত শ্রী শ্রী দুর্গা পূজা। মূর্ত্তি পূজা রহস্য এবং  বেদ  (  ১৯৪১   সাল /  সন   ১৩৪৮   এর  
শারদীয়া   দুর্গাপূজা )।             ভূমিকা। (Rishi Bijoykrishna of Howrah (also was fondly called as
Howrah's Thakur--the god of Howrah) used to perform Durga Puja and Puja of Viswamata…
READ MORE
1/23/25, 11:13 PM দধীচি উক্ত মধুবিদ্যা। বৃহদারণ্যক উপনিষদ্‌ দ্বিতীয় অধ্যায় পঞ্চম ব্রাহ্মণ। (Brihadaranyaka Upanishad Second Chapter Fifth Brahmin in Bengali languag…
https://upanishadinbengali.blogspot.com/2025/01/brihadaranyaka-upanishad-second-chapter.html 66/67

Archive
Labels
Report AbuseDEBKUMAR LAHIRI VISIT PROFILE
Powered by Blogger
Theme images by Michael Elkan
ঈশোপনিষদ্‌। ব্রহ্মখণ্ড (সারাংশ)। যিনি ভিন্ন অন্য কেউ নেই, যাঁর থেকে আমাদের জন্ম, যাঁতে স্থিতি এবং যাঁতে
আমরা লীন হই, যিনি আততম (আতত +ম), অর্থাৎ যিনি সব কিছুতে বিস্তৃত (আতত) এবং সকলকে অতিক্রম করে
বিস্তৃত (*ম), তিনি সকলের মধ্যে  স্থিত আত্মা। (* 'ম' অর্থে 'চরম' বা 'আত্যন্তিক' বোঝায়।)  এই আত্মা একদিকে…
READ MORE
1/23/25, 11:13 PM দধীচি উক্ত মধুবিদ্যা। বৃহদারণ্যক উপনিষদ্‌ দ্বিতীয় অধ্যায় পঞ্চম ব্রাহ্মণ। (Brihadaranyaka Upanishad Second Chapter Fifth Brahmin in Bengali languag…
https://upanishadinbengali.blogspot.com/2025/01/brihadaranyaka-upanishad-second-chapter.html 67/67